ডেঙ্গু জ্বর: কখন পরীক্ষা করাবেন এবং কী করবেন
-1200x800.jpg)
ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা মূলত বর্ষাকালে (জুলাই থেকে অক্টোবর) বেড়ে যায়। তবে বর্তমানে জুন মাস থেকেই এর প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হওয়া, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বা মৃত্যুর ঘটনাও কম নয়। চিকিৎসকরা বলছেন, সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ঝুঁকি কমানো সম্ভব। কিন্তু অবহেলা করলে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো কী এবং কখন আপনার দ্রুত পরীক্ষা করানো উচিত, তা জেনে নিন।
ডেঙ্গুর সাধারণ লক্ষণ
ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণ হলো জ্বর, যা ১০১ থেকে ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। জ্বর একটানা থাকতে পারে, আবার কমে গিয়ে আবারও আসতে পারে। এর সঙ্গে শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা এবং ত্বকে লালচে দাগ (র্যাশ) দেখা দিতে পারে। তবে এসব লক্ষণ ছাড়াও ডেঙ্গু হতে পারে।
কখন হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে?
ডেঙ্গুর ধরন বা ক্যাটাগরির ওপর নির্ভর করে চিকিৎসার প্রয়োজন। ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ক্যাটাগরি আছে: 'এ', 'বি' ও 'সি'।
* 'এ' ক্যাটাগরি: অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী এই ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত। এদের শুধু জ্বর থাকে এবং কোনো জটিলতা থাকে না। সাধারণত হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় না, বাড়িতে বিশ্রাম নিলেই যথেষ্ট।
* 'বি' ক্যাটাগরি: এই ধরনের রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হতে পারে। যদি পেটে ব্যথা, বমি, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, অন্তঃসত্ত্বা অবস্থা, জন্মগত সমস্যা, কিডনি বা লিভারের সমস্যা থাকে, তাহলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উচিত।
* 'সি' ক্যাটাগরি: এটি ডেঙ্গুর সবচেয়ে গুরুতর ধরন। এতে লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) লাগতে পারে।
জ্বর হলেই কি চিন্তিত হবেন?
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহর মতে, যেহেতু এখন ডেঙ্গুর সময়, তাই জ্বর হলে অবহেলা করা উচিত নয়। জ্বর এলেই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যারা ডেঙ্গুতে মারা গেছেন, তাদের অনেকেই জ্বরকে অবহেলা করেছেন। যদি জ্বরের সঙ্গে সর্দি-কাশি, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বা অন্য কোনো বিষয় জড়িত থাকে, তাহলে সেটি ডেঙ্গু নাও হতে পারে, তবে জ্বর হলেই সচেতন থাকা জরুরি।
ডেঙ্গু হলে কী করবেন?
১. বিশ্রাম: সরকারের সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক ড. সানিয়া তাহমিনা পরামর্শ দিয়েছেন, জ্বর হলে পরিপূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে। জ্বর নিয়ে ছোটাছুটি করা উচিত নয় এবং দৈনন্দিন পরিশ্রমের কাজগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
২. তরল খাবার: প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন। যেমন - ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস এবং খাবার স্যালাইন। শুধু পানি নয়, পানি জাতীয় খাবার গ্রহণ করা বেশি জরুরি।
৩. ঔষধ: ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে। স্বাভাবিক ওজনের একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ চারটি প্যারাসিটামল সেবন করতে পারেন। তবে যাদের লিভার, হার্ট বা কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা আছে, তাদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। অ্যাসপিরিন জাতীয় ব্যথানাশক ঔষধ পরিহার করুন, কারণ এতে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৪. প্ল্যাটিলেট বা রক্তকণিকা: অধ্যাপক তাহমিনা বলেছেন, ডেঙ্গু জ্বরে প্ল্যাটিলেট বা রক্তকণিকা এখন আর মূল বিবেচ্য বিষয় নয়। প্ল্যাটিলেট কাউন্ট নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই, এটি চিকিৎসকের ওপর ছেড়ে দেওয়াই ভালো। সাধারণত একজন মানুষের রক্তে প্ল্যাটিলেট কাউন্ট দেড় লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ পর্যন্ত থাকে।
ডেঙ্গু পরীক্ষার সঠিক সময়
* দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ: জ্বর এলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সব জ্বরই ডেঙ্গু নয়। ডেঙ্গু ভেবে নিজে নিজে পরীক্ষা করালে নিউমোনিয়া, প্রস্রাবে সংক্রমণ, টাইফয়েড, ফ্লু ইত্যাদি সাধারণ রোগগুলো অজানা থেকে যেতে পারে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি প্রযোজ্য। পরীক্ষার চেয়ে রোগীর লক্ষণ, উপসর্গ এবং শারীরিক পরীক্ষার তথ্য-উপাত্ত বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
* পরীক্ষার ভিন্নতা: ডেঙ্গু জ্বরে প্রথম দিন থেকে পরবর্তী ১০ দিন পর্যন্ত বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল ভিন্ন হতে পারে। তাই নিজে নিজে পরীক্ষা করালে বিভ্রান্তি হতে পারে। কখন কোন পরীক্ষা করাতে হবে, সেই সিদ্ধান্ত চিকিৎসকের ওপর ছেড়ে দিন। জ্বর আসার প্রথম দিন থেকে ডেঙ্গু এনএস১ অ্যান্টিজেন পজিটিভ আসে। তবে চতুর্থ বা পঞ্চম দিন থেকে এটি নেগেটিভ হয়ে যেতে পারে। জ্বর চার-পাঁচ দিনের বেশি হলে ডেঙ্গু আইজিএম অ্যান্টিবডি টেস্ট করানো যেতে পারে, যা এ সময় পজিটিভ আসবে। ৯-১০ দিনের মাথায় এটিও নেগেটিভ হয়ে গেলে আইজিজি অ্যান্টিবডি পজিটিভ দেখাতে পারে।
* এনএস১ নেগেটিভ হলেও ডেঙ্গু হতে পারে: ডেঙ্গু এনএস১ নেগেটিভ হলেই যে ডেঙ্গু হয়নি, তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। লক্ষণ, উপসর্গ এবং অন্যান্য পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। একদিন একটি ল্যাবে এনএস১ পজিটিভ এলেও পরের দিন অন্য ল্যাবে নেগেটিভ রিপোর্ট আসতে পারে, যা স্বাভাবিক।
* অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা: ডেঙ্গুর অ্যান্টিজেন বা অ্যান্টিবডির পাশাপাশি শ্বেতরক্তকণিকা, হিম্যাটোক্রিট, অণুচক্রিকা, রক্তের অ্যালবুমিন, যকৃতের এনজাইম (এসজিপিটি) ইত্যাদি পরীক্ষাগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। শুধু অ্যান্টিজেন টেস্ট করালে এসব তথ্য অজানা থেকে যেতে পারে।
এডিস মশা এবং সতর্কতা
১. মশার কামড়: ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী এডিস মশা অন্ধকারে কামড়ায় না। সাধারণত সকালের দিকে এবং সন্ধ্যার কিছু আগে এরা সক্রিয় থাকে।
২. পানি জমতে না দেওয়া: এডিস মশা স্বচ্ছ পানিতে ডিম পাড়ে। তাই বাড়ির ছাদ, বারান্দার ফুলের টব, নির্মাণাধীন ভবনের বিভিন্ন স্থান, রাস্তার পাশে পড়ে থাকা টায়ার বা যেকোনো পাত্রে তিন থেকে পাঁচ দিনের বেশি পানি জমতে দেওয়া যাবে না। এসব জায়গায় এডিস মশা বংশবিস্তার করে।
আপনার যদি ডেঙ্গুর কোনো লক্ষণ দেখা যায়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং তার নির্দেশনা মেনে চলুন।
আপনার জন্য নির্বাচিত নিউজ
- সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ছে, সর্বনিম্ন ৪ হাজার, সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৮০০ টাকা
- দাঁত ব্রাশ করার পরও মুখে দুর্গন্ধ! জেনে নিন ৬ সমাধান
- মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যার নতুন মোড়, বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য!
- এমন বৃষ্টি আর কতদিন চলবে, জানালো আবহাওয়া অফিস
- একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ সিম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত
- নির্বাচন নিয়ে সিইসির সম্ভাব্য সময়সূচী
- প্রকাশ্যে পাথর মারার ঘটনায় ছাত্রদল নেতা রবিনের দায় স্বীকার, যা জানা গেল
- কত দিনের বাচ্চা নষ্ট করলে গুনাহ হয় না
- নৃশংস সেই ঘটনায় জড়িতরা শনাক্ত, মিলল ২ জনের পরিচয়
- আবেদনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বাংলাদেশকে ভিসা দিবে ৬ দেশ!
- বাড়ছে ক্যানসার, যেসব লক্ষণ অবহেলা করলেই বিপদ
- ভারতীয় নার্স প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড, যা জানা গেল
- অবশেষে বিয়ে করছেন সালমান খান
- ধারের টাকা ফেরত পাচ্ছেন না! জেনে নিন কার্যকর কৌশল
- বাংলাদেশের বাজারে আজ এক ভরি সোনার দাম কত