মার্কিন হামলার জবাবে ইরান কিভাবে বদলা নেবে

নিজস্ব প্রতিবেদন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় সরাসরি হামলা চালিয়েছে। এই হামলার আগে দীর্ঘ প্রস্তুতি ও ‘ওয়ার গেম’ অনুশীলন করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি জড়িত হওয়া মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান ও সৌদি আরবে মোতায়েন ৪০ হাজার মার্কিন সেনাকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়েছে ওয়াশিংটন।
এখন বিশ্বের নজর ইরানের দিকে— যুক্তরাষ্ট্রের এই সরাসরি আগ্রাসনের কী জবাব দেবে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান? শীর্ষ নেতা হারিয়ে পুনরায় নেতৃত্ব গুছিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পরবর্তী পদক্ষেপ ঘিরে জল্পনা তুঙ্গে।
১. ক্ষেপণাস্ত্র হামলা: ইরানের মোক্ষম প্রতিরোধ অস্ত্র
ইরানের সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র হলো তার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ধারণা করা হচ্ছে, ইসরায়েলকে যেমন শত শত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে চমকে দিয়েছিল, এবারও একই কৌশল অবলম্বন করতে পারে তেহরান।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যের ঘাঁটিগুলোতে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রস্তুতি শনাক্ত করেছে মার্কিন গোয়েন্দারা। ইরাক ও সিরিয়ায় থাকা মার্কিন ঘাঁটিগুলো প্রথম লক্ষ্য হতে পারে। এরপর আরব অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিগুলোকেও নিশানা করা হতে পারে।
তবে অতীত অভিজ্ঞতা বলে, ইরানের হামলা যতটা নাটকীয়, ততটা কার্যকর নয়। ২০২০ সালে সোলাইমানি হত্যার প্রতিশোধে ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলায় কোনো সেনা নিহত না হলেও ১১০ জন আহত হন। যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী জাহাজও ইরানের সম্ভাব্য লক্ষ্য হতে পারে।
২. ইরানের সামরিক সক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা
ইরান যদিও অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মুখোমুখি, তবে তার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সুপারসনিক গতিতে আঘাত হানে— যা থামানো অত্যন্ত কঠিন। তবুও যুক্তরাষ্ট্রের প্যাট্রিয়ট ও THAAD প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন রয়েছে।
ইসরায়েলি হামলায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফলে এখন তাদের একসঙ্গে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার সক্ষমতা অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ইরান এখন হামলার আগে বেশি কৌশলী এবং সীমিত পরিসরে আঘাত হানছে।
৩. মিত্র গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে প্রতিশোধ
ইরান বরাবরই হিজবুল্লাহ, হামাস, হুতি বিদ্রোহী ও কাতাইব হিজবুল্লাহর মতো মিত্র গোষ্ঠীগুলোকে ‘প্রথম প্রতিরক্ষা লাইন’ হিসেবে ব্যবহার করে। ইসরায়েলি বাহিনীকে ব্যস্ত রেখে তারা তেহরানকে রক্ষা করে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য স্বস্তির বিষয় হলো, গত এক বছরে এই প্রক্সিগুলোর বড় অংশ দমন করেছে ইসরায়েল।
তবে এখন হামলার বড় অংশ সরাসরি ইরান থেকেই হচ্ছে, যা ইঙ্গিত দেয়—প্রক্সি ব্যবস্থার ওপর নির্ভরতা কমেছে।
৪. হরমুজ প্রণালি: তেহরানের কৌশলগত ট্রাম্প কার্ড
বিশ্বের মোট ব্যবহৃত তেলের এক-পঞ্চমাংশই হরমুজ প্রণালি হয়ে যায়। ইরান চাইলে এই পথ মাইন, মোবাইল লাঞ্চার ও ড্রোন ব্যবহার করে বন্ধ করতে পারে। অতীতে ‘ট্যাংকার যুদ্ধের’ সময় এ কৌশল ব্যবহার করেছিল তারা।
এই সম্ভাবনার কথা ভেবেই মার্কিন বিমানবাহী জাহাজ ইউএসএস নিমিটজ হরমুজে মোতায়েন রয়েছে। তবে এই পথ বন্ধ হলে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, চীনসহ বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক ঝড় উঠবে— যা তেহরানকে আন্তর্জাতিকভাবে আরও বিচ্ছিন্ন করতে পারে।
৫. তেলক্ষেত্রে হামলা: ‘শেষ অস্ত্র’ হিসেবে জ্বালানির যুদ্ধ
ইরান যদি আত্মরক্ষার শেষ পথে যায়, তবে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের তেল স্থাপনা ইরানের প্রধান লক্ষ্য হতে পারে। ২০১৯ সালে আবকায়েকে ইরান-সমর্থিত হুতির হামলায় সৌদি তেলের অর্ধেক উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। একই ধরনের হামলা আবার চালাতে পারে ইরান।
আবকায়েক প্রতিদিন প্রায় ৭০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল প্রক্রিয়াজাত করে, যা সৌদির মূল সক্ষমতার বড় অংশ। এসব স্থাপনাকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হলে তা বিশ্ববাজারে ব্যাপক তেলের সংকট সৃষ্টি করতে পারে।
৬. সাইবার যুদ্ধ: মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরির হাতিয়ার
ইরান এর আগেও সাইবার মাধ্যমে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক-বেসামরিক অবকাঠামোতে হামলা চালিয়েছে। হ্যাকিং, তথ্য চুরি, জিপিএস বিভ্রাট এবং মনস্তাত্ত্বিক অপারেশন চালিয়ে শত্রুপক্ষকে দুর্বল করার চেষ্টা করে তারা।
CyberAv3ngers নামের একটি হ্যাকার গ্রুপের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ১ কোটি ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করেছে। মার্কিন কর্তৃপক্ষের মতে, হরমুজ প্রণালিতে জিপিএস সংকেত বিকৃত করে ইরান কয়েকটি ট্যাংকারকে সংঘর্ষে ফেলে দেয়।
মার্কিন হামলার পাল্টা জবাবে ইরান সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, প্রক্সি গোষ্ঠী, হরমুজ প্রণালি, তেলক্ষেত্র ও সাইবার যুদ্ধ— এই পাঁচটি ফ্রন্টেই সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারে। তবে প্রতিটি পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা জবাবের আশঙ্কা থাকায়, ইরানকে খুব হিসেব করে চলতে হবে। এই উত্তেজনার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি এখন এক অনিশ্চিত ও আতঙ্কজনক দিকেই এগোচ্ছে।
সিদ্দিকা/
আপনার জন্য নির্বাচিত নিউজ
- যাকে প্রধানমন্ত্রী করতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা
- অবশেষে বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা পুনরায় চালু
- সয়াবিন তেলের দাম কমে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন
- সরকারি কর্মচারীদের বেতনের ৫০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা
- হঠাৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য জরুরি নির্দেশনা
- সরকারি চাকরিজীবীদের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন কত টাকা বেতন বাড়লো
- মৃত্যুর পর ভাই বোনের আর কখনো দেখা হবে না, ইসলাম কি বলে
- বড় সুখবর দিলো সংযুক্ত আরব আমিরাত
- বাংলাদেশে আজ ১৮, ২১, ২২ ক্যারেট সোনার দাম
- ইরানের শিয়ারা কি মুসলমান নয়, যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ
- ইরানের বিজয় নিয়ে যা বলেছেন মহানবী (সা)
- কমোডে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করলে গুনাহ হবে কিনা
- পুরুষদের গোসল ফরজ হলে যেসব কাজ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ
- ইরানের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিল চীন
- বাংলাদেশের শীর্ষ ১০ নিরাপদ ব্যাংক