যে প্রাণীর রক্ত সবচেয়ে দামি
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রকৃতিতে এমন একটি জলজ প্রাণী রয়েছে, যার রক্তের প্রতি লিটারের মূল্য ১৫ লাখ টাকারও বেশি! প্রাণীটি ইংরেজিতে 'হর্স-সু ক্র্যাব' নামে পরিচিত হলেও আমাদের দেশে এটি রাজকাঁকড়া নামে পরিচিত। আকারে এটি ঘোড়ার খুরের মতো হলেও, এটি কাঁকড়ার বদলে কাঁকড়াবিছা ও মাকড়সার নিকটাত্মীয়।
দামি হওয়ার প্রধান কারণ: প্রাচীন অস্তিত্ব ও নীল রক্তের ক্ষমতা
রাজকাঁকড়া বিজ্ঞানীদের কাছে এক অপার বিস্ময়। এর দামি হওয়ার প্রধান কারণ দুটি:
১. সুদীর্ঘ টিকে থাকা: এটি পৃথিবীর অন্যতম 'জীবন্ত জীবাশ্ম'। কমপক্ষে ৩৬ কোটি বছর (৩৬০ মিলিয়ন বছর) ধরে এরা পৃথিবীতে একই রূপে টিকে আছে। এটি ডাইনোসর যুগেরও বহু আগে পৃথিবীতে এসেছে।
২. নীল রক্তের অবিশ্বাস্য ক্ষমতা: এই আদিম সন্ধিপদী প্রাণীর টিকে থাকার মূল কারণ হলো এর দেহের বিশেষ 'নীল রক্ত'। এদের রক্তে লৌহের পরিবর্তে তামা বা কপার থাকায় রক্তের রং নীল হয়। এই রক্তের ক্ষমতা অবিশ্বাস্য; এটি যেকোনো ব্যাকটেরিয়া, বিষাক্ত পদার্থ বা প্রতিকূল পরিবেশ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে।
রোগ প্রতিরোধের জাদুকরী কৌশল
রাজকাঁকড়ার রক্তের এই অবিশ্বাস্য ক্ষমতার রহস্য লুকিয়ে আছে এর 'অ্যামিবোসাইট' নামক বিশেষ কোষে:
* অতি সংবেদনশীলতা: এদের রক্তে সামান্য পরিমাণ ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এন্ডোটক্সিন বা জীবাণুর সংস্পর্শে এলেই রক্ত দ্রুত জমাট বেঁধে যায় বা জেলির মতো আকার ধারণ করে।
* কার্যকারিতা: মাত্র এক লক্ষ কোটি ভাগের এক ভাগ ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতিতেই রক্ত জমাট বাঁধে। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সময় লাগে ৪৮ ঘণ্টা। এই অতি সংবেদনশীল রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার জন্যই এরা এত দীর্ঘকাল টিকে থাকতে পেরেছে।
চিকিৎসাজগতে কেন অপরিহার্য?
রাজকাঁকড়ার রক্তের এই জমাট বাঁধার ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ১৯৬০-এর দশকে 'লিমুলাস অ্যামিবোসাইট লাইসেট' (LAL) নামক একটি পরীক্ষা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়। ১৯৭০-এর দশক থেকে এটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা চিকিৎসাজগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।
* বিশুদ্ধতার মানদণ্ড: মানবদেহে প্রবেশ করানো হয় এমন প্রতিটি চিকিৎসা-সরঞ্জাম—যেমন ইনজেকশন, ভ্যাকসিন, শিরায় দেওয়া ওষুধ, অপারেশন থিয়েটারের সরঞ্জাম, কৃত্রিম হিপ জয়েন্ট বা হৃদ্যন্ত্রের যন্ত্রাংশ—সবকিছু ব্যাকটেরিয়ামুক্ত কি না, তা নিশ্চিত করতে এই LAL টেস্ট ব্যবহার করা হয়।
* জীবনদায়ী প্রাণী: এই রক্তের মাধ্যমে রোগীকে সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচানো যায় এবং অসংখ্য মানুষের জীবন রক্ষা করা যায়। তাই এই প্রাণীটিকে 'জীবনদায়ী প্রাণী' বলা হয়। এর বহুমূল্য হওয়ার এটিই প্রধান কারণ।
অস্তিত্বের সংকট
এত দীর্ঘকাল টিকে থাকলেও বর্তমানে প্রাণীটি সংকটাপন্ন। চিকিৎসাবিজ্ঞান ও গবেষণায় এদের চরম চাহিদার কারণে প্রতি বছর প্রায় ৫ লাখের মতো রাজকাঁকড়া ধরে রক্ত সংগ্রহ করা হয়। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (IUCN) এটিকে 'সংকটাপন্ন' হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। এর বিকল্প পদ্ধতি দ্রুত আবিষ্কার করা না গেলে, শুধু রাজকাঁকড়ার অস্তিত্বই নয়, মানবজাতির চিকিৎসাবিজ্ঞানও গভীর সংকটে পড়বে।
সোহাগ/
আপনার জন্য নির্বাচিত নিউজ
- নবম পে-স্কেল: চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ ও বেতন
- ২০ গ্রেড থেকে ১৩ গ্রেডে বেতন কাঠামো: পে-স্কেল নিয়ে সর্বশেষ তথ্য
- ১৩ গ্রেডে নতুন বেতন কাঠামো: পে-স্কেল নিয়ে সর্বশেষ যা জানা গেল
- পে-স্কেল নিয়ে এলো নতুন সুখবর
- নবম পে স্কেল: শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার, জানালো অর্থ মন্ত্রণালয়
- স্থগিত হতে পারে নির্বাচন!
- আজকের সোনার বাজারদর: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
- পে-স্কেল বাস্তবায়নে বড় ৩ বাধা
- বুধবার সাধারণ ছুটি: খোলা থাকবে যেসব প্রতিষ্ঠান
- জানা গেল কতদিন থাকবে চলমান শৈত্যপ্রবাহ
- বেগম জিয়ার মৃত্যুতে সাকিবের পোস্ট; দেশ জুড়ে আলোচনার ঝড়
- নবম পে স্কেল: বাস্তবায়ন নিয়ে নতুন ইঙ্গিত
- বুধবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা
- আজকের সোনার বাজার দর: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
- আসছে শৈত্যপ্রবাহ ‘কনকন’: হাড়কাঁপানো শীতের কবলে যাচ্ছে দেশ
