ইরান কেন পশ্চিমাদের আতঙ্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ভারত, এমনকি পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়ার মতো দেশগুলো ইতোমধ্যেই পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত। কেউ এসব অস্ত্রের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছে, কেউ আবার গোপনে এগুলো তৈরি করছে বলে দাবি করা হয়। তবে ইরান যখন পারমাণবিক কর্মসূচি পরিচালনা করে, তখনই শুরু হয় পশ্চিমাদের কড়া প্রতিক্রিয়া—নিষেধাজ্ঞা, হামলার হুমকি, এমনকি যুদ্ধের ইঙ্গিতও।
প্রশ্ন হলো—অন্য দেশের অস্ত্র থাকলে সমস্যা নেই, কিন্তু ইরানকে নিয়ে এত ভয় ও অবিশ্বাস কেন?
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটি শুধুই নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়, বরং এর পেছনে আছে রাজনৈতিক পক্ষপাত ও পশ্চিমা বিশ্বের দ্বিমুখী মানদণ্ড।
কে কতটা পারমাণবিক শক্তিধর?
বর্তমানে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়ার আছে প্রায় ৬,০০০ অস্ত্র, যার মধ্যে ১,৫৮৪টি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। যুক্তরাষ্ট্রের আছে ৫,৪০০ অস্ত্র, যার মধ্যে ১,৭৪৪টি প্রস্তুতাবস্থায়। চীনের কাছে আনুমানিক ৫০০টি, ফ্রান্সের ২৯০টি, যুক্তরাজ্যের ১২০টি অস্ত্র রয়েছে। ভারতের হাতে আছে প্রায় ১৬০টি এবং পাকিস্তানের কাছে রয়েছে আনুমানিক ১৭০টি পারমাণবিক অস্ত্র।
উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র সংখ্যা ২০-৩০টি হলেও তাদের কাছে অস্ত্র তৈরির উপাদান রয়েছে আরও বেশি। ইসরায়েল তাদের অস্ত্রের কথা কখনো স্বীকার না করলেও ধারণা করা হয়, তাদের কাছে ১০০টির মতো পরমাণু অস্ত্র রয়েছে।
তাহলে ইরানকে নিয়ে এত উদ্বেগ কেন?
১৯৬৮ সালের এনপিটি (NPT) বা পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে ইরান। চুক্তি অনুযায়ী, কোনো নতুন দেশ পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারবে না, বিদ্যুৎ বা গবেষণার মতো শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহার করতে পারবে। ভারত, পাকিস্তান ও ইসরায়েল এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি। ফলে আন্তর্জাতিক আইনের বিচারে তারা “চুক্তি ভঙ্গকারী” নয়, যদিও নৈতিক প্রশ্ন থেকেই যায়।
ইরান এনপিটিতে স্বাক্ষর করলেও পশ্চিমারা তাদের কার্যক্রমে সন্দেহ করে। বিশেষ করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি ও ইসলামি বিপ্লবী নীতির প্রতি দীর্ঘদিনের অবিশ্বাস রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের।
তাদের ধারণা—ইরান একবার পারমাণবিক বোমা বানালে তা আত্মরক্ষার চেয়ে আক্রমণের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে পারে। ইরানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে ফিলিস্তিন, লেবাননের হিজবুল্লাহসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন প্রতিরোধ আন্দোলনের সঙ্গে। ইসরায়েলের অস্তিত্বকেও চ্যালেঞ্জ জানায় ইরান। ফলে পশ্চিমাদের দৃষ্টিতে ইরান শুধু আরেকটি পারমাণবিক শক্তি নয়, বরং একটি “বিপদ”।
পশ্চিমাদের দ্বিমুখী নীতির অভিযোগ
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান কখনোই প্রকাশ্যে পারমাণবিক বোমা তৈরি করেনি, অথচ বছরের পর বছর ধরে তাদের উপর রয়েছে নিষেধাজ্ঞা, বিজ্ঞানীদের গুপ্তহত্যা, সাইবার হামলা ও অর্থনৈতিক চাপ।
অন্যদিকে, ভারত গোপনে পারমাণবিক পরীক্ষা চালালেও পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের পারমাণবিক চুক্তি হয়েছে। ইসরায়েলের গোপন অস্ত্র কর্মসূচি নিয়েও পশ্চিমারা কখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উত্তর কোরিয়া একের পর এক পরীক্ষা চালালেও তাদের সঙ্গে কার্যকর আলোচনার চেষ্টা দেখা যায়।
সেই তুলনায় ইরান, যাদের কর্মসূচি এখনও অস্ত্র পর্যায়ে পৌঁছায়নি, বরং বৈজ্ঞানিক পর্যায়ে সীমাবদ্ধ—তাদের নিয়ে এই কঠোরতা অনেকের চোখে পক্ষপাতদুষ্ট।
বর্তমান পরিস্থিতি
আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থা (IAEA) জানিয়েছে, ইরান বর্তমানে উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা চাইলে মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অস্ত্র তৈরির পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। তবে তারা এখনো কোনো অস্ত্র তৈরি করেনি বলে স্বীকার করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ব রাজনীতিতে “কে শক্তিশালী, সে-ই নিয়ম বানায়”—এই নীতি যেন ইরানের ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে প্রয়োগ হচ্ছে। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যতটা ভয় দেখানো হচ্ছে, অন্যদের বেলায় ততটা সতর্কতা দেখা যায় না। ফলে প্রশ্ন থেকেই যায়—পরমাণু অস্ত্রের বিপদ কি শুধু ইরান থেকেই, নাকি পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গিই এখানে মূল সমস্যা?
সোহাগ/
আপনার জন্য নির্বাচিত নিউজ
- বাংলাদেশকে সতর্কবার্তা পাঠাল ইরান
- পায়খানার রাস্তার লোম কাটা জায়েজ কিনা
- সহবাসের পর বীর্য বাইরে ফেললে গুনাহ হয় কি
- ২৪ ঘন্টার মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ কমে গেল জ্বালানি তেলের দাম
- কোন রক্তের গ্রুপে গরম বা শীত বেশি লাগে
- স্বর্ণের বাজারে বড় ধাক্কা, লাফিয়ে কমছে দাম
- বাংলা ১০ সিনেমায় বাস্তবেই সহবাস করতে হয়েছে নায়ক-নায়িকাদের
- ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র দিতে প্রস্তুত যেসব দেশ
- অবশেষে ভারতীয় ভিসা নিয়ে এলো বড় সুখবর!
- নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকিতে বাংলাদেশ!
- মৃত্যুর আগে মানুষ যে স্বপ্ন বার বার দেখে
- বাংলাদেশের বাজারে আজ ১ ভরি সোনার দাম
- লাফিয়ে বাড়ল জ্বালানি তেলের দাম
- চাকরিতে থাকা বা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বড় সুখবর
- অবশেষে বাংলাদেশকে সুখবর পাঠাল ভারত