পাঁচ ব্যাংক একীভূতকরণে বড় জটিলতা

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকার পাঁচটি দুর্বল ব্যাংককে একীভূত করে একটি বড় শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক গঠনের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা এখন আইনি জটিলতা এবং কারিগরি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এই সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান না হলে একীভূতকরণ প্রক্রিয়াটি আটকে যেতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, "আগামী নির্বাচনের পর নতুন রাজনৈতিক সরকার এলে আর্থিক খাতের শক্তিধর ব্যক্তিরা এ প্রক্রিয়া (একীভূতকরণ) বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টাটা করবে তা অমূলক না।"
প্রধান আইনি ও কারিগরি চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে এই একীভূতকরণ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার জন্য বেশ কয়েকটি আইনি দিক পর্যালোচনা করছে। যেসব প্রশ্ন সামনে এসেছে:
* আমানতকারীদের অর্থ: ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, অবসায়ন না হয়ে একীভূত হলে আমানতকারীদের পুরো অর্থ ফেরত দিতে হবে। এই বিপুল অর্থের সংস্থান কীভাবে হবে, তার সমাধান প্রয়োজন।
* শেয়ারধারকদের স্বার্থ: পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি-এর নিয়মানুযায়ী, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ পুরোপুরি সংরক্ষণ করতে হবে। তাদের শেয়ারের কী হবে, তা এখনো চূড়ান্ত নয়।
* প্রশাসক নিয়োগ: গত ১৬ সেপ্টেম্বর ব্যাংকগুলোতে প্রশাসক বসানোর সিদ্ধান্ত হলেও, এখন পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, প্রশাসককে অবশ্যই স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হতে হবে এবং তা দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানাতে হবে।
* কারিগরি সমন্বয়: পাঁচটি ব্যাংকের নিজস্ব প্রযুক্তি, মানবসম্পদ নীতিমালা ও কর্মপদ্ধতিকে একত্রিত করে একটি সমন্বিত ব্যবস্থা তৈরি করা একটি বিশাল কারিগরি চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, নতুন ব্যাংকটির নাম 'ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক' দেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে এবং পরিশোধিত মূলধন ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা সরকার দেবে।
রাজনীতির অনিশ্চয়তা ও আইনের ঘাটতি
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এই একীভূতকরণের কাজটি চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাইছে। এর প্রধান কারণ, ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে।
কিন্তু ডিসেম্বরের আগে কাজটি চূড়ান্ত করতে গেলে সরকারকে আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ আইন তৈরি ও বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে:
১. আমানত সুরক্ষা আইন: এটি বর্তমানে খসড়া অবস্থায় রয়েছে।
২. ডিসট্রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট (ডামা): এই আইনের খসড়া এখনো প্রস্তুত করা হয়নি। এই আইন খেলাপি ঋণ বিক্রির সুযোগ তৈরি করবে।
অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন মনে করেন, এই আইনগুলো নির্বাচনের আগে বাস্তবায়ন না হলে নতুন সরকার এই পরিকল্পনা গ্রহণ করবে কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এসব দুর্বল ব্যাংকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সহায়তায় যে দুর্নীতি হয়েছে, তা বিশ্বব্যাপী নজিরবিহীন।
বিএসইসি-এর অবস্থান
এই একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় এখনো বিএসইসিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পৃক্ত করা হয়নি। তবে বিএসইসি বলছে, অবসায়ন না হওয়ায় তারা পূর্বে একীভূত হওয়া কোম্পানির শেয়ারধারকদের মতো সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।
তারা ব্যাংক রেজ্যুলেশন অধ্যাদেশের ৭৭ নম্বর ধারা অনুসরণ করে, যারা ব্যাংকের সম্পদ অপব্যবহারের জন্য দায়ী—তাদের বাদ দিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার দেওয়ার দাবি করবে। তবে অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন মনে করেন, শেয়ারধারকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়াটা আইনি নয়, এটি একটি 'রাজনৈতিক' সিদ্ধান্ত হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আইনি ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে না পারলে ব্যাংক খাতের এই গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ সময়ের জন্য ঝুলে যেতে পারে।
সিদ্দিকা/
আপনার জন্য নির্বাচিত নিউজ
- সরকারি কর্মচারীদের বেতন কত হওয়া উচিত: যা জানা গেল
- আজকের টাকার রেট: ডলার, রিয়াল ও রিংগিতের বিনিময় হার
- বাংলাদেশে প্রথমবার MVNO সিম চালু করতে যাচ্ছে বিটিসিএল
- বিয়ের সাজে মামা দরজায় অনশনে ভাগ্নী
- দেশের বাজারে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে সোনা
- ঢাকায় ধরা পড়া হারুনকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠালো কারা
- দেশের বাজারে আজ এক ভরি ১৮, ২১, ২২ ক্যারেট সোনার দাম
- নতুন পে-স্কেলে বেতন বাড়বে যে হারে: মার্চ-এপ্রিলেই কার্যকর
- পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের একীভূতকরণ: গ্রাহকের টাকা কতটা সুরক্ষিত
- ১ অক্টোবর থেকে টানা ৪ দিনের ছুটি পাচ্ছেন না যারা
- বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তান: আজকের একাদশে চমক
- চাঁদকে বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার গোপন তথ্য ফাঁস! কোন দেশ জড়িত
- আজ এক ভরি ১৮, ২১, ২২ ক্যারেট সোনার দাম
- দলিল থাকলেও ছাড়তে হবে ৫ ধরনের জমির দখল
- টানা ১০ দিন চিনি না খেলে শরীরে কী হয়