
সোহাগ আহমদে
সিনিয়র রিপোর্টার
ডাকসু নির্বাচনে শিবিরের গুপ্ত কৌশলই কি জয়ের কারণ

দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের বিশাল জয় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই এই ফলাফলকে অভাবনীয় বলে মনে করছেন, কারণ অতীতে শিবিরের বিরুদ্ধে নানা ধরনের প্রচারণা ও দমন-পীড়ন ছিল। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রগতিশীল বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা কেন শিবিরকে বেছে নিলেন, এর পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে।
শিবিরের জয়: কারণ ও কৌশল
১. দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সহানুভূতি: আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছাত্রশিবিরের উপর ব্যাপক দমন-পীড়ন চালানো হয়, যার ফলে তারা প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়। এই দমন-পীড়নের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিবিরের প্রতি এক ধরনের সহানুভূতি তৈরি হয়। যখন তারা দেখল যে এত নির্যাতনের পরেও শিবির তাদের আদর্শ থেকে সরে আসেনি, বরং গোপনে নিজেদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, তখন তাদের প্রতি মানুষের আগ্রহ ও বিশ্বাস বাড়তে থাকে।
২. জুলাই বিপ্লবের অবদান: জুলাই অভ্যুত্থানের সময় শিবিরের অনেক নেতাকর্মী সামনের সারিতে থেকে আন্দোলন করেছে। কিন্তু পরবর্তীতে ছাত্রদল ও অন্যান্য বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো শিবিরের অবদানকে অস্বীকার করার চেষ্টা করে। উদাহরণস্বরূপ, সাদিক কায়েম আন্দোলনের একজন গুরুত্বপূর্ণ সমন্বয়ক হওয়া সত্ত্বেও আসিফ মাহমুদের বইয়ে তার ছবি ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া হয়। এই 'মাইনাস' করার প্রচেষ্টা শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে নেয়নি। তারা উপলব্ধি করে যে, রাজনীতির পুরোনো ধারায় ফিরে গিয়ে অন্যকে বাদ দেওয়ার এই সংস্কৃতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পছন্দ করে না।
৩. ট্যাগিংয়ের রাজনীতির প্রত্যাখ্যান: শিক্ষার্থীরা আওয়ামী আমলের 'ট্যাগিং' রাজনীতির বিরুদ্ধে ছিল। তারা আশা করেছিল, স্বৈরাচারের পতনের পর এই ধরনের রাজনীতি বন্ধ হবে। কিন্তু ছাত্রদল ও অন্যান্য সংগঠনগুলো যখন আবার শিবিরকে 'পাকিস্তানপন্থী' বা 'রাজাকার' বলে ট্যাগিং করা শুরু করে, তখন শিক্ষার্থীরা বিরক্ত হয়। অন্যদিকে, শিবির এই ধরনের ট্যাগিংয়ের জবাবে আক্রমণাত্মক না হয়ে নিজেদের কাজ এবং আদর্শের উপর ফোকাস করে। তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করে, বিভিন্ন আলোচনা সভা ও প্রদর্শনী আয়োজন করে, এবং আধুনিক ইসলামের একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরে।
৪. আদর্শভিত্তিক ও স্বচ্ছ রাজনীতি: ছাত্রশিবিরের 'গুপ্ত রাজনীতি'কে অনেকে নেতিবাচকভাবে দেখলেও, এটি তাদের আদর্শের দৃঢ়তা প্রমাণ করে। পদ-পদবীর জন্য রাজনীতি না করে গোপনে আদর্শের চর্চা করা কর্মীদের মধ্যে একটি স্বচ্ছ ভাবমূর্তি তৈরি করে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেখেছে যে, অন্য অনেক ছাত্র সংগঠনের নেতারা যেখানে পদ-পদবীর জন্য চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এবং অনৈতিক কাজে জড়িয়েছে, সেখানে শিবিরের নেতারা নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে আদর্শভিত্তিক রাজনীতি করেছে। এটি শিক্ষার্থীদের মনে এক নতুন ধারার রাজনীতির প্রত্যাশা জাগিয়েছে।
ছাত্রদলের পরাজয়ের কারণ
ছাত্রদল একটি বড় ছাত্র সংগঠন হওয়া সত্ত্বেও এই নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে হেরে যাওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে:
* পুরোনো রাজনৈতিক প্যাটার্ন: ছাত্রদল নিজেদের রাজনৈতিক প্যাটার্ন পরিবর্তন করতে পারেনি। তারা আওয়ামী লীগের মতোই পুরোনো ধারার রাজনীতি, যেমন—অন্যকে ট্যাগিং করা, টেন্ডারবাজি, হামলা-মামলা ইত্যাদি থেকে বের হতে পারেনি। দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এখনো এসব অভিযোগ রয়েছে।
* ভয় ও অনাস্থা: দীর্ঘদিনের ছাত্রলীগের রাজনীতি দেখার পর শিক্ষার্থীরা ছাত্রদলের মধ্যে কোনো নতুনত্বের আভাস পায়নি। ছাত্রদলের কর্মকাণ্ডে পুরোনো ধারার সহিংসতার ভয় তাদের মধ্যে থেকে যায়নি।
জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব
ডাকসু নির্বাচনের এই ফলাফল জাতীয় রাজনীতিতে এক নতুন বার্তা দিতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশের জনগণের তুলনায় কিছুটা বেশি সচেতন। তারা নীরবে ব্যালটের মাধ্যমে তাদের মত প্রকাশ করেছে, যা হয়তো মুখে প্রকাশ করতে তারা এখনো স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না।
আরও পড়ুন- ডাকসু নির্বাচন: ছাত্রদল ছাড়া কত ভোট বেশি পেলো শিবির
আরও পড়ুন- ডাকসুর নির্বাচনে জয়ী হয়ে যে ঘোষণা দিলেন সাদিক কায়েম
ডাকসুর এই ফলাফল প্রমাণ করে যে, সাধারণ শিক্ষার্থীরা পুরোনো ধারার রাজনীতি এবং ট্যাগিংয়ের সংস্কৃতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা এমন নেতৃত্ব চায় যারা কাজের উপর ফোকাস করবে এবং আদর্শভিত্তিক রাজনীতি করবে। যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের জাতীয় রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে, তাই এই নির্বাচন ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনেও এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সোহাগ আহমেদ/
আপনার জন্য নির্বাচিত নিউজ
- এক লাফে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন দামে সয়াবিন
- ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল: সর্বশেষ তথ্য যা পাওয়া গেল
- বেতন অনুযায়ী কে কত পাবেন মহার্ঘ ভাতা
- আগামীকাল ব্রাজিল বনাম বলিভিয়া ম্যাচ: সরকারি যেভাবে দেখবেন
- যে কারনে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পাম্প ম্যানেজারকে হত্যা করে রতন
- ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগে যে সুখবর পেলেন উমামা
- পালানোর আগে চিঠিতে যা লিখেছিলেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী
- ডাকসুর ভোটগণনা চলছে: ফলাফল মিলবে যখন
- ডাকসুর নির্বাচনের ফলাফল কখন পাওয়া যাবে জানালেন রিটার্নিং অফিসার
- আর্জেন্টিনা বনাম ইকুয়েডর ম্যাচ: মোবাইলে কিভাবে দেখবেন
- ভিপি-জিএস দুই পদে কারা বিজয়ী জানালেন ইলিয়াস হোসেন
- ৯০ মিনিটের খেলা শেষ: বলিভিয়া বনাম ব্রাজিল ম্যাচ
- গোপনে কিডনির নষ্ট হচ্ছে নাতো: জেনে নিন ৬ টি লক্ষন
- দেশের বাজারে নতুন করে বাড়ল সোনার দাম
- শেষ হলো ৯০ মিনিটের খেলা: ইকুয়েডর বনাম আর্জেন্টিনা