ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের ইঙ্গিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক অচলাবস্থা, উত্তেজনা এবং সংস্কারের দাবির ঘূর্ণিপাকে থমকে ছিল বাংলাদেশের রাজনীতি। এবার সেই স্থবিরতা ভাঙার সঙ্কেত মিলছে। অন্তর্বর্তী সরকারের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে আগামী ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে। সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে ধরা হচ্ছে ৯, ১০ বা ১১ ফেব্রুয়ারি, যার মধ্যে ১০ ফেব্রুয়ারিকে প্রধান ভোটগ্রহণের দিন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন এ সময়সীমাকে সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে, এবং একটি বিস্তারিত রোডম্যাপ প্রকাশের প্রক্রিয়াও প্রায় চূড়ান্ত।
এই রোডম্যাপ কেবল ভোট আয়োজনের রূপরেখা নয়, বরং চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনের দিকনির্দেশনাও বয়ে আনবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান। এরপর আসছে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা, দুই ঈদ এবং তীব্র গ্রীষ্ম। ফলে সময়ের বিচারে ফেব্রুয়ারিই সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত ও বাস্তবসম্মত সময়। ইতিহাস বলছে, আগের ১২টি জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে ৩টি অনুষ্ঠিত হয়েছে এই মাসে। ফেব্রুয়ারির আবহাওয়া অনুকূল, কৃষিজ ব্যস্ততা কম এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতিও তুলনামূলকভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকে। তাই এই সময়টিকে অনেকেই একটি ‘স্বচ্ছ রাজনৈতিক ক্যানভাস’ হিসেবে দেখছেন।
আগাম প্রস্তুতির প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান কিছুটা পরিষ্কার হচ্ছে। বিএনপি চাইছে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হোক, যাতে বিলম্ব না করে দ্রুত একটি নতুন সরকার দায়িত্ব নিতে পারে। অন্যদিকে সরকার বলছে, “সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয়।” জামায়াতে ইসলামি চায় একটি সুপরিকল্পিত রোডম্যাপ, তবে তাদের অগ্রাধিকার বিচার ও কাঠামোগত সংস্কারে। সবচেয়ে আলোচিত পক্ষ এনসিপি—যারা তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত এবং গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয়। তারা রাষ্ট্রীয় কাঠামোর আমূল সংস্কার এবং ‘ফ্যাসিবাদীদের’ বিচারের দাবিতে অনড়।
সরকারও ইতোমধ্যে জবাব দিতে শুরু করেছে—আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ কয়েকজন মন্ত্রী ও এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এমনকি সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগ নিয়েও তদন্ত চলছে।
“দেড় হাজার শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে কোনো দায়সারা নির্বাচন হতে পারে না”—এমন মন্তব্য এসেছে অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টার কাছ থেকে। সরকারের বর্তমান অবস্থান স্পষ্ট: সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই তিনটি দিকই সমান গুরুত্ব পাবে।
তবে সময় খুব সীমিত। যদি সংস্কার ক্ষুদ্র পরিসরে সীমাবদ্ধ থাকে, তবে ডিসেম্বরেই নির্বাচন সম্ভব। আর বৃহৎ পরিসরে হলে তা গড়াতে পারে জুন পর্যন্ত। এই দুই সময়ের মাঝামাঝি জায়গাটিই হয়ে উঠছে ফেব্রুয়ারি—একটি বাস্তবসম্মত আপস এবং রাজনৈতিক সমঝোতার মধ্যম পথ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরীর মতে, আসন্ন রোডম্যাপ রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমিত করতে এবং সুশৃঙ্খল নির্বাচন নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, “ফেব্রুয়ারির নির্বাচন সব পক্ষের জন্যই গ্রহণযোগ্য একটি সমাধান হতে পারে।” তবে তিনি এনসিপি-এর প্রতিক্রিয়া নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। “তারা যদি চূড়ান্ত মুহূর্তে আন্দোলনের পথে নামে, তাহলে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে। তবে ছাত্রনেতাদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার ব্যক্তিগত প্রভাব এবং নীতিগত বোঝাপড়ার কারণে সরকার এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে।”
সংস্কার ও বিচারের পথে হাঁটতে হাঁটতেই বাংলাদেশের রাজনীতি এসে দাঁড়িয়েছে এক ঐতিহাসিক মোড়ে। একটি নির্বাচনের মাঝে লুকিয়ে আছে বহু স্বপ্ন, বহু সংশোধন, বহু প্রতিবাদ এবং বহুদিনের অপেক্ষা করা পরিবর্তনের সুর। ফেব্রুয়ারির সেই প্রত্যাশিত নির্বাচনী ভোর কি সত্যিই আসবে?
সময়ের হাতেই হয়তো রয়েছে এর উত্তর। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপট, প্রস্তুতি এবং জনচাপের ইঙ্গিত বলছে—বাংলাদেশ এখন নতুন একটি রাজনৈতিক যাত্রাপথের সূচনালগ্নে দাঁড়িয়ে।
আপনার জন্য নির্বাচিত নিউজ
- ৩টি শর্তে সিদ্ধান্ত বদলালেন ড. ইউনূস
- সৌদি আরব ও বাংলাদেশে ঈদুল আজহার তারিখ ঘোষণা
- ভোক্তা অধিকারের আব্দুল জব্বার মন্ডলের উপর হামলা, সত্যতা নিয়ে যা জানা গেল
- শুরু হল ঘূর্ণিঝড় শক্তির ঘূর্ণাবর্ত, বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় মন্থা
- আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যু নিয়ে গুজব: জানা গেল প্রকৃত সত্য
- নতুন হারে মহার্ঘ ভাতা: কোন গ্রেডে কত বাড়ছে!
- যদি এই ৪টি আলামত থাকে, বুঝবেন আল্লাহ আপনাকে খুব ভালোবাসেন
- গ্রামের গোপন কারখানায় তৈরি হচ্ছে অনুমোদনহীন শিশুখাদ্য
- জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন ড. ইউনুস
- কক্সবাজারে মার্কিন বাহিনীর উপস্থিতি নিয়ে যা জানা গেছে
- মমতাজের বাড়ি থেকে ৯০০ কোটি উদ্ধারের ভিডিও আসলে কী
- বাংলাদেশে ২০০ টাকায় স্টারলিংক ইন্টারনেট ব্যবহার—বাস্তবতা কতটা
- বাংলাদেশে কোন রক্তের গ্রুপে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি
- বাংলাদেশকে দুঃসংবাদ দিল জাতিসংঘ
- বাংলাদেশে ঈদুল আজহার সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা