আয়শা সিদ্দিকা
সিনিয়র রিপোর্টার
বজ্রপাত সম্পর্কে কী বলে কোরআন ও বিজ্ঞান
নিজস্ব প্রতিবেদক: আপনি কি জানেন, পৃথিবীতে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১০০ বার বজ্রপাত ঘটে? প্রতিবছর প্রায় ২৪ হাজার মানুষ বজ্রপাতের কারণে মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়া, বজ্রপাত মানুষের দৃষ্টিশক্তিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। আধুনিক বিজ্ঞান বলছে যে বজ্রপাতের আলো এতটাই তীব্র যে এটি চোখের রেটিনাকে ক্ষণিকের জন্য অন্ধ করে দিতে পারে। বিজ্ঞানীরা এ অবস্থাকে ‘ফ্ল্যাশ ব্লাইন্ডনেস’ বা তাৎক্ষণিক অন্ধত্ব হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে যে বজ্রপাতের প্রতিটি ঝলক ১০ কোটি ভোল্টের বেশি বৈদ্যুতিক শক্তি তৈরি করতে সক্ষম। বজ্রপাতের সময় সৃষ্ট আলো সূর্যের থেকেও প্রায় পাঁচ গুণ বেশি উজ্জ্বল হতে পারে। যদি আমাদের চোখ সরাসরি এই আলো গ্রহণ করে, তবে দৃষ্টিশক্তি স্থায়ীভাবে হারানোর আশঙ্কা থাকে। তবে এই তথ্য কি শুধুমাত্র আধুনিক আবিষ্কার? না, ১৪০০ বছর আগে কোরআনে বজ্রপাতের এমন বিপজ্জনক প্রভাবের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
মহান আল্লাহ তাআলা সূরা বাকারার ২০ নম্বর আয়াতে বলেছেন:“যখন বিদ্যুৎ চমকে ওঠে, তারা তার আলোতে চলতে থাকে, আর যখন অন্ধকার নেমে আসে, তারা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের শ্রবণ শক্তি ও দৃষ্টি শক্তি কেড়ে নিতে পারেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশক্তিমান।"
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে ইবনে কাসিরে বলা হয়েছে, মুনাফিকদের দুই ধরনের শ্রেণি—একটি হলো খাঁটি মুনাফিক, এবং অন্যটি সন্দেহের মধ্যে দোদুল্যমান মুনাফিক। সূরা বাকারার এই আয়াতে বিদ্যুৎ ও বজ্রপাতের উপমা দিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির মুনাফিকদের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে, যারা কখনো ঈমানের আলোয় আলোকিত হয়, আবার কখনো কুফরীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়।
তবে প্রশ্ন হলো, কোরআনের এই বর্ণনাটি কি শুধুমাত্র উপমা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, নাকি এর পেছনে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে? উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ফ্ল্যাশ ব্লাইন্ডনেস হলো সাময়িক বা স্থায়ী অন্ধত্ব, যা তীব্র আলো চোখে পড়ার ফলে ঘটে। এর মধ্যে রয়েছে নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণ, ফ্ল্যাশ ফটোগ্রাফি এবং বজ্রপাত ইত্যাদি। আধুনিক বিজ্ঞানীরা বলেন, ফ্ল্যাশ ব্লাইন্ডনেস হয় তখনই, যখন কোন তীব্র আলো চোখের রেটিনাকে অস্থায়ীভাবে দুর্বল করে দেয়, এবং সেই আলো যদি খুব শক্তিশালী হয়, তবে অন্ধত্ব স্থায়ীও হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বজ্রপাতের সময় যে আলো নির্গত হয়, তা প্রায় ১০০০ মিলিয়ন থেকে ১০০ হাজার মিলিয়ন ক্যান্ডেলা পর্যন্ত উজ্জ্বলতা তৈরি করে—যা আমাদের চোখের স্বাভাবিক সহ্য ক্ষমতার অনেক ঊর্ধ্বে। সুতরাং যারা বজ্রপাতের কাছে থাকেন, তাদের জন্য ফ্ল্যাশ ব্লাইন্ডনেস বা তাৎক্ষণিক অন্ধত্বের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। কখনো কখনো এই অন্ধত্ব দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
এই দীর্ঘস্থায়ী অন্ধত্বের কারণ হলো বজ্রপাতের তাপমাত্রা। সাধারণত বজ্রপাতের ঝলক তৈরি করে এমন তাপমাত্রা প্রায় ৩ হাজার কেলভিন পর্যন্ত হতে পারে, যা সূর্যের পৃষ্ঠের থেকেও অনেক বেশি। এই তাপমাত্রা চোখের রেটিনায় ফটোকেমিক্যাল বার্ন তৈরি করতে পারে, যা স্থায়ী অন্ধত্বের কারণ হতে পারে। এছাড়া, বজ্রপাতের সময় ইলেকট্রোম্যাগনেটিক পালস (ইএমপি) সৃষ্টি হয়, যা মস্তিষ্ক এবং চোখের স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব ফেলতে পারে এবং দৃষ্টিশক্তির উপর নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে।
২০০৩ সালে ‘জার্নাল অফ নিউরোলজি’-তে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বজ্রপাতে আক্রান্ত কিছু রোগীর দীর্ঘস্থায়ী চোখের ক্ষতি হয়েছে। ১৯৯৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বজ্রপাতের শিকার এক রোগীর রেটিনাল বার্ন পাওয়া গেছে, যা তাকে স্থায়ীভাবে দৃষ্টিহীন করে দিয়েছে। ২০১২ সালে ‘জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল নিউরোসায়েন্স’-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বজ্রপাতে আক্রান্তদের মধ্যে ২০% রোগীর চাক্ষুষ সমস্যা তৈরি হয়, যার মধ্যে রেটিনাল ডিটাচমেন্ট এবং অপটিক নার্ভ ড্যামেজ ছিল উল্লেখযোগ্য।
এখন যদি কোরআনের আয়াতটি খেয়াল করি, সেখানে বলা হচ্ছে, বজ্রপাত তাদের দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিতে পারে—এবং বিজ্ঞানও বলছে, বজ্রপাতের তীব্র আলো ও তাপ আমাদের রেটিনাকে আঘাত করতে পারে। আরো আশ্চর্যের বিষয় হলো, আয়াতের শেষে বলা হয়েছে যে আল্লাহ ইচ্ছা করলে এই অস্থায়ী অন্ধত্ব স্থায়ীও করতে পারেন। বাস্তবতায় আমরা তা দেখতে পাচ্ছি।
তাহলে বলা যায়, কোরআনের এই বর্ণনা শুধু রূপক নয়, বরং এটি বিজ্ঞানসম্মত বাস্তবতাও। দেড় হাজার বছর আগে, যখন আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা কিংবা চিকিৎসা বিজ্ঞানের অস্তিত্ব ছিল না, তখন কোরআনে বজ্রপাতের এমন নিখুঁত বর্ণনা সত্যিই বিস্ময়কর। আজকের বিজ্ঞান সেই সত্যকেই প্রমাণ করেছে।
আসুন, আমরা কোরআনের এই জ্ঞানের গভীরতা সম্পর্কে আরো চিন্তা করি।
আয়শা সিদ্দিকা/
আপনার জন্য নির্বাচিত নিউজ
- নতুন পে স্কেল: বেতন দ্বিগুণ, বাতিল হচ্ছে যেসব ভাতা
- ২০ গ্রেড থাকছে না: সরকারি বেতন কাঠামোতে বড় পরিবর্তন আনছে পে কমিশন
- আজ থেকে কমে বিক্রি হচ্ছে সোনা, ভরি প্রতি ২২ ক্যারেটের দাম কত
- বেতন বাড়লেও সরকারি কর্মীদের জন্য দ্বিগুণ ধাক্কা, বাড়ছে আয়কর ও বাড়িভাড়া
- খরচ কমে গেল: বিকাশ, নগদ, রকেটে সরাসরি আন্তঃলেনদেন চালু
- কবে ঘোষণা হচ্ছে নতুন পে স্কেল; যা জানাচ্ছে পে কমিশন
- নতুন পে স্কেলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবাবদিহিতা বাধ্যতামূলক!
- পে-কমিশনের কাছে ১১-২০ ফোরামের ১৩ টি গ্রেড ও সর্বনিম্ন ৩২,০০০ টাকা বেতনের দাবি
- আজকের সোনার বাজারদর: ৩ নভেম্বর ২০২৫
- নতুন পে-স্কেলে যেভাবে ব্যাপকভাবে বাড়বে জনদুর্ভোগ
- নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে সর্বশেষ কী জানা গেল
- শেষ হলো পে কমিশনের মতবিনিময় পর্ব: কবে আসছে নতুন পে-স্কেলের সুখবর
- পে স্কেল বাস্তবায়ন জানুয়ারিতে: ১৫ লাখ কর্মীর বেতন দ্বিগুণ
- দ্বিগুণ হচ্ছে সরকারি বেতন: ২০২৬ থেকে নতুন পে স্কেল, চাপে ৪ কোটি চাকরিজীবী
- যত বাড়তে পারে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন
