কক্ষপথে রাশিয়ার অস্ত্রবাহী স্যাটেলাইট, যা জানা গেল

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাশিয়ার কক্ষপথে অস্ত্রবাহী ‘মাতৃস্যাটেলাইট’ প্রকল্প ঘিরে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এক সময়ের গবেষণা ও যোগাযোগের ক্ষেত্র মহাকাশ এখন পরিণত হচ্ছে নতুন সামরিক প্রতিযোগিতার মঞ্চে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো মনে করছে, রাশিয়ার এই স্যাটেলাইট কর্মসূচি তাদের জন্য একটি বড় হুমকি।
রুশ লোককথার বিখ্যাত কাঠের পুতুল ‘মাত্রিওশকা’-র মতো বহুস্তরবিশিষ্ট এই স্যাটেলাইটগুলোকে বলা হচ্ছে 'মাতৃস্যাটেলাইট'। কক্ষপথে পৌঁছানোর পর এরা সময় ও লক্ষ্য অনুযায়ী ছোট ছোট সাবস্যাটেলাইট বা গোপন বস্তু মুক্ত করে। এসব বস্তু শুধু নজরদারি নয়, প্রয়োজনে ধ্বংসাত্মক হামলারও ক্ষমতা রাখে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব সাবস্যাটেলাইটের মধ্যে কিছুতে অ্যান্টি-স্যাটেলাইট (ASAT) অস্ত্র থাকতে পারে, যা প্রতিপক্ষের স্যাটেলাইটকে গোপনে অকার্যকর করে দিতে সক্ষম।
২০২২ সালে স্পেসএক্সের ফ্যালকন-৯ রকেটে উৎক্ষেপণ হয় মার্কিন গুপ্তচর স্যাটেলাইট UASA-326। ধারণা করা হয় এটি KH-11 সিরিজের উন্নত গোয়েন্দা স্যাটেলাইট, যা রিয়েল-টাইম হাই-রেজুলুশন ছবি পাঠাতে পারে।
এই স্যাটেলাইটটির পেছনে ছায়ার মতো লেগে ছিল রাশিয়ার ‘কসমস-২৫৫৮’। তিন বছর চুপচাপ থেকে ২০২৫ সালের ২৮ জুন হঠাৎ একটি রহস্যময় বস্তু ‘অবজেক্ট–সি’ কক্ষপথে ছেড়ে দেয়। ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি আক্রমণাত্মক সাবস্যাটেলাইট।
বিশ্লেষকরা এই কৌশলকে বলছেন 'স্পেস স্টকিং', আর এসব স্যাটেলাইটকে বলা হচ্ছে 'মহাকাশের গুপ্ত ঘাতক'।
রাশিয়ার এই কর্মসূচি নতুন নয়। এটি ২০১১ সালে শুরু হওয়া ‘প্রজেক্ট নিভেলির’ নামের গোপন সামরিক প্রকল্পের অংশ। ডাচ গবেষক মার্কো ল্যাংব্রুক ও রুশ বিশ্লেষক বার্ট হেনড্রিক্স জানান, রাশিয়া অন্তত তিনবার এ ধরনের অস্ত্রবাহী স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে, যেগুলো নিজেদের স্যাটেলাইটেই হামলার মহড়া চালায়। অনেক সময় এগুলো কক্ষপথ বদলে বা প্রজেক্টাইল ছুড়ে যুদ্ধের অনুশীলন করে।
২০১৩ ও ২০১৫ সালে কসমস-২৪৯১ ও ২৪৯৯ রহস্যজনকভাবে ভেঙে পড়ে, যা মহাকাশে অস্ত্র পরীক্ষার সম্ভাব্য ফল বলে ধারণা করা হয়।
২০১৭ সালে কসমস-২৫১৯ থেকে অবমুক্ত হয় কসমস-২৫২১, আর তার মধ্য থেকেও বের হয় কসমস-২৫২৩। সেটি আচমকা কক্ষপথ বদলে সবাইকে চমকে দেয়। ২০২০ সালে কসমস-২৫৪৩ ছুড়ে দেয় গোপন প্রজেক্টাইল কসমস-২৫৩৫-এর দিকে, যার কোনো আন্তর্জাতিক নিবন্ধন ছিল না।
প্রকল্পটির প্রধান দায়িত্বে রয়েছে মস্কোভিত্তিক TsNIIKhM, যা রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ২০১১ সালে চুক্তিবদ্ধ হয়। স্যাটেলাইট নির্মাণে কাজ করছে NPO Lavochkin, আর TsNIIKhM তৈরি করছে ক্ষেপণাস্ত্রধর্মী গোপন পে-লোড ও অস্ত্র।
২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে সতর্ক করেন, মস্কো হয়তো মহাকাশে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের পরিকল্পনা করছে। এমনটা ঘটলে তা হবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং গোটা বিশ্বের স্যাটেলাইটনির্ভর যোগাযোগ ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য ভয়াবহ হুমকি।
তিনি বলেন, স্যাটেলাইটে পারমাণবিক হামলা ঘটলে পৃথিবীর ন্যাভিগেশন, সামরিক গোয়েন্দা ও যোগাযোগব্যবস্থা অচল হয়ে যেতে পারে।
রাশিয়ার এই ‘মাতৃস্যাটেলাইট’ কৌশল আসলে নজরদারির বাইরেও বিস্তৃত। এটি মহাকাশকে পরিণত করছে সম্ভাব্য যুদ্ধক্ষেত্রে—যেখানে যুদ্ধ হবে না কোনো গোলাগুলিতে, বরং হবে নিঃশব্দে, কক্ষপথ বদলে কিংবা হঠাৎ নিস্তব্ধ হয়ে যাওয়া কোনো স্যাটেলাইটের মাধ্যমে।
বিশ্ব যত বেশি স্যাটেলাইট-নির্ভর হয়ে উঠছে, ততই এই ‘ছায়াযুদ্ধ’ বাস্তব হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। রাশিয়ার নিভেলির প্রকল্প সেই যুদ্ধকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে—নীরব, অদৃশ্য, কিন্তু অত্যন্ত ভয়ঙ্কর এক বাস্তবতায়।
সিদ্দিকা/
আপনার জন্য নির্বাচিত নিউজ
- ক্যান্সার হওয়ার ১ বছর আগে যেসব পূর্ব লক্ষণ দেখা দেয়
- মোটরসাইকেল মালিকদের জন্য বিআরটিএর কঠোর নির্দেশনা
- কোন গ্রুপের রক্তের ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি
- যে রক্তের গ্রুপে স্ট্রোকের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি
- শেখ হাসিনা কি লন্ডন যাচ্ছেন, যা জানা গেল
- এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে যেদিন
- নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল ভারত, নতুন বিতর্ক শুরু
- এবার ইরানের ওপর শক্তিশালী আঘাত করল যুক্তরাষ্ট্র!
- জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জরিপে চমক: দেখে নিন বিএনপির অবস্থান
- এমন বৃষ্টি আর কতদিন চলবে, জানালো আবহাওয়া অফিস
- ভয়াবহ সুনামির শঙ্কা, প্রাণহানি ঘটতে পারে ৩ লাখ মানুষের
- কার সঙ্গে কার বিয়ে হবে—এটা কি পূর্বনির্ধারিত!
- শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের অবস্থানে নাটকীয় পরিবর্তন
- বাংলাদেশে আজ এক ভরি ১৮, ২১, ২২ ক্যারেট সোনার দাম
- ওবামার ভবিষ্যত বাণীই কি সত্য হবার পথে, টুকরো টুকরো হয়ে যাবে ভারত