লাল-সবুজের জার্সিতে পরিবারের স্বপ্ন পূরণ করেছেন অনিক

হবিগঞ্জ জেলা অনুর্ধ ১৯ দলে খেলার মাধ্যমে ক্রিকেটে তার পথ শুরু করেন অনিক। অল্প সময়েই বিকেএসপিতে নিজের ক্রিকেট প্রতিভায় জায়গা করে নেন তিনি। তারপর প্রথম ডিভিশনে, প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেটসহ সব দলের বয়সের ওপর ভিত্তি করে জাতীয় দলের জার্সি।
গত বুধবার (২২শে মার্চ) আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন তিনি। আইরিশদের বিপক্ষে এই সিরিজে তিনি বিবেচনায় এসেছেন মূলত ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্স দিয়ে, এমনটাই জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। তিনি বলেন, ‘জাকেরকে আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্স বিবেচনা করে নিয়েছি।'
দলে সুযোগ পাওয়ার পর নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে ঢাকা পোস্টকে অনিক বলেন, 'আমার পরিবারের সমর্থনের জন্যই আজ আমি এতটুকু আসতে পেরেছি। আমার বড়ভাই সাকের আলী অপুর হাত ধরেই আমার ক্রিকেটে যাত্রা। এছাড়াও আমার বোন সাবেক প্রমীলা ক্রিকেটার শাকিলা ববি আমাকে উৎসাহ-উদ্দীপনা যুগিয়েছেন। মূলত আমার পরিবারের জন্যই আমার এতটুকু আসা। নইলে সবকিছুই অসম্ভব ছিল।'
'বিগত কয়েক মৌসুম ধরে আমি বিভিন্ন লিগে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করেছি। তার জন্যই হয়তবা নির্বাচকরা আমাকে বিবেচনা করেছেন। জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া সব খেলোয়াড়ের জন্যই খুবই আনন্দের। আমি যেন জাতীয় দলের জন্য ভাল কিছু করতে পারি সেজন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।'
২০১৬-১৭ মৌসুমে জাতীয় ক্রিকেট লিগের সিলেট বিভাগের হয়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলেন তিনি। সেই বছরই অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিশ্বকাপে খেলেছিলেন অনিক। পরের বছর, ঢাকার লীগে দোলেশ্বর স্পোর্টস ক্লাবের হয়ে লিস্ট ক্রিকেটে তার অভিষেক হয়।
অনিকের ক্যারিয়ারের এই সিরিজের শুরুটা হয়েছিল তার বড় ভাইয়ের হাতে। অনিক ন্যাশনাল দলে সুযোগ পাওয়ার পর তার বড় ভাই সাকের আলী অপু বলেন, 'বিকেএসপিতে যাবার আগ পর্যন্ত আমিই তাকে ক্রিকেটের সবকিছু শেখাতাম। কিপিং ও ব্যাটিং সম্পর্কে অনিককে আমিই ধারণা দিয়েছি। পরবর্তীতে আমার কাছে মনে হয়েছে, আমার দ্বারা আর হবে না। ওর খেলার ধরণ দেখে বুঝা যাচ্ছিল ও অনেক প্রতিভাবান। তাই তাকে ভাল একটা জায়গায় সেট করতে হবে। তখন বিকেএসপিতে ট্রায়ালের জন্য অনিককে আমিই নিয়ে যাই। বড়ভাই হিসেবে আমার খুব ভাল লাগছে। এটা আমাদের পরিবারের অনেকদিনের স্বপ্ন ছিল। অনিককে ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদের পরিবারের সবাই সাপোর্ট করেছে। আজ জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ায় আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।'
জাকির আলী অনিকের ক্রিকেটে যাত্রা শুরু হয় ২০১০ সালে। তিনি হবিগঞ্জ জেলা ক্রিকেট এবং প্রথম বিভাগ ক্রিকেট দলের হয়ে খেলেছেন। এরপর আমার সঙ্গে মাঠে যাচ্ছিলেন অনিক। তার বয়স প্রায় ১২ বছর। অনিক আমাকে বলত,আমি তর মত উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান হতে চাই।' তখন আমি বলতাম, 'তুই তো অনেক ছোট। ক্রিকেট বল অনেক হার্ড। তুই ব্যথা পাবি।' কিন্তু তারপরও সে বলে আমি পারব। তারপর আমি তাকে গ্লাভস পরিয়ে দেই। দেখলাম অনিক অনেক ভাল করছে। তারপর হবিগঞ্জে একটি ট্রায়ালে আমি তাকে নিয়ে গিয়েছিলাম। সে সেই ট্রায়ালে সুযোগ পায়। এতে সে হবিগঞ্জ জেলা অনুর্দ্ধ ১৩ ক্রিকেট দলে সুযোগ পায়। এরপর ২০১৩ সালে বিকেএসপির একটি ভর্তি সার্কুলার হলে অনিককে সেখানে পাঠাই। কয়েকশ’ আগ্রহীর মধ্যে ২৪ জনের দলে সুযোগ হয় অনিকের।'
জাকের আলী অনিকের বড় বোন নূরজাহান বিভা বলেন, 'আমরা ৫ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট জাকের আলী অনিক। আজকের এইদিনটি দেখার জন্য আমরা অনেকদিন ধরেই অপেক্ষায় ছিলাম। আজ এই খুশির দিনে আব্বাকে খুব মনে পড়ছে। আব্বা আজ থাকলে এই খুশিটা আমাদের দ্বিগুণ হত। এই সফলতার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান আমার ভাই সাকের আলী অপু ও আমার বোন শাকিলা ববির।'
তার বোন সাবেক প্রমীলা ক্রিকেটার শাকিলা ববি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, 'সবকিছু স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে। দীর্ঘ একযুগের সাধনার ফল পেয়েছে অনিক। বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্রিকেট টিমে জায়গা করে নিতে হলে ভাল খেলার কোনো বিকল্প নেই। তাই ওর দৃঢ় লক্ষ্য ছিল বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার।'
হবিগঞ্জের ছেলে জাকির আলী অনিক জাতীয় ক্রিকেট দলে ডাক পাওয়ায় হবিগঞ্জের ক্রীড়াঙ্গণে আনন্দের বন্যা বইছে। অনিক জাতীয় দলে ডাক পাবার খবরটি যখন পাওয়া যায়, তখন হবিগঞ্জ আধুনিক স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট চলছিল। খবর পাবার সাথে সাথে জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে সবাইকে মিষ্টিমুখ করানো হয়। আর সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুক ভরে ওঠেছে জাকির আলী অনিককে অভিনন্দন বার্তায়।
হবিগঞ্জ জেলা ক্রিকেট খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও হবিগঞ্জ জেলা ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ইব্রাহিম খলিল সোহেল বলেন, 'সেই ছোটবেলা থেকেই অনিককে দেখছি। তখন থেকেই তার মধ্যে ক্রিকেটের প্রতিভা দেখে আমরা তাকে নিয়ে আশাবাদী ছিলাম। আমরা জানতাম অনিক অনেক বড় খেলোয়াড় হবে। আজকে সে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে সুযোগ পাওয়ায় হবিগঞ্জের ক্রিকেট তথা সমগ্র ক্রীড়াঙ্গণে আনন্দ বিরাজ করছে।'
১৯৯৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জ শহরের ঝিলপাড় এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন অনিক। ৩ বোন ও ২ ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট এই ক্রিকেটার। বাবা প্রয়াত মো. শওকত আলী ও মা মানিক চাঁন। বাবা-মা কেউই খেলার সঙ্গে জড়িত না থাকলেও অনিকের স্ত্রী নাফিসা তাবাসসুম বিকেএসপির শুটার।
আপনার জন্য নির্বাচিত নিউজ
- পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে ৪টি খাবার: জেনে নিন কী খাবেন!
- দুবাইতে চুরি: ৫ প্রবাসীর যাবজ্জীবন ভিসা বাতিল ও কারাদণ্ড
- ক্যানসারের যেসব প্রাথমিক সতর্ক সংকেত উপেক্ষা করলেই বিপদ
- উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার আগে রহস্যময় ফেসবুক পোস্ট: নেপথ্যে আন্তর্জাতিক অনলাইন প্রতারক চক্র
- বাংলাদেশের বাজারে আজ এক ভরি স্বর্ণের দাম
- দুই বিভাগে অতিভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস: সারাদেশে বর্ষণ অব্যাহত থাকবে
- টানা বৃদ্ধির পর কমলো সোনার দাম: প্রতি ভরিতে সর্বোচ্চ ১৫৭৪ টাকা হ্রাস
- দেশের বাজারে আজ এক ভরি ১৮, ২১, ২২ ক্যারেট সোনার দাম
- সৌদি রিয়ালের বিনিময় রেটের বড় লাফ
- নামাজের অবস্থায় বায়ু ত্যাগে ওযু নষ্ট হলে করণীয়
- ইতিহাসের সর্বোচ্চ বাড়ল সোনার দাম
- পাকিস্তানের বিপক্ষে ২য় টি টোয়েন্টিতে পালটে যাচ্ছে বাংলাদেশের একাদশ, দেখে নিন ম্যাচ সময়
- মালিকানা ছাড়াই বাইক চালাবেন যেভাবে – জানুন আইন
- মাইলস্টোন কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত: নিহত ৩২, আহত ১৬৫ জন
- রাশিয়ায় অর্ধশত আরোহী নিয়ে যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত