স্ত্রীর দেওয়া কিডনিতে নতুন জীবন পেয়ে অন্য নারীকে নিয়ে থাকছেন স্বামী

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাভারের কলমা ইউনিয়নে ঘটেছে এক চরম অকৃতজ্ঞতার নির্মম ঘটনা। ৩৫ বছর বয়সী উম্মে সাহেদীনা টুনি নিজের কিডনি দান করে স্বামী মোহাম্মদ তারেককে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনেন। কিন্তু সুস্থ হতেই তারেক জড়িয়ে পড়েন পরকীয়া ও অনলাইন জুয়ায়। শুধু তাই নয়, যিনি তার জীবন বাঁচিয়েছেন—সেই স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন এবং এখন অন্য এক নারীর সঙ্গে বসবাস করছেন।
টুনি বাধ্য হয়ে নারী নির্যাতন ও যৌতুক আইনে মামলা করেছেন। অভিযুক্ত তারেক একবার গ্রেপ্তার হলেও বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।
২০০৬ সালে পারিবারিকভাবে টুনি-তারেকের বিয়ে হয়। বছর না ঘুরতেই একটি পুত্রসন্তানের জন্ম। এরপর ২০০৮ সালের দিকে তারেকের দুটি কিডনিই বিকল হয়ে যায়। চিকিৎসকরা জানান, বাঁচতে হলে দ্রুত ডায়ালাইসিস এবং পরে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে। স্বামীর জীবন বাঁচাতে টুনি নিয়ে যান তাকে ভারতে। কয়েক বছর ধরে চিকিৎসা চলার পর শেষ পর্যন্ত নিজের একটি কিডনি স্বামীকে দান করেন টুনি।
কেবল কিডনি নয়, চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে টুনি শুরু করেন বিউটি পার্লার ও বুটিকস ব্যবসা। মাসে প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকা উপার্জন করে স্বামীর চিকিৎসায় ব্যয় করতেন। এমনকি নিজের সঞ্চয়, গয়না—সবকিছু বিক্রি করে জীবন-মরণ লড়াই চালিয়ে গেছেন তিনি। প্রতি বছর তিনবার ভারতে নিয়ে চিকিৎসা করাতে ব্যয় হতো কয়েক লাখ টাকা।
২০১৯ সালে দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে নতুন জীবন ফিরে পান তারেক। আর সেখান থেকেই শুরু হয় তার বদলে যাওয়া। স্ত্রী টুনি জানান, অপারেশনের পর থেকেই তারেকের ব্যবহার অসহনীয় হয়ে ওঠে। শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা আনতে চাপ দেওয়া, উপার্জনের সব টাকা কাড়িয়ে নেওয়া, এমনকি খালা টাকা পাঠাতে দেরি করায় দুর্ব্যবহার—সব মিলিয়ে সম্পর্ক হয়ে ওঠে বিষাক্ত।
এরই মধ্যে তাহমিনা নামে এক তালাকপ্রাপ্তা নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান তারেক। টুনি প্রতিবাদ করায় বাড়ে নির্যাতন। শেষ পর্যন্ত টুনিকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন। বাধ্য হয়ে টুনি আশ্রয় নেন বাবার বাড়িতে।
চরম নির্যাতনের মুখে টুনি গত ফেব্রুয়ারিতে সাভার মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। প্রথমে তারেক মুচলেকা দিয়ে ছাড় পান। কিন্তু নির্যাতন আরও বাড়ায়, টুনি শেষমেশ আদালতে মামলা দায়ের করেন ২২ এপ্রিল। মামলায় যৌতুক দাবি, নারী নির্যাতন এবং প্রতারণামূলকভাবে কিডনি নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
টুনির মা জানান, তারেকের চিকিৎসায় নিজের পেনশনের টাকাও খরচ করেছেন তিনি। আর আজ সেই মানুষই তাদের মেয়েকে তাড়িয়ে দিয়েছে।
টুনির আইনজীবী নেহার ফারুক বলেন, এই ঘটনা শুধু নারী নির্যাতন নয়, এটি মানব অঙ্গ প্রতিস্থাপন আইনেরও লঙ্ঘন। প্রতারণার মাধ্যমে স্ত্রীর কিডনি নিয়ে পরে তার ওপরই বর্বর নির্যাতন চালানো হয়েছে। চার্জশিট পাওয়ার পর আমরা তার জামিন বাতিলের আবেদন করবো।
এই ঘটনা শুধু একটি পারিবারিক ট্র্যাজেডি নয়, বরং সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এক নির্মম উদাহরণ। যে নারী ভালোবাসার ত্যাগে নিজের শরীরের একটি অঙ্গ পর্যন্ত স্বামীর জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন, তাকেই পায়ে দলে ফেলা—এ যেন সভ্যতার মুখে এক কলঙ্কচিহ্ন।
আশা/
আপনার জন্য নির্বাচিত নিউজ
- ক্যান্সার হওয়ার ১ বছর আগে যেসব পূর্ব লক্ষণ দেখা দেয়
- মোটরসাইকেল মালিকদের জন্য বিআরটিএর কঠোর নির্দেশনা
- দেশে জ্বালানি তেলের দাম নতুন করে নির্ধারণ
- বাংলাদেশের বাজারে আজ ১ ভরি সোনার দাম
- কোন রক্তের গ্রুপে গরম বা শীত বেশি লাগে
- নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকিতে বাংলাদেশ!
- চাকরিতে থাকা বা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বড় সুখবর
- অবশেষে বাংলাদেশকে সুখবর পাঠাল ভারত
- দাম কমিয়ে আজ ১ ভরি সোনার দাম কত হল
- তীব্র শব্দে কেঁপে উঠলো ইরান, যা জানা গেল
- ইরানের জন্য নতুন দুঃসংবাদ
- মৃত্যু ছেলের সাথে ১৫ বছর পর মায়ের দেখা
- স্টারলিংকের ইন্টারনেট ব্যবহার করলেই মৃত্যুদণ্ড, যা জানা গেল
- বাস পুড়ে তানজানিয়ায় ৩৮ জনের মৃত্যু
- ভয়াবহ সুনামির শঙ্কা, প্রাণহানি ঘটতে পারে ৩ লাখ মানুষের