একদিকে ইহুদি, অন্যদিকে শিয়া! ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আমাদের করণীয় কী

নিজস্ব প্রতিবেদন: বর্তমান সময়ে মুসলিম উম্মাহ এক জটিল বাস্তবতার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে। ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ সেই বাস্তবতার সাম্প্রতিক একটি দৃষ্টান্ত মাত্র। এমন এক সময়ে, যখন সত্য-মিথ্যার সীমারেখা মুছে যেতে বসেছে, মুসলিমদের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।
ইরান একটি শিয়া রাষ্ট্র। তারা কেবলার দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে, রাসুল (সা.)-কে রাসুল হিসেবে মানে। কিন্তু বাস্তবতাও হলো—শিয়াদের একটা বড় অংশ এমন বিশ্বাসে বিশ্বাসী, যা তাদের ইসলাম থেকে বিচ্যুত করে ফেলেছে। আবার কিছু শিয়া আছে যারা সেই পর্যায়ে না গেলেও গুরুতর বিদআত ও বিভ্রান্তির মধ্যে আছে। বিশ্বের সব আহলে সুন্নাহ ওলামায়ে কেরাম, চার মাজহাব ও হাদিসের ইমামরা একমত যে—শিয়াদের মাঝে এ ধরনের বিশ্বাস ও আচরণ স্পষ্টভাবে গোমরাহির শামিল।
অন্যদিকে ইরান, সিরিয়া, ইরাকসহ বহু দেশে আহলে সুন্নাহর বিরুদ্ধে সহিংসতা চালিয়েছে। বিশেষ করে সিরিয়ায় লাখ লাখ আলেম, মুসল্লি ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করে মসজিদগুলো ধ্বংস করেছে। বাশার আল আসাদের মাধ্যমে চালানো সেই নির্মম দমনপীড়নের পেছনে ছিল ইরানেরই সমর্থন ও সহায়তা।
ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহর অবস্থান স্পষ্ট। কোরআনেই বলা হয়েছে, “তুমি দেখতে পাবে, ঈমানদারদের সবচেয়ে কঠিন শত্রু হলো ইয়াহুদিরা এবং এরপর মুশরিকরা।” আজকের দিনে ফিলিস্তিনসহ গোটা মুসলিম বিশ্বজুড়ে ইহুদিদের এই খোলামেলা শত্রুতা আমরা প্রত্যক্ষ করছি। ভারতের মতো মুশরিক রাষ্ট্র এবং ইসরায়েল—উভয়েই মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ফ্রন্টে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে।
প্রশ্নটা এখানেই। শিয়ারা কেবলা মানে, রাসুল মানে—এই মৌলিক বিষয়গুলোতে আমাদের সঙ্গে মিল রয়েছে। তাই ইহুদি ও মুশরিকদের মতো একেবারে ‘আউটসাইডার’ হিসেবে তাদের রাখা যাবে না। আবার ইতিহাস ও বাস্তবতা আমাদের দেখিয়েছে, ইরানও বহু সময় আহলে সুন্নাহর বিরুদ্ধে জুলুম করেছে। ফলে ইরানকে একেবারে 'ভাই' বলেও সবকিছু ঢেকে ফেলা ঠিক নয়।
বর্তমান ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে আমাদের কৌশলী হতে হবে। ইসলামের শিক্ষা হলো, যেখানে কেউ মজলুম, সেখানে আমরা মজলুমের পক্ষ নেব। মজলুম যদি শিয়াও হয়, তার প্রতি আমাদের অন্তত ন্যায্যতা ও সহানুভূতির মনোভাব থাকা উচিত। তবে সেই সহানুভূতি কখনো জালেমের সমর্থনে পরিণত হওয়া যাবে না। জুলুম যেই করুক, তাকে সমর্থন করা ইসলামি আদর্শের পরিপন্থী।
আমাদের দায়িত্ব হলো আল্লাহর কাছে এই দোয়া করা—যেন বিশ্বে ঘটে যাওয়া সব দ্বন্দ্ব-সংঘাত ইসলামের বিজয় এবং মুসলমানদের কল্যাণের মাধ্যমে শেষ হয়। আমরা যেন কখনো জালেমদের সহায়তা না করি, বরং সব সময় মজলুমের পাশে থাকি, ইনসাফে দৃঢ় থাকি।
একই সঙ্গে, ইরানের প্রতি আহ্বান থাকবে—তারা যদি সত্যিই নিজেদের আহলে কিবলা মনে করে, তাহলে আহলে সুন্নাহ ভাইদের প্রতি তাদের অতীতের নির্যাতনমূলক আচরণের জন্য অনুতপ্ত হোক এবং ভবিষ্যতে যেন আরও দায়িত্বশীল আচরণ করে।
সম্প্রতি উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ‘ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি’ বইয়ে সাহাবায়ে কেরামের ব্যাপারে কিছু সমালোচনামূলক লেখা স্থান পেয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও আশঙ্কাজনক।
নবী করিম (সা.) স্পষ্টভাবে বলেছেন:
“আমার সাহাবীগণ হেদায়াতের ওপর আছেন। যারা তাদের অনুসরণ করবে, তারা হেদায়াতপ্রাপ্ত হবে।” “আমার সাহাবীদের গালি দিও না।”
কোরআনেও বহু জায়গায় সাহাবীদের প্রশংসা করা হয়েছে। যেমন:
“মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল। এবং যারা তার সঙ্গে আছে, তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পর দয়ালু…” – (সূরা ফাতহ) “আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট।” – (সূরা তাওবা)
এছাড়া নবী (সা.) বলেন, বদর ও উহুদের সাহাবীদের ওপর আল্লাহ তাআলা দয়া করেছেন—তাদের ভুলত্রুটি থাকলেও তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত। তাই সাহাবীদের ভুল নিয়ে আলোচনা করা বা সমালোচনার ভাষায় উপস্থাপন করা কোনোভাবেই ইসলামসম্মত নয়।
দুঃখজনকভাবে, এনসিটিভির পাঠ্যবই রচনায় এমন কিছু ব্যক্তিকে স্থান দেওয়া হয়েছে যাদের ইসলামি ব্যাকগ্রাউন্ড নেই, কেউ কেউ হাদিস অস্বীকার করে, কেউ কেউ ইসলামকে অন্তর থেকে বিশ্বাস করে না। এত গুরুত্বপূর্ণ পাঠ্যবইয়ে এদের প্রভাব পড়ায় ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিভ্রান্ত হচ্ছে।
এ কারণে এনসিটিভির বর্তমান কাঠামো ও নেতৃত্বে বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন। যারা মুসলিম সমাজ ও নবী (সা.)-এর সাহাবীদের নিয়ে এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে লেখেন, তাদের লেখার আগে ইসলামি স্কলারদের মতামত নিতে বাধ্য করতে হবে।
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বা সাহাবীদের নিয়ে বিতর্ক—উভয় ক্ষেত্রেই আমাদের ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান নিতে হবে। চরমপন্থা নয়, বরং সুন্নাহর পথে থাকা, মজলুমের পাশে দাঁড়ানো এবং দ্বীনের মৌলিক মূল্যবোধকে সম্মান করা—এটাই একজন সচেতন মুসলমানের করণীয়। সাহাবীদের মর্যাদা রক্ষা, জুলুমের বিরুদ্ধে অবস্থান এবং বিভ্রান্তি থেকে বেঁচে থাকা—এই তিনটাই আমাদের সময়ের বড় চ্যালেঞ্জ।
সোহাগ/
আপনার জন্য নির্বাচিত নিউজ
- যাকে প্রধানমন্ত্রী করতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা
- অবশেষে বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা পুনরায় চালু
- সয়াবিন তেলের দাম কমে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন
- সরকারি কর্মচারীদের বেতনের ৫০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা
- হঠাৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য জরুরি নির্দেশনা
- সরকারি চাকরিজীবীদের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন কত টাকা বেতন বাড়লো
- মৃত্যুর পর ভাই বোনের আর কখনো দেখা হবে না, ইসলাম কি বলে
- বড় সুখবর দিলো সংযুক্ত আরব আমিরাত
- বাংলাদেশে আজ ১৮, ২১, ২২ ক্যারেট সোনার দাম
- ইরানের শিয়ারা কি মুসলমান নয়, যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ
- ইরানের বিজয় নিয়ে যা বলেছেন মহানবী (সা)
- কমোডে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করলে গুনাহ হবে কিনা
- পুরুষদের গোসল ফরজ হলে যেসব কাজ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ
- ইরানের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিল চীন
- বাংলাদেশের শীর্ষ ১০ নিরাপদ ব্যাংক