ইরানের পর কার পালা

নিজস্ব প্রতিবেদক: মধ্যপ্রাচ্যের আকাশ জুড়ে এখন উত্তেজনা ও অস্থিরতার ছায়া। ২০২৫ সালের ১৩ জুন থেকে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে শুরু হওয়া সামরিক সংঘাত প্রতিদিন আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। একদিকে ইসরায়েলের টানা বিমান হামলা, অন্যদিকে ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দুই দেশেরই প্রাণহানি বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে।
তেহরানসহ ইরানের বন্দর শহরগুলোয় রাতভর সাইরেন বাজছে, আর ভোর হতেই ড্রোন ছুটে যাচ্ছে হাইফা ও তেলআবিবের আকাশে। এই সংঘাত এখন আর শুধু দুই দেশের নয়— এর প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে পুরো মুসলিম বিশ্বে।
এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে— যদি ইরান এই যুদ্ধে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ে, তাহলে কি ইসরায়েল সেখানেই থেমে থাকবে?
এই প্রশ্ন আবেগপ্রবণ নয়, বরং অভিজ্ঞতা ও শঙ্কায় গড়ে ওঠা। যারা একসময় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে আঞ্চলিক শান্তির আশ্বাস পেয়েছিলেন— যেমন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন— তাদের অবস্থান আজ অনেকটাই নীরব। গাজায় রক্ত ঝরার সময় কিংবা আজ ইরানের বুকে বোমা পড়ার মুহূর্তে তাদের প্রতিক্রিয়া সীমাবদ্ধ ‘উভয় পক্ষকে সংযত থাকার’ আহ্বানে।
আব্রাহাম অ্যাকর্ড চুক্তির মূল চালিকাশক্তি ছিল কৌশলগত অর্থনীতি ও প্রযুক্তির বিনিময়ে ইরানকে একঘরে করা। কিন্তু কোনো চুক্তিই চিরস্থায়ী নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয় না। ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে, আজকের মিত্র কাল হয়ে উঠতে পারে নতুন লক্ষ্য।
১৯৩৮ সালে মিউনিখ চুক্তিতে ইউরোপীয় শক্তিগুলো হিটলারকে খুশি করতে চেকোস্লোভাকিয়ার সিডেটেন অঞ্চল ছেড়ে দেয়। কিন্তু সেই আপস কৌশলের ফল কী হয়েছিল, তা ইতিহাসে রক্তে লেখা রয়েছে— কয়েক বছর পর হিটলারের আগ্রাসনে গোটা ইউরোপ জর্জরিত হয়েছিল। যারা চুপ ছিল, তারাই একদিন আগ্রাসনের শিকার হয়েছিল।
আজ যারা ভাবছেন, “ইরান তো শিয়া রাষ্ট্র, আমাদের কিছু হবে না”— তারাও ইতিহাস ভুলে যাচ্ছেন। রাজনৈতিক বা সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা কখনও এক জায়গায় থেমে থাকে না। একবার বাড়তি জমি জয় করলে পরের লক্ষ্য নির্ধারণ সময়ের ব্যাপার মাত্র।
ইসরায়েলের ভেতরেই বহু বছর ধরে 'গ্রেটার ইসরায়েল'-এর ধারণা ঘুরে বেড়ায়— যেখানে নীলনদ থেকে ইউফ্রেতিস পর্যন্ত অঞ্চলকে বৃহত্তর ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে কল্পনা করা হয়। পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণ, ইসরায়েলি নেতাদের বক্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে— এটি কেবল সাহিত্য নয়, ভবিষ্যতের রাজনৈতিক দাবিও হয়ে উঠতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যের যে দেশগুলো আজ ইরানের পাশে দাঁড়াতে দ্বিধায়— যেমন জর্ডান, মিশর, সৌদি আরব, এমনকি কাতার— তাদের জন্য প্রশ্ন রয়ে যায়, আগামীকাল সেই মানচিত্রে তাদের অবস্থান কোথায় থাকবে?
ইতিহাস মনে করিয়ে দেয়— ১৯৫৩ সালে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র মিলে ইরানের জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী মোসাদ্দেককে সরিয়ে তেল নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে শাহকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল। ২০০৩ সালে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের অজুহাতে ইরাক দখলের পরও তদন্তে দেখা গেছে, এমন কোনো অস্ত্র আদৌ ছিল না। এ সব অভিজ্ঞতা জানায়, নিরাপত্তার নামে বড় শক্তিগুলোর প্রকৃত লক্ষ্য থাকে ভিন্ন— ভূরাজনীতি ও অর্থনৈতিক কর্তৃত্ব।
১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে আরব দেশগুলো সাময়িকভাবে জোটবদ্ধ হয়ে কিছুটা সাফল্য পেয়েছিল। সৌদি আরব তখন তেল রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল, যার প্রভাবে বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে গিয়েছিল চারগুণ। কিন্তু আজকের বাস্তবতা ভিন্ন। গালফ রাষ্ট্রগুলো এখন অনেক বেশি পশ্চিমা প্রযুক্তি ও অস্ত্রনির্ভর।
২০১৯ সালে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের ড্রোন হামলায় সৌদি তেল স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতি হলেও, তা সামাল দিতে পশ্চিমা জোটের দিক থেকে তেমন পদক্ষেপ আসেনি। ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ যদি আরও ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে পারস্য উপসাগর, উপকূলীয় গ্যাসক্ষেত্র, এমনকি দুবাইয়ের মতো বাণিজ্যিক কেন্দ্রও ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
এ পরিস্থিতিতে শুধু বিবৃতি দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না। তখন নীরবতা নয়, দরকার হবে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার। কারণ, আজ যারা ইরানের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না, কাল তারাই হতে পারেন পরবর্তী লক্ষ্য।
প্রশ্নটি সবার জন্য— ইরান যদি পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, তাহলে কার পালা পরের? ইতিহাসের পাতা জবাব দেয়— অন্যায়ের সামনে চুপ থাকলে নিজের নামই হয় তালিকার পরবর্তী নাম।
মধ্যপ্রাচ্যের ছোট ছোট দেশগুলোর সামনে এখন দু’টি পথ— এক, আজই স্পষ্ট বার্তা দেওয়া যে তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ নয়; দুই, নীরব থেকে আশা করা, ঝড়টা অন্যদিকে বয়ে যাবে।
প্রথম পথ কঠিন, কারণ তাতে হারাতে হতে পারে পশ্চিমা অস্ত্র, প্রযুক্তি বা কৌশলগত সহযোগিতা। কিন্তু দ্বিতীয় পথ আরও ভয়াবহ— কারণ সেখানে ঝুঁকি শুধু জাতীয় স্বার্থ নয়, বরং সার্বভৌম অস্তিত্বেরও।
ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষকে যদি কেউ মনে করেন, ‘দূরের আগুন’, তবে মনে রাখা দরকার— দেরি করে হলেও সেই আগুন একদিন পৌঁছে যেতে পারে ঘরের ছাদে।
ইতিহাস বলেছে, নীরবতা কখনো কাউকে রক্ষা করেনি। বরং আগ্রাসী শক্তিকে দিয়েছে সাহস। মিউনিখ, তেল নিষেধাজ্ঞা কিংবা আজকের ক্ষেপণাস্ত্র— সবই প্রমাণ করে, ন্যায়ভিত্তিক অবস্থান গ্রহণ না করলে শিকার হওয়ার সম্ভাবনা কেবল সময়ের ব্যাপার।
সিদ্দিকা/
আপনার জন্য নির্বাচিত নিউজ
- সুদানে বিমান হামলায় নিহত ৪০ আমিরাতি ভাড়াটে সেনা
- দেশের বাজারে আজ এক ভরি সোনার দাম
- কপালে কালো দাগ হওয়া কিসের লক্ষণ
- নতুন প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে আসছে আওয়ামী লীগ
- যেভাবে মারা গেলেন সাবেক সেনাপ্রধান হারুনুর রশিদ
- বাংলাদেশ বনাম কোরিয়া, লাইভ দেখবেন যেভাবে
- আওয়ামী লীগ নেতাদের আশ্রয় নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে মমতা
- হাত-পায়ের এই ৭ লক্ষণ কিডনি নষ্টের ইঙ্গিত
- ৮০ মিনিটে কোরিয়ার বিপক্ষে ১-৩ গোলে পিছিয়ে বাংলাদেশ
- ৯০ মিনিটে কোরিয়ার বিপক্ষে ১-৬ গোলে হারল বাংলাদেশ
- বাড়ল সৌদি রিয়ালের বিনিময় রেট
- শেষ হল বাংলাদেশ বনাম তিমুর লেস্তে ম্যাচ, দেখে নিন ফলাফল
- ৯০ বছর ধরে হাতুড়ির বদলে গ্রেনেড ব্যবহার!
- দুটি লক্ষণ দেখলে বুঝবেন সন্তানের উপর বদনজর পড়ছে
- বাংলাদেশ বনাম দক্ষিণ কোরিয়া: লাইভ দেখবেন যেভাবে