মিয়ানমারের পর কি বাংলাদেশে হামলা করবে মোদি
নিজস্ব প্রতিবেদন: গত ১১ জুলাই মিয়ানমার সীমান্তে ভারতের আকস্মিক ড্রোন হামলা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ইসরায়েলি প্রযুক্তিতে সজ্জিত ভারতীয় ইউএভি'র (আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকেল) আক্রমণে মিয়ানমারের মাটি কেঁপে উঠলেও, ভারত সরকারিভাবে কোনো হামলার কথা স্বীকার করেনি। এমনকি আসামের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মাও আতঙ্কিত গলায় বলেছেন যে, এই হামলায় তাদের মাটির ব্যবহার হয়নি। এমন পরিস্থিতি প্রশ্ন তুলছে— মিয়ানমারের পর কি বাংলাদেশের ওপর হামলার সম্ভাবনা আছে?
হামলার প্রকৃতি ও নীরবতা
ভারতের আক্রমণের লক্ষ্য ছিল উলফা (ULFA), পিএলএ (PLA) এবং কেপিএল (KPL)-এর মতো বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর ঘাঁটি, যাদের কিছু ক্যাম্প বাংলাদেশের ঠিক সীমান্ত ঘেঁষে মিয়ানমারে অবস্থিত। হামলাটি ছিল নিখুঁত, পেশাদার যুদ্ধের দৃষ্টান্ত। ফরাসি ও ইসরায়েলি ড্রোন ব্যবহার করে নির্ভুল নিশানায় আঘাত হানা হয়েছে। টানা ৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা এই হামলা নিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী বা গণমাধ্যম থেকে কোনো বিবৃতি আসেনি। এই নীরবতাই সবচেয়ে ভীতিকর, কারণ যখন একটি রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের ভূখণ্ডে ঢুকে আক্রমণ করে এবং কেউ কিছু বলে না, তখন বুঝতে হবে এই আঘাত কেবল একটি দেশের ওপর নয়, বরং একটি গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা কাঠামোর ওপর। উলফা ইতিমধ্যেই প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছে। এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো এখন দিশেহারা এবং বুঝতে পারছে যে ভারত এখন আর কেবল প্রতিক্রিয়াপন্থী নয়, বরং আগ বাড়িয়ে আঘাত হানছে। এই নতুন কৌশল তাদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঠেলে দিতে পারে, যেখানে সীমান্ত শুধু কাঁটাতার নয়, এটি রাজনৈতিক সংকেতও বটে। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ কি এই সংকেত বুঝতে পারছে?
ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: চীন ও বাংলাদেশের অবস্থান
যেসব এলাকায় ভারত আঘাত হেনেছে, সেগুলো চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পের আওতায় পড়ে। এসব অঞ্চলে চীনা বিনিয়োগ শুধু অর্থনৈতিক নয়, এটি কৌশলগতভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে চীনের স্বার্থ রক্ষায় প্রাইভেট সিকিউরিটি কোম্পানিও মোতায়েন রয়েছে। মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে চীনের কৌশলগত বোঝাপড়াও রয়েছে। এই অবস্থায় ভারতের হামলা চীনের মুখে একটি চপেটাঘাতের শামিল। এটি গোটা অঞ্চলের জন্য উদ্বেগের বার্তা, কারণ ভূ-রাজনীতিতে যখন বড় দুই শক্তির সংঘাত হয়, তখন ছোট রাষ্ট্রগুলো হয় মোহরা অথবা যুদ্ধক্ষেত্র। এখন প্রশ্ন, চীন কি করবে? ইতিহাস বলে তারা নিশ্চুপ থাকবে না। তারা হয়তো পাল্টা চাপ প্রয়োগ করবে অথবা উপযুক্ত সময়ে সামরিক জবাব দেবে। এই ভূ-রাজনৈতিক জালে আটকা পড়া বাংলাদেশকে এখন বুঝতে হবে যে, সে শুধু পর্যবেক্ষক নয়, সে এখন মাঠের খেলোয়াড়। আর খেলোয়াড় হলে তার কৌশল ও প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি থাকতে হয়।
বাংলাদেশের নীরবতা ও অপ্রস্তুতি
মিয়ানমারের আগুন এখনো নিভে না গেলেও ঢাকা নিশ্চুপ। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বাজেট নিয়ে ব্যস্ত, আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যস্ত সৌজন্য সফরে। অথচ ঠিক এই মুহূর্তে প্রয়োজন ছিল একটি জাতীয় জাগরণের, একটি সার্বজনীন ঘোষণার— "আমরা দেখছি, আমরা জানি এবং আমরা প্রস্তুত হচ্ছি।" কিন্তু সেই প্রস্তুতির কোনো ইঙ্গিত নেই। মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ বিশ্বাস করতে চায় এই আগুন তাকে স্পর্শ করবে না। কিন্তু ইতিহাস কি এমন সুযোগ দেয়?
বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তের পার্বত্য জনপদগুলো— বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি— সেসব নির্জন পাহাড়ে এখনো কি নিরাপদে নিঃশ্বাস ফেলা যায়? সীমান্তে বসবাসকারী শিশুদের ঘুম কি সত্যিই গভীর? জাতীয় নিরাপত্তা কেবল মিসাইল বা সেনাসংখ্যা দিয়ে মাপা যায় না; এটি একটি মানসিক প্রস্তুতি, একটি জাতিগত মনোভাবের নাম, যা সাহস, প্রযুক্তি এবং দূরদৃষ্টির সমন্বয়ে গড়ে ওঠে। আজ যখন এক প্রতিবেশী রাষ্ট্রের আকাশে আগুন জ্বলছে, তখন বাংলাদেশ কি নিরাপদ? আমাদের নীতিনির্ধারকদের চোখে কি সেই আগুনের প্রতিফলন পড়ে? নাকি তারা মনে করেন আন্তর্জাতিক কূটনীতির ছায়াতলে বাংলাদেশ চিরকাল নিরাপদে থাকবে? কিন্তু ভূ-রাজনীতি কখনো নিশ্চয়তা দেয় না, বরং এটি প্রস্তুতি চায়। বাংলাদেশের সীমান্তে যদি কাল সকালে কোনো ড্রোন উড়ে আসে, আমরা কী করব? কেবল বিবৃতি দেব নাকি নিঃশব্দে মাথা নোয়াব? উত্তর হয়তো একটাই— আমরা প্রস্তুত নই।
বাংলাদেশের আকাশ প্রতিরক্ষা এখনো অপ্রস্তুত। আমাদের নেই শক্তিশালী বিমান বাহিনী বা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। আধুনিক যুদ্ধজাহাজও অল্প কিছু। ড্রোন প্রযুক্তি বলতে গেলে শূন্য। অথচ এই একবিংশ শতাব্দীতে যুদ্ধ শুধু শারীরিক আক্রমণ নয়; এটি মনস্তাত্ত্বিক, সাইবার ও আকাশভিত্তিক হামলার যুদ্ধ, যেখানে যুদ্ধ প্রথমে আসে ড্রোনের চোখে, তারপর ক্ষেপণাস্ত্রের বুকে। আজ যখন মোবাইল স্ক্রিনে যুদ্ধ দেখা যায়, তখন আমাদের নিরাপত্তা ভাবনা এখনো আটকে আছে কুচকাওয়াজের শব্দে। কোনো যুদ্ধ ঘোষণা ছাড়াই হয়তো একদিন ভোরের আলো ফোটার আগেই আমাদের শহরের ওপর নেমে আসবে আগুনের বৃষ্টি। অথচ সেই আগুন প্রতিহত করার মতো প্রযুক্তি আমাদের হাতে নেই।
অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে এখনই জেগে উঠতে হবে। এটিকে কেবল একটি প্রশাসনিক দায়িত্ব বলে ভেবে বসে থাকলে চলবে না। এটি এখন রাষ্ট্রীয় অস্তিত্বের প্রশ্ন। এই মুহূর্তে প্রয়োজন একটি সর্বজনীন প্রতিরক্ষা রূপরেখা, যেখানে প্রযুক্তি, কূটনীতি এবং সাহস মিলেমিশে গড়ে তুলবে বাংলাদেশের আত্মরক্ষা বলয়। আমরা যুদ্ধ চাই না, কেউই চায় না, কিন্তু যুদ্ধ আমাদের চাইতে পারে— আমাদের মাটি, আমাদের আকাশ, আমাদের ভবিষ্যৎ। আর যদি সেই চাওয়া সত্যি হয়, তবে আমাদের তরুণেরা কি প্রস্তুত থাকবে? আমাদের বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, ড্রোন নির্মাতারা কি তৈরি? স্কুলের ক্লাসরুমে বসে থাকা শিশুরাও কি জানবে যে তাদের নির্ভরতার প্রতীক বাংলাদেশ আকাশে অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত? যদি আমাদের সাহস থাকে, যদি মনোবল থাকে, তবে এখনই সময় সেই সাহসকে প্রযুক্তির ঢালে পরিণত করার। যুদ্ধজয়ের কবিতা কেবল বীরদের গল্পে নয়, তা গড়া হয় প্রস্তুতি আর প্রত্যয়ের হাত ধরে। আমরা যদি চুপ করে থাকি, তবে ইতিহাস আমাদের লেখা হবে না; আমরা হব অন্যের ইতিহাসের পাদটীকা। আর আমাদের সন্তানেরা একদিন জিজ্ঞেস করবে, "তোমরা তখন কী করছিলে?"
সোহাগ/
আপনার জন্য নির্বাচিত নিউজ
- নবম পে-স্কেল চূড়ান্তের পথে: সর্বনিম্ন বেতন ও গ্রেড নিয়ে যা জানা গেলো
- সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সুখবর
- নবম বেতন কাঠামো আসছে ৩ ধাপে, সুবিধা শুরু ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে
- এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থা
- নবম পে স্কেল: পর্দার আড়ালে উচ্চপর্যায়ের তৎপরতা, চূড়ান্ত কাঠামো নিয়ে গোপন প্রস্তুতি
- পে স্কেল ডেডলাইন শেষ, কর্মচারীদের আন্দোলন নিয়ে যা বলছে কমিশন
- সারাদেশে বৃষ্টির আভাস
- বিমানবন্দরে তারেক রহমানের ভিডিও, যা জানা গেল
- পে-স্কেল চূড়ান্তের পথে: 'আকাশচুম্বী নয়, বাস্তবসম্মত বেতন কাঠামো'র সুপারিশ
- ব্রাজিল বনাম বাংলাদেশ: লাতিন বাংলা সুপার কাপের পূর্ণাঙ্গ সময়সূচি ঘোষণা
- মধ্যরাতে ৪.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল বাংলাদেশ
- আজকের সোনার বাজারদর: ২ ডিসেম্বর ২০২৫
- ৭০ সচিবের মতামত চূড়ান্ত: নবম পে-স্কেলের সুপারিশ আসছে ডিসেম্বরে
- পে স্কেলে ৭০ সচিবের চরম ‘বিরোধিতা’; যা জানা গেল
- আগামী ৫ দিন কেমন থাকবে, মঙ্গলবার থেকে বাড়বে শীত
