| ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বাবা হারানো রবিউলের অনুপ্রেরণা CR7

খেলাধুলা ডেস্ক . বিনোদন৬৯.কম
২০২৩ জানুয়ারি ১৪ ১৪:৩৫:৫১
বাবা হারানো রবিউলের অনুপ্রেরণা CR7

পৃথিবীজুড়ে চর্চিত হয়েছে তার কঠোর পরিশ্রম, হাল না ছাড়া আর স্বপ্নের গল্প। কোথাও কোথাও হৃদয়েও গেঁথে গেছে কারো কারো।

যাদের বুকে, স্বপ্নে, মন ও মননে জমেছেন রোনালদো, রবিউল হক তাদেরই একজন। আপনি হয়তো দেখেছেন তাকেও, বিপিএলে; উইকেট নেওয়ার পর রোনালদোর সেলিব্রেশনে।

অথচ রবিউলের জীবনে আঁধার নেমে এসেছিল কখনো। বাবার মৃত্যুর তারিখ তিনি বলতে পারেন এক নিমিষে, ভাইদের সেক্রিফাইস তার মুখে আসে; ছলছল চোখ যেন বাঁধ মানতে চায় না এরপর। রবিউল কাঁদেন না। গল্প বলতে বলতে হঠাৎ তিনি বলেন, ‘আমি আবেগী হয়ে যাচ্ছি…’

জীবনের প্রথম সংবাদ সম্মেলন জানান মাঝে। একটু আগে রংপুর রাইডার্সকে জিতিয়ে এসেছেন চার উইকেট নিয়ে। রঙিন দুনিয়া রবিউল দেখছেন এখন। অথচ এক বছর আগেও তার দুনিয়ায় জমেছিল অভিমান। বাকি দুই ভাইকে দেখে ক্রিকেট খেলা শুরু করেন। বাবা বাধ সাঁধেন তাতে, ‘একজনকে নিয়ে ঝুঁকি নিতে পারি। সবাইকে না…’ বলেন এমন।

সেই বাবা মারা গিয়েছিলেন ২০২২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। অনেকদিন ক্যারিয়ারে গতিপথ খুঁজে না পেয়ে কখনো কি হাল ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন? জানতে চাইতেই রবিউল বর্ণনা করেন দুঃখের ওই সময়, ‘বাবা আমার ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক টেন্সড ছিলেন। প্রায় দেড় বছর ইনজুরিতে ছিলাম। উনি হয়তোবা অনেক টেনশন করতেন…আমার কী হবে ক্যারিয়ারে এমন ভাবতেন। আমি কখনও ভাবতাম না। ’

বাবার দুশ্চিন্তা দূর হয়ে গিয়েছে ঠিকই, তিনি দেখে যেতে পারেননি। রবিউল হক বাবার মৃত্যুর এক দিন পরই দল পান ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে। এবার বিপিএলে হলেন ম্যাচসেরা। রবিউল আফসোস করেন টিভিতে ছেলের খেলা দেখার পর বাবা এনামুল হক সরকারের খুশির কথা ভেবে, ‘সবসময় ব্যাক অব দ্য মাইন্ডে কাজ করে হয়তো আজকে বাবা বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতেন এরকম লাইভ ম্যাচে দেখলে। ’

রবিউলের জীবনজুড়ে মেনে চলেন দুই পথ- পরিশ্রম করেন, চাওয়া-পাওয়ার বাকিটুকু সৃষ্টিকর্তার কাছেই ছেড়ে দেন। ভালো-খারাপটুকু হাত পেতে নিতে দ্বিধা করেন না এতটুকু। স্বপ্ন দেখেন, বেঁচে থাকেন, গল্প তৈরি করতে চান রোনালদোকে দেখে। ২০০৬-০৭ মৌসুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের লাল জার্সিতে দেখে প্রেমে পড়া তার। পরে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর হৃদয়ে জায়গা দেওয়া। জার্সির নম্বরটাও তার সঙ্গে মিলিয়ে রাখা।

ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো রবিউলকে বিস্মিত করে যান এখনও, ‘খুব খারাপ পরিস্থিতিতেও দলকে যেকোনো ভাবে কামব্যাক করাতে পারেন, বড় মঞ্চেও। এরকম একটা বিশ্ব মহাতারকার কাছ থেকে কিছুটা হলেও যদি আমি নিজের ভেতর নিতে পারি… কঠোর পরিশ্রম, শক্ত মানসিকতা, যাই বলেন। আমার জন্য এসব অনেক সৌভাগ্যের ব্যাপার হবে। ’

‘রিয়াল মাদ্রিদে সুপার সিজন কাটানোর পরে এত চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, এত ট্রফি… জুভেন্টাসে যাওয়ার পর… এখনও তার শক্ত মানসিকতার পরিচয় যেভাবে দিয়ে যাচ্ছেন এটা অনেক বড় কিছু। রোনালদোর এসব অনুসরণ করা হয়। নিজেকেও পাম্প আপ করি, একটা মানুষ কঠোর পরিশ্রম দিয়ে এত কিছু করতে পারলে আমিও মানুষ…অনেক কিছু করতে পারব। ’

রবিউলকে সংবাদ সম্মেলনে আসতে আসতে থামতে হয়েছে কয়েকবার। ছবি তুলেছেন কেউ কেউ, ফ্রেমবন্দি হওয়ার আবদার গিয়েছে পরেও। রবিউল এসবে অভ্যস্ত নন একদমই। কঠিন সময় পাড় করেও লম্বা সময় আসেননি প্রাদপদীপের আলোয়।

২০১৮ সালে খেলেছেন যুব বিশ্বকাপে। এরপর দুবার দল পেয়েছেন বিপিএলেও, আলাদা করে চেনাতে পারেননি নিজেকে। এবার এনসিএলে ১৭ উইকেট নিয়েছিলেন ৪ ম্যাচেই, ছিল ফাইফারও। অথচ প্রিমিয়ার লিগে দল না থাকার শঙ্কায়ও থেকেছেন একটা সময়। তখন তাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন একজন- ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো।

রবিউল তাই প্রতিবার উইকেট উদযাপনে ফিরিয়ে আনেন তাকে, ‘আমার উদযাপন নিয়ে সবাই অনেক উৎসুক। উদযাপনের পেছনে যে আইনকনিক মানুষটা (ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো) আছেন আমার জন্য তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আসল কথা হচ্ছে প্রত্যেকটা খেলোয়াড় কাউকে না কাউকে অনুসরণ করে, আমিও একজনকে অনুসরণ করি। রোনালদোর ওয়ার্ক ইথিকস, কঠোর পরিশ্রম, শক্ত মানসিকতা সবকিছুই। ’

রবিউল হক অনেক কথাই বলেন। কেমন উইকেটে খেলেছেন, দলের নামী তারকাদের থেকে কেমন শিখছেন, কোথায় দেখতে চান নিজেকে; এসবও। রবিউল বলেন দুই ভাইয়ের কথা। কাঁদতে কাঁদতেও চোখের জল আটকান হয়তো শুধুই আনুষ্ঠানিকতার খাতিরে। বলেন দুই ভাইয়ের সেক্রিফাইসের কথা।

রবিউল স্মরণ করেন বিশেষ কাউকেও, ‘একজনের কথা না বললেই নয়। তিনি আমার একাডেমির কোচ নাদিম সাজ্জাদ ভাই। যখন আমি অনূর্ধ্ব-১৮ খেলি, তখন আমার কিছুই ছিল না। উনি এতটা সাহায্য করেছে যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। উনাকে কখনো কিছু দিয়ে ধন্যবাদ জানাতে পারিনি। নাদিম ভাই, আমি আপনার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ। ’

‘শুভকামনা রবিউল’ শুনতে শুনতে সংবাদ সম্মেলন কক্ষ ছেড়ে যান রবিউল। কার্পেটে ধাক্কা খাওয়ার পর বলে যান ‘সমস্যা নেই…’। যারা শেকড় ভুলে না সাফল্যের চূড়াতে উঠে, টিকে থাকার লড়াই করতে পারে, কাঁদতে জানে; ঝামেলা থাকে না এসব মানুষের। রবিউল তো তাদেরই একজন। তার সিঁড়ি বেড়ে উপরে উঠা অপেক্ষার গল্প মধুরই শোনায়।

আপনার জন্য নির্বাচিত নিউজ

ক্রিকেট

২০০-এর বেশি স্কোরেও হারলো বাংলাদেশ, কী বললেন লিটন

২০০-এর বেশি স্কোরেও হারলো বাংলাদেশ, কী বললেন লিটন

নিজস্ব প্রতিবেদক: আরব আমিরাতের বিপক্ষে ২০০ রানের বিশাল লক্ষ্য দিয়েও জয় থেকে বঞ্চিত বাংলাদেশ। এমন ...

এবার বাংলাদেশের সব শর্ত মেনে নিল পাকিস্তান

এবার বাংলাদেশের সব শর্ত মেনে নিল পাকিস্তান

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার টি-টোয়েন্টি সিরিজ অবশেষে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। শুরুতে পাঁচ ম্যাচের পরিকল্পনা থাকলেও ...

ফুটবল

টাইব্রেকারে কাঁদলো বাংলাদেশ, সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ শিরোপা ভারতের

টাইব্রেকারে কাঁদলো বাংলাদেশ, সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ শিরোপা ভারতের

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা হাতছাড়া হলো বাংলাদেশের। অরুণাচল প্রদেশের ইউপিয়ার গোল্ডেন জুবলি স্টেডিয়ামে ...

বাংলাদেশ দলে খেলে কত টাকা পেলেন হামজা

বাংলাদেশ দলে খেলে কত টাকা পেলেন হামজা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ফুটবলার হামজা চৌধুরীর অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের ...