হার্ট অ্যাটাক: কারণ, লক্ষণ ও জরুরি করণীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বজুড়ে হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ হার্টের বিভিন্ন জটিলতায় প্রাণ হারাচ্ছেন। বর্তমানে অনিয়মিত জীবনযাপন এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে কম বয়সীদের মধ্যেও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ছে। হার্ট অ্যাটাকের কিছু লক্ষণ আছে যা অনেকেরই অজানা, অথচ এগুলো সঠিক সময়ে শনাক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না পেলে হার্ট অ্যাটাক প্রাণঘাতী হতে পারে। তাই এই বিষয়ে সবার সচেতন থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন, বিশেষ করে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত।
হার্ট অ্যাটাক কী?
হার্ট অ্যাটাক হলো এমন একটি গুরুতর অবস্থা যখন হৃৎপিণ্ডের রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। ধমনীতে চর্বি ও কোলেস্টেরল জমার কারণে এই বাধা তৈরি হয়। যদি সময়মতো এই ব্লক অপসারণ করা না হয়, তাহলে অক্সিজেনের অভাবে হৃৎপিণ্ডের টিস্যুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে, যা হার্ট অ্যাটাকের কারণ।
হার্ট অ্যাটাক কেন হয়?
হৃৎপিণ্ডের সঠিকভাবে কাজ করার জন্য অক্সিজেনযুক্ত রক্তের প্রয়োজন হয়, যা করোনারি ধমনির মাধ্যমে সরবরাহ হয়। তিনটি প্রধান করোনারি ধমনি হলো: লেফট করোনারি আর্টারি, রাইট করোনারি আর্টারি এবং লেফট অ্যান্টেরিয়র ডিসেন্ডিং আর্টারি। এই ধমনিগুলোর আংশিক বা সম্পূর্ণ ব্লক হয়ে গেলে হার্টের সমস্যা দেখা দেয়।
* আংশিক ব্লক: যদি ধমনিতে আংশিক ব্লক থাকে, তাহলে তাকে অ্যানজাইনা পেকটোরিস বলা হয়।
* সম্পূর্ণ ব্লক: ধমনি সম্পূর্ণ ব্লক হয়ে গেলে তাকে হার্ট অ্যাটাক বলা হয়।
কাদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি বেশি?
কিছু কারণ হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
১. বংশগত কারণ: পরিবারে বাবা-মা বা নিকটাত্মীয়দের হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বেশি থাকে।
২. অ্যালকোহল ও ধূমপান: অতিরিক্ত মদ্যপান এবং ধূমপান হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
৩. অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস: রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
৪. উচ্চ রক্তচাপ: অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ হার্টের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
৫. অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা: অতিরিক্ত ওজন হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম প্রধান কারণ।
৬. উচ্চ কোলেস্টেরল: শরীরে চর্বি বা কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকলে ধমনি ব্লক হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
৭. শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা: কায়িক পরিশ্রম, ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি না করা হার্টের স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
৮. মানসিক চাপ ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: অতিরিক্ত মানসিক চাপ, উদ্বেগ, বয়স এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসও হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের প্রধান লক্ষণগুলো কী কী?
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো দ্রুত শনাক্ত করা জরুরি। কিছু সাধারণ লক্ষণ নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. বুকে ব্যথা: বুকের মাঝখানে তীব্র ব্যথা হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম প্রধান লক্ষণ। এই ব্যথা সাধারণত রেট্রোস্টার্নাল পেইন নামে পরিচিত এবং এটি ভেতর থেকে অনুভূত হয়।
২. ব্যথার ছড়িয়ে পড়া: বুকের ব্যথা ক্রমশ বাম হাত, ঘাড়, চোয়াল এবং পেটেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
৩. শ্বাসকষ্ট ও কাশি: হার্ট অ্যাটাকের তীব্রতা বেশি হলে শ্বাসকষ্ট এবং কাশি হতে পারে।
৪. অতিরিক্ত ঘাম: রক্তচাপ কমে গিয়ে শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম বের হতে পারে।
৫. জ্ঞান হারানো: ব্যথার তীব্রতা অত্যাধিক হলে রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি: অনেক সময় বমি বমি ভাব অথবা বমি হতে পারে।
৭. বুক ধড়ফড় করা: অস্বাভাবিকভাবে বুক ধড়ফড় করতে পারে।
হার্ট অ্যাটাক হলে তাৎক্ষণিক করণীয়
হার্ট অ্যাটাক একটি জরুরি অবস্থা, যেখানে দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। বুকে ব্যথা বা হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে, একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। প্রয়োজনে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নম্বরে (যেমন ৯৯৯) ফোন করা যেতে পারে।
* রোগীকে স্থির রাখা: আক্রান্ত ব্যক্তিকে বেশি নড়াচড়া করতে দেবেন না। শান্ত থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলা করুন।
* সিপিআর: যদি রোগী জ্ঞান হারান বা শ্বাস না নেন, তাহলে সঠিকভাবে কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন (সিপিআর) দিতে হবে। তবে মনে রাখবেন, সিপিআর সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকলে এটি করা উচিত নয়। কেবল প্রশিক্ষিত ব্যক্তিই এটি করবেন।
* অ্যাসপিরিন: আক্রান্ত ব্যক্তিকে অ্যাসপিরিন জাতীয় অ্যান্টি-প্লেটলেট ড্রাগ দেওয়া যেতে পারে, যা রক্ত পাতলা করে ধমনিতে রক্ত প্রবাহে বাধা কমাতে সাহায্য করে।
* নাইট্রোগ্লিসারিন: যদি চিকিৎসকের পূর্ব পরামর্শ অনুযায়ী রোগীর হার্টের সমস্যার জন্য নাইট্রোগ্লিসারিন জাতীয় ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তবে জিহ্বার নিচে সেই ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। অন্যথায় এটি দেওয়া যাবে না।
* কাশি: হার্ট অ্যাটাক হলে পালস রেট কমে যেতে পারে। এ সময় কাশি দিলে একটি রিফ্লেক্স তৈরি হয়, যা রক্তচাপ ও হার্ট রেট বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। তাই রোগীকে কাশি দিতে বলা যেতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা
চিকিৎসকরা ইসিজি ও রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে হার্ট অ্যাটাক নিশ্চিত করেন। রোগীর অবস্থা বিবেচনা করে তাৎক্ষণিকভাবে রক্ত জমাট বাঁধা বা চর্বি জমারোধে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করতে এবং রক্ত পাতলা করার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হয়। যদি রোগী উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল বা ঘুমের সমস্যায় ভোগেন, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওষুধ খেতে হবে। একই সাথে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনাও অপরিহার্য।
আধুনিক চিকিৎসা হিসেবে অ্যানজিওগ্রাম করা হয়, যা হার্টের ব্লকের অবস্থা নির্ণয় করে। যদি ব্লকের পরিমাণ বেশি হয়, তাহলে বাইপাস সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে। আর যদি এক বা দুটি ব্লক থাকে, তাহলে রিং পরানো (স্টেন্টিং) যেতে পারে। হার্টের চিকিৎসায় মূল লক্ষ্য হলো রক্তনালীর ব্লক দূর করে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করা।
---
হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের উপায়
হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা অত্যন্ত জরুরি:
১. জীবনযাপন পদ্ধতিতে পরিবর্তন: সুস্থ জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
২. নিয়মিত ব্যায়াম: সকালে ও বিকেলে ৩০-৪৫ মিনিট হাঁটা এবং ব্যায়ামের অভ্যাস করুন।
৩. ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ: অ্যালকোহল ও ধূমপান সম্পূর্ণরূপে পরিহার করুন।
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্যকর খাবার: ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং জাঙ্ক ফুড ও অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার করুন।
৫. রোগ নিয়ন্ত্রণ: ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
৬. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: পরিবারে হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস থাকলে ২০ বছর বয়স থেকেই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান।
৭. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: উদ্বেগ ও মানসিক চাপমুক্ত থাকুন। ঝগড়া বা উচ্চস্বরে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন।
সোহাগ/
আপনার জন্য নির্বাচিত নিউজ
- যে রক্তের গ্রুপে স্ট্রোকের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি
- সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ছে, সর্বনিম্ন ৪ হাজার, সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৮০০ টাকা
- দাঁত ব্রাশ করার পরও মুখে দুর্গন্ধ! জেনে নিন ৬ সমাধান
- এমন বৃষ্টি আর কতদিন চলবে, জানালো আবহাওয়া অফিস
- মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যার নতুন মোড়, বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য!
- জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জরিপে চমক: দেখে নিন বিএনপির অবস্থান
- একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ সিম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত
- প্রকাশ্যে পাথর মারার ঘটনায় ছাত্রদল নেতা রবিনের দায় স্বীকার, যা জানা গেল
- কত দিনের বাচ্চা নষ্ট করলে গুনাহ হয় না
- নৃশংস সেই ঘটনায় জড়িতরা শনাক্ত, মিলল ২ জনের পরিচয়
- আবেদনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বাংলাদেশকে ভিসা দিবে ৬ দেশ!
- বাড়ছে ক্যানসার, যেসব লক্ষণ অবহেলা করলেই বিপদ
- কার সঙ্গে কার বিয়ে হবে—এটা কি পূর্বনির্ধারিত!
- এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের তারিখ ঘোষণা
- নির্বাচন নিয়ে সিইসির সম্ভাব্য সময়সূচী