| ঢাকা, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

যেদিন ফুটবল দায় মিটিয়েছিল লিওনেল মেসি

খেলাধুলা ডেস্ক . বিনোদন৬৯.কম
২০২৩ ডিসেম্বর ১৮ ২২:১৮:৩১
যেদিন ফুটবল দায় মিটিয়েছিল লিওনেল মেসি

টাই-ব্রেকে যখন গঞ্জালো মন্টিয়েলের শট ফ্রান্সের জালে জড়ায়, তখন লিওনেল মেসি তার বাহু প্রসারিত করে লুসিল গ্রিনে হাঁটু গেড়ে বসেন। তার চোখের কোণে আনন্দের অশ্রু জ্বলে উঠল। যেন পৃথিবীর সবকিছুই তার হাতে।

সবকিছু করা হয়েছে! ক্লাব ফুটবলে যা কিছু জেতা যায়, এরই মধ্যে সব জিতেছেন মেসি। কোপা আমেরিকা শিরোপা এবং লা ফাইনালসিমায় আর্জেন্টিনার হয়ে কিছু জিততে না পারার জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু সেই কৃতিত্ব একটি উদ্দীপকের মতো, বৃহত্তর অর্জনের আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলে। স্বপ্নের পরিধি বাড়ান: যথেষ্ট, আর একটু বেশি!

আজ থেকে ঠিক এক বছর আগের ঘটনা। মেসির সাফল্য শেষ।

অর্জনের পাল্লায় বাকি ছিল কেবল একটা বিশ্বকাপ। সেটা মেসি জিতলেন রূপকথার গল্পকেও হার মানানো নাটকীয় ফাইনালে। এমন একটা মুহূর্তের স্বপ্নকেই তো অক্সিজেন বানিয়ে সারাটা জীবন ছুটেছেন মেসি – রোসারিও থেকে বার্সেলোনা, বার্সেলোনা থেকে প্যারিস। সে পথে ঘোরা হয়ে গিয়েছিল জার্মানি, দক্ষিণ আফ্রিকা, রাশিয়া, ব্রাজিল।

লুসাইলে ফাইনালের মাস ছয়েক আগে ৩৫তম জন্মদিন পালন করে আসা মেসির স্বপ্ন ছোঁয়ার অপেক্ষার বয়স তাঁর বয়সের সমানই ছিল তখন। আর্জেন্টিনার মানুষের জন্য সে অপেক্ষা ছিল আরেকটু দীর্ঘ - ৩৬ বছরের। মেক্সিকোতে ছিয়াশির বিশ্বকাপের ফাইনাল শেষে দিয়েগো আরমান্দো মারাদোনা যে সাড়ে ১৪ ইঞ্চি উচ্চতার সোনালি ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরেছিলেন, আর্জেন্টিনার আকাশি-নীল জার্সিতে সে-ই ছিল সর্বশেষ কারও বিশ্বকাপ ছুঁয়ে দেখার স্মৃতি। এরপর চার বছর পর পর বিশ্বকাপ এসেছে, আর নিয়ম করেই স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে আলবিসেলেস্তের।

অবশেষে ৩৫-এর ঘরে থাকা মেসির হাত ধরে আর্জেন্টিনার ৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান। লুসাইল স্টেডিয়ামে, আগেরবারের বিশ্বজয়ী ফ্রান্সকে হারিয়ে, কিলিয়ান এমবাপ্পেকে সরিয়ে, রুদ্ধশ্বাস এক ফাইনালের শেষে। সর্বকালের সেরা বিশ্বকাপ ফাইনালই কি? উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলে দেওয়া মানুষের সংখ্যাই বেশি হবে!

বিশ্বজয়ের পথে যাত্রাটা অবশ্য মোটেও সহজ ছিল না মেসিদের। হোঁচট, ব্যর্থতা, প্রত্যাবর্তন কিংবা অদম্য ইচ্ছাশক্তির প্রদর্শন - কোনোটারই কমতি ছিল না আর্জেন্টিনার তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের গল্পে। আর সে গল্পের কেন্দ্রে? ৫ ফুট ৭ ইঞ্চির এক জাদুকর।

টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থেকে কাতারে যাওয়া আর্জেন্টিনার সামনে প্রথম ম্যাচেই মাটিতে নামায় সৌদি আরব। মেক্সিকোর বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচ থেকেই তাই আর্জেন্টিনার ফাইনাল খেলার শুরু! এখন পেছনে তাকিয়ে ফাইনাল শব্দটা শুনতে আর্জেন্টিনা ভক্তদের গর্ব হবে, তবে সে সময়ে তো ফাইনালের প্রতিশব্দ হয়ে বারেবারে এসেছে স্বপ্নভঙ্গের শঙ্কা।

গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচেই যখন একের পর এক মিনিট পেরোচ্ছে, প্রথমার্ধ শেষ হয়ে দ্বিতীয়ার্ধেরও এক-তৃতীয়াংশ শেষ, আর্জেন্টিনা গ্রুপ পর্বেই বিদায় নেওয়ার শঙ্কায় কাঁপছে। আবার স্বপ্নভঙ্গের চোখরাঙানি। আর্জেন্টিনার স্বপ্নসারথি তখন আর কীভাবে লুকিয়ে থাকেন! মেসি দেখা দিলেন, মেসাইয়া হয়ে। ৬৪ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে তাঁর গড়ানো বুলেট জড়িয়ে গেল মেক্সিকোর জালে, আকাশি-নীল স্বপ্নটা আবার রঙ পেল। নতুন উদ্যমে গা ঝাড়া দিয়ে উঠল আর্জেন্টিনা।

মেক্সিকোকে শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলে হারিয়ে সেদিনের মতো শঙ্কাটাকে দূরে রাখা গেছে, কিন্তু আর্জেন্টিনার তো তখন সব ম্যাচই ফাইনাল। রবের্ত লেফানদফস্কির পোল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচটা অবশ্য সহজেই জেতা হয়ে গেল। শেষ ষোলোতে প্রতিপক্ষ কাগজে-কলমে সহজ – অস্ট্রেলিয়া। মেসির গোলে এগিয়ে যাওয়া আর্জেন্টিনা ম্যাচটা জিতল বটে, তবে শেষ মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়াও কাঁপন ধরিয়েছে আর্জেন্টাইনদের বুকে।

এরপর? নেদারল্যান্ডস! লুসাইলেই সেই ম্যাচও আর্জেন্টিনার কাছে বিশেষ। মেসির পেনাল্টি, মলিনার গোলের পথে মেসির অবিশ্বাস্য অ্যাসিস্ট – আর্জেন্টিনার ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়া, কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে দুই গোলে সমতা ফিরিয়ে নেদারল্যান্ডস আরেকবার স্বপ্নভঙ্গের শঙ্কায় ফেলে দেয় আর্জেন্টিনাকে। ম্যাচের আগে নেদারল্যান্ডস কোচ লুই ফন হালের টিপ্পনী, ম্যাচে মেসির গোলের পর ফন হালের সামনে গিয়েই উদ্‌যাপন মিলিয়ে ম্যাচটা রঙ পেয়েছিল বেশ। শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টিনার স্বপ্ন আরেকটু রঙিন হলো টাইব্রেকারে, এমিলিয়ানো মার্তিনেস নামের এক ‘বাজপাখি’র থাবা আর্জেন্টিনার স্বপ্নকে নিয়ে গেল সেমিফাইনালে।

সেমিফাইনাল – দুই ‘এলএম১০’-এর দ্বৈরথ। লিওনেল মেসি বনাম লুকা মদরিচ। সে দ্বৈরথে কী দাপুটে জয় আর্জেন্টিনার। মেসির। নিজের চেয়ে প্রায় ১৪ বছরের ছোট গাভার্দিওলকে ঘোল খাওয়ানো দৌড়ে মেসির অ্যাসিস্ট চোখে লেগে থাকবে অনেকদিন। তর্ক হতে পারে এটি – নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে মলিনার গোল, নাকি ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে আলভারেস – কোন গোলে মেসির অ্যাসিস্ট বেশি সুন্দর?

সে সুখানুভূতি ছড়িয়ে যাওয়া বিতর্ক সঙ্গী করে ফাইনালে আর্জেন্টিনা। ফাইনালে মেসি। টাইম মেশিন বারবার ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল আট বছর আগের ফাইনালে। ১১৩ মিনিট, মারিও গোতশা, জার্মানি ১-০ আর্জেন্টিনা…২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনাল মেসিকে কাঁদিয়েছিল। ট্রফিটার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ট্রফিটার দিকে মেসির অসহায়-শূন্য দৃষ্টি কোন আর্জেন্টাইনকে কাঁদায়নি!

কিন্তু এবার কান্নাটা হলো আর্জেন্টিনার সুখের। ২০১৪-র কান্না বাঁধ মানেনি, এবারের কান্নায় বাঁধ দিতে চাননি আর্জেন্টাইনরা।

এবারও মন ভাঙার কান্নার শঙ্কা তো ছিলই। প্রতিপক্ষ যে ছিল ফ্রান্স, কিলিয়ান এমবাপ্পের ফ্রান্স! আগেরবারের বিশ্বকাপজয়ী ফ্রান্স। অথচ লুসাইলে সেদিন প্রথমার্ধে ফ্রান্সকে রীতিমতো পাড়ার দল বানিয়ে দুই গোলে এগিয়ে বিরতিতে গেল আর্জেন্টিনা। মেসির পেনাল্টিতে এগিয়ে যাওয়া, পরের গোলটি আর্জেন্টিনার ‘ফাইনালের খেলোয়াড়’ আনহেল দি মারিয়ার। ২০১৪ ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে তিনি থাকলে আর্জেন্টিনাই জিতত – আর্জেন্টিনার এতদিনের আফসোস ততক্ষণে বিশ্বাসে পরিণত।

তার আগে অবশ্য বড় একটা পরীক্ষা হয়ে গেল আর্জেন্টিনার। পেছন ফিরে এখন বলা যায়, ওই পরীক্ষা হয়েছে বলেই মেসির, আর্জেন্টিনার সর্বপ্রাপ্তির তৃপ্তি এত বেশি। পরীক্ষার নাম – কিলিয়ান এমবাপ্পে।

আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয় যখন সময়ের ব্যাপার ধরা হচ্ছিল, মেসির গল্পে ভিলেন হয়ে হাজির সে সময়ে পিএসজিতে তাঁরই সতীর্থ কিলিয়ান এমবাপ্পে। এক গোল, দুই গোল – এমবাপ্পে সমতা ফেরালেন ম্যাচ। অতিরিক্ত সময়ে আবার! মেসির গোলে আর্জেন্টিনা এগিয়ে গেল ১০৮ মিনিটে, দশ মিনিট পর এমবাপ্পের অবিশ্বাস্য হ্যাটট্রিকে আবার ফ্রান্স সমতায়। ফাইনালটা ততক্ষণেই রোমাঞ্চের চূড়ায় পৌঁছেছে।

রোমাঞ্চের শেষ বিন্দু তখনো বাকি! মেসি আর বিশ্বকাপের মিলিত হওয়ার সে বিন্দুতে মেসির পার্শ্বনায়ক হয়ে হাজির এমিলিয়ানো মার্তিনেস। অতিরিক্ত সময়ের একেবারে শেষ মুহূর্তে, ১২৩তম মিনিটে চোখধাঁধানো সেইভে কোলো মুয়ানিকে ফিরিয়ে, এরপর টাইব্রেকারে ফ্রান্সের দুটি শট রুখে দিয়ে!

গনসালো মন্তিয়েলের শটটা জালে জড়াতেই তারায় তারায় রটে গেল - বিশ্বকাপ আর্জেন্টিনার। বিশ্বকাপ মেসির।

গ্যালারির ৯০ হাজার জোড়া চোখ দেখল, স্বপ্নের ট্রফিতে চুমু আঁকছেন মেসি। সে উন্মাদনার ঢেউ লুসাইল থেকে আছড়ে পড়ল বুয়েনস এইরেসে। বাংলাদেশে। পুরো বিশ্বে।

১৮ ডিসেম্বর ২০২২। সায়েন্স ফিকশন সিনেমার মতো বাস্তবেও টাইম ট্রাভেলের সুযোগ থাকলে মেসি নিশ্চিত এক বছর আগের এই সময়টাতেই ফিরে যেতে চাইবেন বারবার। যে দিনটা মেসিকে সর্বজয়ী করেছে।

অথবা, আজ ফিফার টুইটারে পোস্ট করা ছবির ক্যাপশনের মতো করে বললে, যে দিনটাতে মেসি ফুটবলকে পূর্ণতা দিয়েছেন।

আপনার জন্য নির্বাচিত নিউজ

ক্রিকেট

নিজের শেষ ম্যাচে কেঁদে কেঁদে ধোনিকে যা বললেন কাষ্টার মাষ্টার মুস্তাফিজির রহমান

নিজের শেষ ম্যাচে কেঁদে কেঁদে ধোনিকে যা বললেন কাষ্টার মাষ্টার মুস্তাফিজির রহমান

আইপিএলে নিজের শেষ ম্যাচ খেলে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে কান্নার স্বরে কথা বলেন মুস্তাফিজুর রহমান। ...

মুস্তাফিজের মেইডেন ওভার নিয়ে অবিশ্বাস্য কথা বললেন পাঞ্জাবের মেইডেন দেওয়া ব্যাটার শশাঙ্ক সিং

মুস্তাফিজের মেইডেন ওভার নিয়ে অবিশ্বাস্য কথা বললেন পাঞ্জাবের মেইডেন দেওয়া ব্যাটার শশাঙ্ক সিং

মুস্তাফিজের বল স্পিন নাকি পেস এটা এখনও আমি বুঝে উঠতে পারিনি পাঞ্জাবের মারকুটে ব্যাটার শষাষ্ক ...

ফুটবল

এবার বাংলাদেশে আসবেন মেসি

এবার বাংলাদেশে আসবেন মেসি

লিওনেল মেসি সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের একজন। বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলারের বাংলাদেশে আসার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছেন বাংলাদেশের যুব ...

ব্রাজিল-৫, আর্জেন্টিনা-১

ব্রাজিল-৫, আর্জেন্টিনা-১

মার্চের আন্তর্জাতিক বিরতির পর প্রায় সব জাতীয় দলই ম্যাচ খেলেছে। বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের ম্যাচগুলো ছাড়াও দলগুলো ...



রে