| ঢাকা, শুক্রবার, ২ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২

মিয়ানমারের মতো ভূমিকম্প হলে কী পরিণতি হবে বাংলাদেশের

জাতীয় ডেস্ক . বিনোদন৬৯.কম
২০২৫ মার্চ ২৯ ২২:২৫:১৬
মিয়ানমারের মতো ভূমিকম্প হলে কী পরিণতি হবে বাংলাদেশের

নিজস্ব প্রতিবেদক: মিয়ানমারের মান্দালয়ে 28 মার্চ 7.7 মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে, যার ফলে হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। 10 কিলোমিটার গভীরতার এই ভূমিকম্প বাংলাদেশের ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলেও অনুভূত হয়েছে। এমন শক্তিশালী ভূমিকম্প যদি ঢাকার কাছাকাছি কোথাও আঘাত হানে, তাহলে এর পরিণতি কী হতে পারে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ ভূমিকম্পের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে অবস্থিত। ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান, এবং বার্মিজ টেকটনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থান করে বাংলাদেশ। ইন্ডিয়ান টেকটনিক প্লেট উত্তর দিকে সরে যাওয়ার ফলে মধুপুর ও ডাউকি ফল্টে চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, যা ৭ মাত্রা বা তারও শক্তিশালী ভূমিকম্পের আশঙ্কা বাড়াচ্ছে।

বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ইশরাত ইসলাম *টিবিএস* কে বলেন, "বাংলাদেশ ভূমিকম্পের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তবে, বিষয়টি নিয়ে কিছু বিচ্ছিন্ন কাজ হলেও কমিউনিটি এবং ভবন নির্মাণের মূল তদারকি যথাযথভাবে হচ্ছে না। ভূমিকম্প ঘটলে পরবর্তী করণীয় কী, সে বিষয়ে আমাদের কমিউনিটি সচেতন নয়। আমাদের ওপেন স্পেসের সংকট এত বেশি যে, ভূমিকম্প হলে আশ্রয় এবং উদ্ধার কাজের ক্ষেত্রে আমাদের বড় সমস্যা হবে।"

তিনি আরও জানান, ঢাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে পুরান ঢাকা এবং বসুন্ধরা এলাকা। বিশেষভাবে পুরান ঢাকার অধিকাংশ ভবনই একে অপরের সঙ্গে লাগোয়া, এবং এসব ভবনের ভিত্তি দুর্বল। অনেক ভবন পুরনো, যা ভূমিকম্পের সময় বিপদের কারণ হতে পারে। বসুন্ধরার মত নরম ভূমির এলাকাগুলোতে ভূমিকম্পের ঝুঁকি বেশি, তাই ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সঠিক বিল্ডিং কোড মেনে কাজ করতে হবে, এবং রাজুক ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নজরদারি বাড়াতে হবে।

অধ্যাপক ইশরাত ইসলাম আরও বলেন, "ভূমিকম্প পরবর্তী ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের কমিউনিটি বেসড প্রস্তুতি গড়ে তোলার প্রয়োজন। মানুষ কোথায় আশ্রয় নেবে, কোথায় চিকিৎসা নেবে, কোন রাস্তা ব্যবহার করবে—এসব বিষয়ে আগে থেকেই প্রস্তুতি থাকা উচিত।" তিনি সরকারকে চারটি বিষয় গুরুত্বসহকারে নেয়ার জন্য অনুরোধ করেন:

1. বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ।2. বর্তমান ভবনগুলোর যথাযথ মূল্যায়ন করা।3. ভূমিকম্পের পর পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করা।4. মাটির ধরনের ভিত্তিতে ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা করা।

সম্প্রতি রাজুকের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, টাঙ্গাইলের মধুপুর ফল্টে 6.9 মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকার 40.28 থেকে 65.83 শতাংশ ভবন ধসে পড়তে পারে। এই অবস্থায় সময়ভেদে প্রাণহানির সংখ্যা ব্যাপক হতে পারে: ভোরে হলে 2.1 থেকে 3.1 লাখ, দুপুরে 2.7 থেকে 4 লাখ, এবং রাতে 3.2 থেকে 5 লাখ মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।

রাজুকের আরেকটি গবেষণায় বলা হয়েছে, সিলেটে 7.1 মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকায় 40,935 থেকে 3 লাখ 14 হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা মোট ভবনের 1.91 শতাংশ থেকে 14.66 শতাংশের মধ্যে হতে পারে। এই ভবনগুলোর মধ্যে 5 লাখ 14 হাজার কংক্রিটের তৈরি এবং 42টি ভবনকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে ভেঙে ফেলার সুপারিশ করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর একটি, যেখানে অপরিকল্পিত ও দুর্বল ভবন এবং বস্তি রয়েছে, যা ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকিকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়া, বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল নরম ও জলাবদ্ধ পলি মাটির উপর গড়ে ওঠায়, ভূমিকম্পে এই মাটি সহজেই নরম হয়ে ভবন ধ্বংসের ঝুঁকি অনেক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, জাপান বা ক্যালিফোর্নিয়ার মতো ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলের তুলনায় বাংলাদেশের জনসচেতনতা ও দুর্যোগ মোকাবিলা ব্যবস্থার মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে। ১৮৯৭ সালে ৮ মাত্রার গ্রেট ইন্ডিয়ান আর্থকেকের সময়, তৎকালীন অবিভক্ত বাংলায় ১৫০০ জনেরও বেশি প্রাণ হারিয়েছিল। এছাড়া, ১৯১৮ সালে শ্রীমঙ্গল ভূমিকম্পেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুবায়েত কোভিদ *টিবিএস* কে বলেন, "আমরা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অবস্থান করছি, এবং দেশের বাইরের ভূমিকম্পও ঢাকায় প্রভাব ফেলতে পারে। ভবনগুলো ভূমিকম্প প্রতিরোধী হওয়া উচিত এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা আগে থেকেই তৈরি থাকতে হবে।"

তিনি আরও বলেন, "28 মার্চের ভূমিকম্পটি সম্পর্কে আমরা আগেই সতর্ক করেছিলাম, কারণ ওই অঞ্চলে সিসমিক গ্যাপ তৈরি হয়েছিল, যার কারণে দীর্ঘদিন ভূমিকম্প হয়নি। আশপাশের টেকটনিক প্লেট, বিশেষ করে ইউরোশিয় প্লেট, আরও ভূমিকম্প তৈরি করতে পারে, যার প্রভাব ভবিষ্যতে বাংলাদেশেও পড়তে পারে।"

এদিকে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশে ভূমিকম্পের প্রস্তুতি আরও জোরদার করা উচিত, যাতে ভবিষ্যতে কোনো বিপর্যয়ের সময় ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব হয়।

সোহাগ/

আপনার জন্য নির্বাচিত নিউজ

ক্রিকেট

তাসকিনকে নিয়ে সুখবর, অস্ত্রোপচার ছাড়াই ফিরছেন মাঠে!

তাসকিনকে নিয়ে সুখবর, অস্ত্রোপচার ছাড়াই ফিরছেন মাঠে!

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ দলের পেসার তাসকিন আহমেদকে নিয়ে আসলো স্বস্তির খবর। ইনজুরির কারণে জিম্বাবুয়ে সিরিজ ...

পিএসএলের উদ্বোধনী দিনেই হোটেলে অগ্নিকাণ্ড

পিএসএলের উদ্বোধনী দিনেই হোটেলে অগ্নিকাণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক: পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) ২০২৫-এর পর্দা উঠছে আজ, ১১ এপ্রিল, ইসলামাবাদ ইউনাইটেড বনাম ...

ফুটবল

রোনালদোর আবিষ্কারক পেরেরার মৃত্যু

রোনালদোর আবিষ্কারক পেরেরার মৃত্যু

পর্তুগিজ ফুটবলের ইতিহাসে লুইস ফিগো ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মতো কিংবদন্তিদের আবির্ভাব শুধু মাঠেই নয়, এর ...

বাংলাদেশ দলে খেলে কত টাকা পেলেন হামজা

বাংলাদেশ দলে খেলে কত টাকা পেলেন হামজা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ফুটবলার হামজা চৌধুরীর অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের ...