মৃত্যুর ভয় নিয়ে বাংলাদেশ ছাড়েন কোচ হাথুরুসিংহে
নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে বাংলাদেশে শুরু হয় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অঙ্গনে বড় ধরনের পালাবদল। সেই পালাবদলের ঢেউ লেগেছিল দেশের ক্রিকেটেও। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের জেরে বিদায় নেন বিসিবি’র তৎকালীন সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তার জায়গায় বোর্ডের দায়িত্ব নেন সাবেক ক্রিকেটার ফারুক আহমেদ। তার নেতৃত্বে বিসিবিতে আসে নতুন দুই পরিচালক। পরিবর্তন আসে কোচিং প্যানেলেও — যার সবচেয়ে নাটকীয় অংশ ছিল প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের বিদায়।
ফারুক আহমেদ দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই হাথুরুসিংহেকে বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্তের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গে দেশ ছাড়ার প্রস্তুতিতে নেমে পড়েন এই লঙ্কান কোচ। তবে এটি ছিল একেবারেই সাধারণ কোনো বিদায় নয় — বরং ভয়, শঙ্কা আর আতঙ্কে ভরা এক অপূর্ণাঙ্গ প্রস্থান।
অস্ট্রেলিয়ার এক গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হাথুরুসিংহে তার সেই রুদ্ধশ্বাস অভিজ্ঞতার কথা জানান। সাক্ষাৎকারটির সারাংশ প্রকাশ করেছে ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট Cricbuzz।
হাথুরু বলেন, “বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সিইও আমাকে বলেছিলেন, ‘তোমার চলে যাওয়া উচিত। কাউকে কিছু বলতে হবে না, তোমার কি টিকিট আছে?’ তখনই আমি বুঝি, এটা কোনো সাধারণ পরিস্থিতি নয়। আমার মনে ভয় ঢুকে পড়ে।”
তিনি জানান, নিরাপত্তার অভাবও তীব্রভাবে অনুভব করছিলেন। “সাধারণত আমার সঙ্গে একজন গানম্যান আর একজন ড্রাইভার থাকতো। সেদিন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ‘আপনার গানম্যান আজ নেই?’ আমি বলেছিলাম, না, শুধু ড্রাইভার আছে,” — বলেন হাথুরুসিংহে।
তিনি আরও জানান, দেশ ছাড়ার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা তুলতে ব্যাংকে গিয়েছিলেন, তখনই টিভিতে চলছিল ব্রেকিং নিউজ — ‘হাথুরুসিংহেকে বরখাস্ত করা হয়েছে, এক খেলোয়াড়কে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে।’ খবরটি দেখেই ব্যাংক ম্যানেজার এগিয়ে এসে বলেছিলেন, “কোচ, আমাকে আপনার সঙ্গে যেতে হবে। আপনি এখন রাস্তায় নিরাপদ নন।”
বিদায়টা ছিল একদম গোপনে। হাথুরুসিংহে জানান, “আমার এক বন্ধু আমাকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের মধ্যরাতের ফ্লাইটে তুলেছিল। আমি হুডি ও টুপি পরে ছিলাম, যেন কেউ চিনতে না পারে। ভয় পাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিল, বিমানবন্দরে হয়তো আমাকে আটকানো হতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “আমার মনে বারবার ভেসে উঠছিল সেই ঘটনা, যখন আগের সরকারের একজন মন্ত্রী দেশ ছাড়তে গিয়ে বিমানবন্দরে আটক হয়েছিলেন, রানওয়েতে বিমান থামিয়ে তাকে নামানো হয়েছিল। আমি ভাবছিলাম, আমার ক্ষেত্রেও এমন কিছু না ঘটে!”
বিমানবন্দরের এক্স-রে স্ক্যানার পার হওয়ার পর হাথুরুসিংহের সামনে আসেন বিমান বাহিনীর এক কর্মকর্তা। হাথুরু বলেন, “তিনি আমাকে আবেগপ্রবণ হয়ে বললেন, ‘আমি দুঃখিত কোচ, আপনি চলে যাচ্ছেন। আপনি আমাদের দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন।’ সেই মুহূর্তে আমি জীবনের জন্য ভীত ছিলাম, আর তিনি বলছিলেন আমার অবদানের কথা। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে অস্থির সময়গুলোর একটি ছিল।”
এই পুরো ঘটনার মাধ্যমে যেন স্পষ্ট হয়ে ওঠে, শুধু ক্রিকেট মাঠ নয়, ক্রিকেটের বাইরের রাজনৈতিক পালাবদলও কতটা গভীরভাবে প্রভাব ফেলে একজন পেশাদার কোচের জীবনে। হাথুরুসিংহের বিদায় তাই শুধুই চাকরি হারানো নয় — এটি ছিল ভয় আর অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে বাঁচার এক রুদ্ধশ্বাস গল্প।
রুনা/
আপনার জন্য নির্বাচিত নিউজ
- পে-স্কেল নিয়ে সর্বশেষ সুখবর যা জানা গেল
- আজকের স্বর্ণের বাজারদর: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
- হাদির ওপর হামলা কারছে কে, জানালেন আইজিপি
- পে স্কেল নিয়ে আবারও অনিশ্চয়তা: শেষ ভরসা অর্থ উপদেষ্টা
- জানা গেল হাদির ওপর হামলাকারীকে নিয়ে আঁতকে ওঠার মতো তথ্য
- আসছে ভয়াবহ শৈত্যপ্রবাহ, কাঁপবে যেসব জেলা
- আজকের স্বর্ণের বাজারদর: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
- ৩৬ বাংলাদেশি পেলেন ভারতের নাগরিকত্ব: তালিকায় আছেন যারা
- আজকের সকল টাকার রেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
- দেশের বাজারে আজ এক ভরি সোনার দাম
- হাদির ওপর হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল শনাক্ত, গ্রেপ্তার ১
- প্রাথমিক শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড নিয়ে যা জানা গেলো
- মেসির সঙ্গে শুভশ্রীর ছবি পোস্ট ঘিরে বিতর্ক
- দেশের সব বেকারদের জন্য বড় সুখবর
- আজকের স্বর্ণের বাজারদর: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
