বাবা-মা বিক্রি করেন চা, মেয়ে দেশসেরা ফুটবলার

ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি আগ্রহ ছিল সাগরিকা। তিনি প্রথমে বঙ্গমাতা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে খেলা শুরু করেন। এরপর রাঙ্গাটুঙ্গি স্টেডিয়ামে ফুটবলের প্রেমে পড়েন সাগরিকা। কিন্তু ফুটবল প্রেম ধীরে ধীরে একঘেয়ে হয়ে গেল। গ্রামের মানুষের অপমান তাকে শুষে নিতে হয়। মেয়েদের ফুটবল খেলতে দেখে সাগরিকাকে গ্রামের মানুষের নানা অপমান এবং প্রতিবেশীদের নানা বাধা-বিপত্তি ও সমালোচনা হজম করতে হয়েছে, থাম্বস আপ দেখিয়ে। এই ফুটবলের জাদু দেখিয়ে সাফল্যের মুখ দেখলেন সাগরিকা
সাগরিকা ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার রাঙ্গাটুঙ্গী গ্রামের লিটন আলী ও আঙ্গোয়ারা বেগমের মেয়ে। উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে বড় হয়েছেন তিনি। সে ফুটবল খেলা শুরু করার পর গ্রামের অনেকেই তাকে নিয়ে মজা করে। সাগরিকার বাবা তাদের কথায় ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তাকে মাঠে যেতে নিষেধ করে এবং ঘরে তালা দেয়। তাদের উপেক্ষা করে মাঠে নামেন সাগরিকা। একপর্যায়ে সাগরিকার বাবা-মায়ের অনুরোধে গুরুত্ব দিতে হয় রাঙাটাঙ্গী ফুটবল দলের কোচ তাজুল ইসলামকে। ফুটবল অনুশীলনে গিয়েছিলেন সাগরিকা।
ফিফা অনূর্ধ্ব-১৯ মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে ওই ম্যাচে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ শেষ মুহূর্তে সাগরিকার গোলে সমতায় ফেরে। তখন থেকেই সাগরিকা বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। যারা একসময় উপহাস করত তারাই এখন উপহার দিচ্ছে। এখন এই সাগর পুরো গ্রামের গর্ব। ফুটবল খেলার জেদের কারণে দীর্ঘ একমাস ধরে মেয়ের সঙ্গে কথা না বলা বাবার মুখ উজ্জ্বল করলেন কন্যা সাগরিকা।
রানীশংকৈল উপজেলার রাঙ্গাটুঙ্গী গ্রামে অন্যের জমিতে বসবাস করেন সাগরিকা। ওই উপজেলার বলিদ্বারা এলাকায় চায়ের দোকান চালিয়ে সংসার চালান তার বাবা লিটন আলী। তার দুই সন্তানের মধ্যে সাগরিকাই ছোট। আর ছেলে মোহাম্মদ সাগর একটি ইটের ভাটায় কাজ করেন। অভাবের সংসারে মেয়ের সফলতায় হাসি ফুটেছে তাদের। সেই সঙ্গে গ্রামবাসীর গর্ব হয়ে উঠেছেন সাগরিকা। প্রতিনিয়ত তার বাসায় ছুটে আসছেন অনেকেই। তবে নিজের কোনো জমি বা বাসা না থাকায় আনন্দের মধ্যেও যেন রয়েছেন কিছুটা কষ্ট। অন্যের জমিতে তোলা ছোট্ট সেই খুপরির ঘরে কীভাবে বসতে দেবেন অন্যদের তাই সাগরিকার বন্ধুদের বাড়ি আনার আবদারে সায় মিলছে না তাঁর মায়ের।
সাগরিকার সফলতা দেখে মুগ্ধ খুশি গ্রামবাসী। তার ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়ার চিন্তা করে তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহবান স্থানীয়দের।
সাগরিকার মা আনজুয়ারা বেগম বলেন,মেয়েকে বিয়ে দিতে পারবো না। কেন ও মেয়েকে ছোট জামা-কাপড়ে পড়ে খেলতে দিতে হবে। লাজ-লজ্জা সব উঠে গেল৷ এরকম নানা ধরনের কথা শোনতে হয়েছে। মেয়েকে বাধা দেওয়ার পরও সে বাদ দেয়নি৷ এখন মেয়ে আমার দেশ-বিদেশে খেলে সফলতা আর সুনামে বয়ে এনেছে। আমাদের গ্রামের এখন সবাই গর্ব করে তাকে নিয়ে। আমার মেয়ের জন্য আপনারা সবাই দোয়া করবেন। সে যাতে আরো ভালো খেলতে পারে দেশের নাম উজ্জ্বল করতে পারে।
আবেগ প্রবণ হয়ে ফুটবলার সাগরিকা বলেন, শুরুতে অনেক মানুষের নানা ধরনের কটু কথা শোনতে হয়েছে। ফুটবলের কারণে এক মাস ধরে বাবা আমার সঙ্গে কথা বলেননি৷ সব ভুলে এখন তাদের আদরের হতে পেরেছি৷ বাকীটা সময় নিজের পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে দেশের সুনাম বয়ে আনতে চায়। পাশাপাশি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করব যাতে আমার পরিবারের পাশে তারা দাঁড়ান৷
রাঙ্গাটুঙ্গি মহিলা ফুটবল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, যারা এ মাঠে খেলেন তারা সবাই একদম নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা৷ কেউ দিনমজুরি, কেউ চায়ের দোকান কেউবা ভ্যান চালিয়ে পরিবার পরিচালনা করেন৷ সাগরিকার বাবা-মা চায়ের দোকান করে থাকেন৷ নিজের কোনো বসতভিটা নেই। সরকারি জায়গায় তারা থাকেন৷ আমি তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রশাসনকে বিনীতভাবে আহবান করছি৷
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, রাঙ্গাটুঙ্গি মাঠ থেকে জাতীয় পর্যায়ে অনেক নারী ফুটবলার খেলছে। তার মধ্যে সাগরিকা চমক দেখিয়েছে। আমরদ তার পারিবারিক বিষয়ে অবগত হয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷
আপনার জন্য নির্বাচিত নিউজ
- কপালে কালো দাগ হওয়া কিসের লক্ষণ
- দাসী রেখে সহবাস: ইসলাম কী বলে
- সুদানে বিমান হামলায় নিহত ৪০ আমিরাতি ভাড়াটে সেনা
- দেশের বাজারে আজ এক ভরি সোনার দাম
- হাত-পায়ের এই ৭ লক্ষণ কিডনি নষ্টের ইঙ্গিত
- নতুন প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে আসছে আওয়ামী লীগ
- তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত: বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা বাদ আনিসার
- বাংলাদেশ বনাম কোরিয়া, লাইভ দেখবেন যেভাবে
- আওয়ামী লীগ নেতাদের আশ্রয় নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে মমতা
- বাংলাদেশে আজ এক ভরি ১৮, ২১, ২২ ক্যারেট সোনার দাম
- ৮০ মিনিটে কোরিয়ার বিপক্ষে ১-৩ গোলে পিছিয়ে বাংলাদেশ
- স্টোকের এক মাস আগে শরীর যে ৫ লক্ষণ দেখায়
- ৯০ মিনিটে কোরিয়ার বিপক্ষে ১-৬ গোলে হারল বাংলাদেশ
- সিজারে সন্তান নিলে কি জান্নাত মিলবে না
- ৯০ বছর ধরে হাতুড়ির বদলে গ্রেনেড ব্যবহার!