নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যাংককের সেই গোপন কক্ষে আলো নিভে গিয়েছিল, কিন্তু বাইরে এক অদৃশ্য ঝড় উঠেছিল। ভারত- বাংলাদেশ সম্পর্কের নতুন অধ্যায় লিখিত হচ্ছিল, এবং সেই সময়ে হাসিনার জন্য দুনিয়ার বাস্তবতা বদলে যাচ্ছিল। শেখ হাসিনা, যিনি একসময় বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন একচ্ছত্র নেতা ছিলেন, তার এই পতন ছিল অতীতের দীর্ঘ অমোচনীয় দাগেরই প্রতিফলন। তার রাজনীতির মঞ্চের আলো নিভে যাচ্ছিল, আর ব্যাংককের সেই গোপন বৈঠকে তার স্বপ্নগুলোর সিঁড়ি যেন ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল। হাসিনার রাজনৈতিক খেলাটা শেষ হয়ে যাচ্ছে, তবে তার শাসনকাল শেষ হবে কীভাবে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

মোদি এবং ইউনুসের বৈঠকটি শুধুমাত্র কূটনৈতিক আলাপ ছিল না, এটি একটি রাজনৈতিক সাইফার ছিল, যা এক মুহূর্তে আকাশচুম্বী অহংকারের পতন ঘটিয়ে দিয়েছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির বক্তব্য শুধু একটি মন্তব্য ছিল না, এটি ছিল একটি ইঙ্গিত — 'বাংলাদেশের জনগণের সাথে সম্পর্ক চাওয়া'। ভারত তার অবস্থান বদলানোর ইঙ্গিত দিয়েছে। মোদি তার বক্তব্যে স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, বাংলাদেশে একমাত্র জনগণেরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, এবং ভারতের জন্য এটি ছিল একটি বড় কৌশলগত পদক্ষেপ।

শেখ হাসিনার শাসনামলে যে আচরণ তাকে শিকার হতে হয়েছিল, তা শুধু একটি রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্ধকার দাগ ছিল না, বরং একটি জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক অধ্যায় ছিল। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে তাকে অপসারণ, মিথ্যা মামলা, এবং তার কাজের প্রতি অবজ্ঞা – এই সমস্ত কিছু ছিল ক্ষমতার একচ্ছত্র দম্ভ। কিন্তু যখন মোদি নিজেই এই অপমানিত নেতার পাশে দাঁড়িয়েছেন, তখন তা শুধু ভারতের কূটনৈতিক মনোভাবকেই নয়, বরং শেখ হাসিনার প্রতি ভারতের দীর্ঘদিনের নিরব অসন্তুষ্টি এবং তাদের সম্পর্কের পরিবর্তনকে বহির্ব্যক্ত করেছে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, ইউনুস এবং মোদি সম্পর্কের এই নতুন বাঁক। ইউনুস, যিনি একদিন হাসিনার আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন, আজ ভারতের কূটনৈতিক মঞ্চে সম্মান পাচ্ছেন। ভারত তার সহিত সম্পর্ক বজায় রাখার লক্ষ্যে অঙ্গীকারবদ্ধ, কিন্তু এই সম্পর্কের পরিবর্তনের সাথে একটি স্পষ্ট বার্তা রয়েছে: হাসিনার জন্য ভারতের দরজা আর খোলা নেই।

বৈঠকের আলোচনার সময়, মোদি ডক্টর ইউনুসের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছেন এবং তার অবদানের প্রশংসা করেছেন, কিন্তু তার পরের মন্তব্য ছিল হাসিনার আমলে তার বিরুদ্ধে হওয়া অবমাননার বিষয়ে। মোদি যে কথাগুলি বলেছিলেন, তা যেন হাসিনার রাজনৈতিক পথের শেষ সিগন্যাল ছিল। একদিকে মোদির সম্মান, আর অন্যদিকে হাসিনার আমলে ডক্টর ইউনুসের প্রতি অমানবিক আচরণ — এর মধ্যে একটি স্পষ্ট ধারার প্রতিফলন ঘটছিল।

বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে, যেখানে কোন কিছু স্থায়ী নয়, সেখানে শেখ হাসিনার মতো একজন নেত্রীও এক পলকে হারিয়ে যেতে পারেন। মোদি এবং ইউনুসের বৈঠক একে অপরের মাঝে একটি নতুন সম্পর্কের সূচনা করছে, যেখানে অতীতের শত্রুতা মুছে গেছে। আর এই সম্পর্কের পরিবর্তনই ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আরও গভীর কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক সমঝোতার পথ খুলে দেবে।

এখন প্রশ্ন উঠে, হাসিনার জন্য কি কিছুই অবশিষ্ট রইল? তার শাসন আমলের অনেক শত্রু তার অঙ্গুলির ইঙ্গিতেই ভেঙে গেছে, এবং আজ তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসর থেকে বাদ পড়ে গেছেন। তবে, শেখ হাসিনা কি একদিন ভারতের দরজা ফের খুলে পেতে পারবেন? নাকি তার শাসনের অবসান হবে বাংলাদেশের মাটিতে?

হাসিনার রাজনৈতিক পতনের এই খেলা কিন্তু এখানেই থেমে থাকবে না। আন্তর্জাতিক রাজনীতি কখনো শেষ হয় না, এবং মোদির এই বৈঠকের পর কিছুই নির্ধারিত নয়। কিন্তু একটি বিষয়ে সন্দেহ নেই, শেখ হাসিনার জন্য সময় শেষ হতে চলেছে।

বাংলাদেশের রাজপথে স্বৈরাচারের শতাব্দী শেষ হয়ে গেছে, আর এখন তার স্থানে এক নতুন যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে। নতুন নেতাদের নেতৃত্বে, বাংলাদেশের জনগণ নতুন আশায় পথচলা শুরু করেছে।

হাসিনার যাত্রার শেষের মূহূর্তগুলো যখন তার কাছে পৌঁছাবে, তখন হয়তো সে বুঝতে পারবে যে, তার অন্ধকার কক্ষে ঝড়ের দিনগুলি আর অতীত হতে চলেছে। রাজনৈতিক মঞ্চে, তার খেলার যবনিকা পতন ঘটবে, কিন্তু এর পরও কি তার জন্য নতুন কোনো পথ খোলা থাকবে? সেটা সময়ই বলতে পারবে।

সোহাগ/