নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রথমেই বলি, রুমিন ফারহানা বলেছেন, বিপ্লব বা অভ্যুত্থান এক মাসে হয় না। হ্যাঁ, কেউ যদি ভাবেন কয়েকদিনের আন্দোলনেই শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, তাহলে তারা বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে। বাস্তব হলো—যদি শেখ হাসিনা সত্যি কখনও পালাতে বাধ্য হন, সেটা হবে বিএনপির দীর্ঘ ১৬ বছরের আন্দোলনের ফসল। অথচ বিএনপিই আজকে নিজেদের আন্দোলনের কৃতিত্ব নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিচ্ছে।

গত এক দশকে বিএনপি একটি সফল জনসভাও করতে পারেনি। আন্দোলনের সময় তারা মাঠে ছিল না, কিন্তু আজ বিপ্লবের দাবিদার। তারা বলছে, "আমরাই বিপ্লব করেছি", অথচ কয়েকদিন আগেই বলছিল, "আমরা শুধু নৈতিক সমর্থন দিয়েছি"। এই দ্বিচারিতা জনগণ ভুলে যাবে?

রুমিন বললেন, এক মাসে বিপ্লব হয় না। তাহলে ৭ই নভেম্বরের বিপ্লব চার দিনে কীভাবে হলো? রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লব তো দশ দিনেই দুনিয়া কাঁপিয়ে দিয়েছিল। বিপ্লব মানে ক্ষণস্থায়ী এক ঐশী মুহূর্ত—যখন একটি জাতি তার সর্বোচ্চ আকাঙ্ক্ষা নিয়ে জেগে ওঠে। আর সেই মুহূর্তেই আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয় জাতির ওপর। তাই শহীদদের মৃত্যু হয় না, তারা অমর হন।

কিন্তু এখন বিএনপি সেই পবিত্র বিপ্লবের ভাষা দিয়ে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে চাইছে। একদিকে বিপ্লবের কথা বলছে, অন্যদিকে ১০ কাঠার প্লটের জন্য আবেদন করছে। যিনি বিপ্লবের কথা বলেন, তিনি ব্যক্তিগত লাভের জন্য দরখাস্ত করেন না। এটা স্রেফ ভণ্ডামি।

বিএনপি নিজের কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। মাঠের নেতারা জড়িত চাঁদাবাজি, জমি দখল, মামলাবাণিজ্যে। অথচ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিরব। প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে, তারা দেশ চালাবে কীভাবে?

এবার আসি বিএনপির তরুণ বুদ্ধিজীবী ফাম আব্দুস সালামের কথায়। তিনি মির্জা ফখরুলের জামাই। ব্যক্তিগতভাবে তাকে ভালো লাগে, কিন্তু তার বক্তব্যে আছে অনেক দ্বৈততা। তিনি কখনো বলেন ছাত্ররা বিএনপির সঙ্গে জোট করলে নিরাপদ থাকবে, আবার বলেন ৭১ একটি ‘রেডলাইন’। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপি কি সত্যিই ৭১-কে ধারণ করে? যদি না করে, তবে “রেডলাইন” কথাটাই তো অর্থহীন।

তিনি বলেন, বিএনপি কাউকে সুরক্ষা দেবে। কিন্তু সত্যি বলতে কি, বিএনপি নিজের নেতাকর্মীদেরই রক্ষা করতে পারেনি। জিয়াউর রহমান নিহত হয়েছেন, ইলিয়াস আলী নিখোঁজ, সালাহউদ্দিন বিদেশে নির্বাসিত, খালেদা জিয়ার বাড়ির সামনে বালির ট্রাক ফেলেও কিছু করতে পারেনি বিএনপি। তাহলে জনগণকে তারা কীভাবে রক্ষা করবে?

বিএনপির দুর্বলতা হলো—তারা নিজেদের সীমাবদ্ধতা কখনো বুঝতে চায় না। নিজেদের ব্যর্থতাকে ঢাকতে গিয়ে ভুল বার্তা দেয়। তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আছে ৩১ দফা। কিন্তু আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি—স্ট্যান্ডিং কমিটির কেউ নিজের মুখস্থে ৩১ দফা বলে দেখাক।

রাজনৈতিক কর্মসূচি যদি জটিল হয়, জনগণ তা বুঝতে পারে না। আন্দোলনে সফল হতে চাইলে স্পষ্ট, সীমিত এবং কার্যকর দাবি থাকতে হয়—যেমন ছিল "রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই", "ছয় দফা", "এরশাদ বিরোধী এক দফা" আন্দোলনে। বিএনপির ৩১ দফা মানুষ পড়ে না, বোঝে না।

দুই নম্বর দফায় বলা হয়েছে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের কথা। অথচ ২০০৬ সালেও বিএনপি এই ব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখেনি, বরং নিজেদের অনুগত বিচারপতির বয়স বাড়িয়ে তাকে প্রধান উপদেষ্টা বানাতে চেয়েছিল। আজ তারা আবার একই ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে চায়—কোন গ্যারান্টি আছে এবার সেটি নিরপেক্ষ থাকবে?

চার নম্বর দফা বলছে, কেউ পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবে না। ভালো কথা। কিন্তু আবার বলছে, দুই মেয়াদ পার করে একজন নেতা বিরতি দিয়ে আবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে। এটা তো ধোঁকা! গণতন্ত্রে এমন চালাকি চলে না।

শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনের বিপদ আমরা দেখছি—রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আজ স্বাধীন নয়। বিচার বিভাগ, পুলিশ, প্রশাসন সব দলীয় প্রভাবের নিচে। তাই গণতন্ত্রে নিয়মিত নেতৃত্ব বদলের প্রয়োজন।

আমরা দেখেছি রাশিয়া ও চীনে কিভাবে সংবিধান পাল্টে আজীবন ক্ষমতা আঁকড়ে রাখা হয়েছে। তার ফল—গণতন্ত্রের মৃত্যু, জনগণের অধিকার হরণ।

আমরা আজ নিরব থাকি না। আমরা জানি, এভাবে আর চলতে পারে না। কিছু সাহসী তরুণ যখন পথে নামে, আমরা তাদের দেখে আশাবাদী হই। তারা বলে—এমন জীবন চাই না। আমরাও বলি—আমরা ভালো নেই।

আমরা নিরপেক্ষ, অবাধ নির্বাচন চাই—এখনই চাই। যারা রাজনৈতিক দল হয়ে নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থে রাজনীতি করেছে, জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। ইতিহাস কথা বলবে। যারা সত্যের পক্ষে ছিল, তাদের নাম লেখা থাকবে সম্মানের পাতায়।

আমরা থামবো না। আমরা পিছু হটবো না। আমরা বলবো—এখনই পরিবর্তন চাই। এখনই আলোর রাজনীতি চাই।

সোহাগ/