মোবাইল ভোটিং: গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কি স্মার্টফোনে

নিজস্ব প্রতিবেদক: জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থান আমাদের এক নতুন বাস্তবতার সামনে দাঁড় করিয়েছে। এটি প্রমাণ করেছে যে, দেশের মানুষ আর পুরোনো নির্বাচনী ব্যবস্থার সহিংসতা, কারচুপি এবং পেশিশক্তির কাছে জিম্মি থাকতে চায় না। কিন্তু পরিবর্তনের জন্য যে বিপুল ত্যাগ স্বীকার করা হয়েছে, তার প্রতিফলন কি আমরা দেখতে পাচ্ছি? সম্ভবত এর উত্তর ‘না’। তাহলে সমাধান কোথায়? সম্ভবত সমাধান লুকিয়ে আছে আমাদের হাতের মুঠোয় থাকা স্মার্টফোনেই।
এখন আর এটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি নয়, বরং একটি বাস্তব সম্ভাবনা যে আমরা মোবাইল-ভিত্তিক একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত নির্বাচনী ব্যবস্থা তৈরি করতে পারি। কল্পনা করুন এমন একটি দিনের কথা, যেখানে ভোটকেন্দ্রে দীর্ঘ লাইন নেই, কেন্দ্র দখলের ভয় নেই, কিংবা সহিংসতায় রক্তাক্ত হওয়ার আতঙ্ক নেই। একজন কৃষক থেকে শুরু করে বিদেশে কর্মরত একজন শ্রমিক—সবাই নিজের পরিচয় যাচাই করে একটি সুরক্ষিত অ্যাপের মাধ্যমে নির্ভয়ে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারছেন।
সমালোচকদের শঙ্কাও অমূলক নয়। নিরাপত্তা, গোপনীয়তা এবং সর্বজনীন অংশগ্রহণের মতো বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। অনেকেই হ্যাকিংয়ের ঝুঁকির কথা বলে এই যুগান্তকারী সম্ভাবনাকে দূরে ঠেলে দিতে চান। অথচ এই চ্যালেঞ্জগুলোর বিপরীতেই রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তিগত সমাধান।
ভোটের দিন যদি দেশের আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন করে একটি ‘ডিজিটাল দুর্গ’ তৈরি করা যায়, তাহলে বিদেশি শক্তির সাইবার আক্রমণ ঠেকানো সম্ভব। দেশের সেরা সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি দল গঠন করা যেতে পারে, যারা সার্বক্ষণিক এই দুর্গের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। অনেকেই এর খরচ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু একটি সাধারণ জাতীয় নির্বাচনে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ নিরাপত্তা, ব্যালট ছাপানো এবং সহিংসতা মোকাবিলায় ব্যয় হয়, তার তুলনায় একদিনের জন্য এমন নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করাটা খরচ নয়, বরং গণতন্ত্রের জন্য এক শক্তিশালী বিনিয়োগ।
কেউ কেউ সহজ সমাধান হিসেবে এসএমএস ভোটিংয়ের কথা বলেন। কিন্তু এটি গণতন্ত্রের মূল আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যেখানে ভোটের গোপনীয়তাই থাকে না, সেখানে এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া হতে পারে না। এসএমএস ভোটিং চালু হলে ভোট কেনাবেচা এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার এক নতুন সংস্কৃতি তৈরি হবে, যা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করবে।
প্রকৃত সমাধান হতে পারে একটি এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপটেড, ব্লকচেইন-ভিত্তিক অ্যাপ। এই পদ্ধতিতে প্রতিটি ভোট একটি ডিজিটাল কোডে রূপান্তরিত হয়ে একটি অপরিবর্তনীয় খতিয়ানে জমা হবে। ভোটার একটি বেনামি রসিদ নম্বরের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে পারবেন যে তার ভোটটি জমা পড়েছে, কিন্তু কে কাকে ভোট দিয়েছেন তা থাকবে সম্পূর্ণ গোপন। এই প্রযুক্তি আমাদের বর্তমান মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থার চেয়েও বহুগুণ বেশি নিরাপদ হতে পারে, যদি রাষ্ট্র তা চায়।
অতীতের ইভিএম বিতর্ক থেকে আমাদের শিখতে হবে যেন মোবাইল ভোটিংয়ের ক্ষেত্রে আস্থার সংকট তৈরি না হয়। তাই জাতীয় পর্যায়ে এই পদ্ধতি চালুর আগে সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে এর বাস্তবায়ন জরুরি। এই পাইলট প্রকল্পের সফলতা জনগণের মনে আস্থা তৈরি করবে।
জুলাইয়ের বিপ্লব আমাদের শিখিয়েছে, সম্মিলিত ইচ্ছাশক্তি থাকলে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়। মোবাইল ভোটিং এখন আর বিলাসিতা নয়, বরং আমাদের ভঙ্গুর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে পুনরুজ্জীবিত করার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। এখন প্রশ্নটি প্রযুক্তির সক্ষমতা নিয়ে নয়, বরং আমাদের সম্মিলিত ইচ্ছা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা নিয়ে। আমরা কি এই সাহসী পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত?
লেখক - মনিরুজ্জামান/
আপনার জন্য নির্বাচিত নিউজ
- এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য নতুন করে ৩ ধরনের ভাতা বাড়লো
- অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মচারীদের সুযোগ বাড়ল
- দেশের বাজারে আজ ১৮, ২১, ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম
- ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে টানা ১২ দিনের ছুটি
- সুপার ফোরে বাংলাদেশ: দেখে নিন কার সাথে কখন ম্যাচ
- ৩২ রান দিয়েছে ছেলে, হার্ট অ্যাটাকে মারা গেলেন বাবা
- ছড়িয়ে পড়েছে মিশা সওদাগরের মৃত্যুর খবর, সত্য মিথ্যা যা জানা গেল
- আজকের সকল দেশের টাকার রেট (১৯ সেপ্টেম্বর)
- ৯০ মিনিটের খেলা শেষ: বাংলাদেশ বনাম নেপাল
- ক্যান্সারের মহৌষধ গাজর: কীভাবে খাবেন
- যে ৩ সময়ে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন
- নবজাতককে চুমু খেলেই বিপদ