| ঢাকা, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

কেন হাসিনার রাজনীতি শেষ করে দিলেন মোদি

২০২৫ এপ্রিল ০৭ ১৭:২১:০৯
কেন হাসিনার রাজনীতি শেষ করে দিলেন মোদি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যাংককের আকাশে সূর্য যখন গোধুলির ছায়া ফেলছিল, তখন এক গোপন কক্ষে রাজনীতি লেখা হচ্ছিল—এক ইতিহাসের মোড়। বিমস্টেক সম্মেলনের ব্যস্ততা তখন অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে। রাষ্ট্রপ্রধানদের ব্যস্ত সূচি এবং প্রোটোকলের বাইরে, একটি বৈঠক হঠাৎ আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসলো: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুসের মুখোমুখি সাক্ষাৎ।

এটি কোনো প্রেস কনফারেন্স ছিল না, ক্যামেরার সামনে হাসিমুখে ছবি তোলা হয়নি, কিন্তু বন্ধ দরজার আড়ালে যা হয়েছিল, তা দুই দেশের ইতিহাসে শুধু নতুন মোড় দেয়নি, কিছু সম্পর্ককে বিসর্জনও দিয়েছে এবং ভবিষ্যতের প্রতি আশ্বাসও দিয়েছে।

দুই নেতা করমর্দন করলেন, সেই মুহূর্তের ছবি হয়তো সাধারণ চোখে সৌজন্য বিনিময়, কিন্তু যারা কূটনীতির ভাষা বোঝেন, তাদের কাছে এটি ছিল এক নীরব ঘোষণা। একসময় শেখ হাসিনা ছিলেন ভারত নির্ভর বাংলাদেশ, কিন্তু আজ ভারত তার হাত বাড়াচ্ছে এমন একজন নেতার দিকে, যিনি কোনো দল করেন না, তবে যিনি আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য এবং নৈতিকতায় প্রশ্নাতীত।

মোদি ধীরে স্বর নামিয়ে এসে বললেন, "হাসিনার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ, কিন্তু আপনার প্রতি তার আচরণ আমাদের পছন্দ হয়নি। ভারত সবসময় আপনাকে সম্মান করেছে।" এই একটি বাক্যই অনেক কিছু বলে দেয়।

ভারতের প্রতি হাসিনার ছিল চরম আনুগত্য—প্রতিটি বিতর্কে চুপ থাকা, সীমান্ত হত্যা, তিস্তা পানি নিয়ে কিছু না বলা—এসবের মধ্যেই তার পররাষ্ট্রনীতি দাঁড়িয়ে ছিল। আওয়ামী লীগের ভরসা ছিল ভারত, সবসময় পাশে থাকবে। কিন্তু রাজনীতি কখনো আবেগের উপর চলে না, এটি চলে প্রয়োজন, স্বার্থ এবং সময়মত অবস্থান বদলের পেশাদারিত্বের মাধ্যমে।

আজ ভারত বলছে, "আমরা ডক্টর ইউনুসের পাশে আছি," এবং এটি শুধু ডক্টর ইউনুসের প্রতি সম্মানের কথা নয়, বরং হাসিনার জন্য এক অরাজনৈতিক অবসরের চূড়ান্ত নির্দেশনা। আজ শেখ হাসিনা, যিনি চারপাশে মানুষ থাকা সত্ত্বেও, বাস্তবতায় দিন দিন নিঃসঙ্গ হয়ে যাচ্ছেন, তার মুখে এক ধরনের নিরাবেগ স্তব্ধতা ছিল। একসময় যে দেশ তাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছিল, আজ সেই দেশই তাকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। তার হাতে হয়তো একটি রিমোট, টিভির পর্দায় বৈঠকের ক্লিপ চলছে, আর চোখে মুখে জমে থাকা ইতিহাসের বোঝা।

একসময় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বলতেন, "ভারতের ছায়া ছাড়া কেউ বাংলাদেশ শাসন করতে পারবে না," কিন্তু আজ সেই নেতারা নিশ্চুপ। কারণ ছায়া বদলে গেছে, এখন দিল্লির ভাষা বদলে গেছে, সম্পর্কের সংজ্ঞা বদলে গেছে। আজ ভারত বলছে, "আমরা দলভিত্তিক নয়, জনগণভিত্তিক সম্পর্ক চাই।" এটি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মেরুদণ্ডে যেন আঘাত এনেছে, কারণ তাদের মূল ভিত্তি ছিল ভারতীয় সমর্থন—যেটি এখন নিষ্ক্রিয়।

ডক্টর ইউনুস কোন রাজনৈতিক দলের প্রধান নন, তার পেছনে নেই কোনো কর্পোরেট ফান্ড বা রাজনৈতিক ফ্যাসাদ। তবুও তিনি আজ বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত, সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য এবং সবচেয়ে সম্মানিত নাম। তিনি একটি নৈতিক কূটনৈতিক পথ দেখাচ্ছেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চান, কিন্তু তার সমতা, ন্যায় এবং পরস্পরের স্বার্থে। আর মোদির কাছ থেকে তিনি সেই সম্মান পেয়েছেন, যেখানে শেখ হাসিনা তার শাসনকালজুড়ে আপোষ করেছেন।

বাংলাদেশের জনগণ দেখেছে কীভাবে ভোটবিহীন শাসন চলে, কীভাবে দুর্নীতি, হামলা, ভয় দেখিয়ে পুরো রাষ্ট্র এক ব্যক্তির শাসনে বন্দি রাখা হয়। আজ সেই জনতাই বলছে, "আমরা অপেক্ষা করছি শতাব্দীর সেরা বিচার দেখার জন্য।" শেখ হাসিনা এখন শুধু এক সাবেক প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি এক প্রতীকে রূপ নিয়েছেন—এক শাসকের, এক নীরব নিঃশংসতার এবং এক নিঃশব্দ জুলুমের। আর তার বিপরীতে, ইউনুস হচ্ছেন একজন প্রতিশ্রুতির নাম, যিনি বলছেন, "বিচার আসবেই, ইতিহাসকে থামানো যাবে না।"

বিশ্বরাজনীতি যখন এশিয়ার দিকে নজর দিচ্ছে, তখন ভারত নিজের আঞ্চলিক অবস্থান নতুন করে সাজাচ্ছে। তারা এখন আর একদলীয় কর্তৃত্বশীল সরকারকে সমর্থন করে না, তারা চায় স্থিতিশীল, গ্রহণযোগ্য বৈশ্বিক মানসম্পন্ন নেতৃত্ব। এই কাঠামোতে হাসিনার জন্য আর স্থান নেই। আর এই কারণে মোদিই ইউনুসের পাশে দাঁড়িয়ে দিলেন এক ঐতিহাসিক বার্তা—"বাংলাদেশ এখন নতুন নেতৃত্বের দিকে হাঁটছে, এবং আমরা সঙ্গে আছি।"

ব্যাংককের সেই কক্ষে আলো নিভে গেছে, কিন্তু সেই আলো নিভে যাওয়ার মানে অন্ধকার নয়। বরং, এটি একটি নতুন ভোরের প্রস্তুতি। ইউনুস যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন, এটি শুধু রাজনৈতিক মঞ্চ নয়, এটি নৈতিক নেতৃত্বের প্রতীক। মোদি যখন বলছেন, "আপনার প্রতি অসম্মান আমরা মেনে নেইনি," তখন বাংলাদেশ আর আগের বাংলাদেশ নেই। হাসিনার জন্য এটি শুধু নির্বাসনের নয়, এটি তার রাজনৈতিক মৃত্যুদণ্ডের নিঃশব্দ ঘোষণা। আর ইউনুস এখন শুধু একজন উপদেষ্টা নন, তিনি সময়ের প্রতিশ্রুতি।

দরজার ওপারে অন্ধকার গাঢ় হচ্ছে, বাইরে একটি ছায়া নড়েছে। শেখ হাসিনা ভারতের কোনো অন্ধকার প্রকোষ্ঠে হতাশায় মুষড়ে পড়েছেন। তার প্রধানমন্ত্রীত্বের শেষ অধ্যায় কি এখানেই শেষ? নাকি বাংলাদেশের মাটিতে তার জন্য অপেক্ষা করছে একটি ফাঁসির দড়ি? সময়ের গর্ভে লুকিয়ে রয়েছে উত্তর।

সাকিব/

আপনার জন্য নির্বাচিত নিউজ

ক্রিকেট

অবিশ্বাস্য ভাবে শেষ হল বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ম্যাচ

অবিশ্বাস্য ভাবে শেষ হল বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ম্যাচ

নিজস্ব প্রতিবেদক: তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে শ্রীলঙ্কার কাছে প্রথম ম্যাচে হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে ছিল ...

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১ম টি-টোয়েন্টিতে টস জিতল বাংলাদেশ, দেখে নিন দুই চমক নিয়ে একাদশ

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১ম টি-টোয়েন্টিতে টস জিতল বাংলাদেশ, দেখে নিন দুই চমক নিয়ে একাদশ

টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে পরাজয়ের পর এবার ঘুরে দাঁড়াতে চায় বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচ ...

ফুটবল

ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবনতি, দেখে নিন আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের অবস্থান

ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবনতি, দেখে নিন আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের অবস্থান

বিশ্ব ফুটবলের সর্বশেষ ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে প্রত্যাশার বিপরীতে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) প্রকাশিত র‍্যাঙ্কিং ...

আমেরিকার মাটিতে কি ২০২৬ বিশ্বকাপ খেলতে পারবে না ইরান!

আমেরিকার মাটিতে কি ২০২৬ বিশ্বকাপ খেলতে পারবে না ইরান!

নিজস্ব প্রতিবেদক: মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত রাজনীতির আঁচ এবার ছড়িয়ে পড়ছে ক্রীড়াঙ্গনেও। ইসরায়েল-ইরান দ্বন্দ্বে যখন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ...