হাসিনার মৃত্যুদন্ডও আওয়ামীলীগের ভবিষ্যৎ কি
নিজস্ব প্রতিবেদক: সম্প্রতি রাজনৈতিক অঙ্গনে বহুল আলোচিত একটি বিষয় হলো দলটির শীর্ষ নেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনালের কথিত রায় এবং দলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে চলমান রাজনৈতিক আলোচনা। যে ট্রাইব্যুনাল একসময় প্রতিপক্ষের নেতাদের বিচার করার জন্য গঠিত হয়েছিল, সেই ট্রাইব্যুনালই যখন শীর্ষ নেত্রীর বিরুদ্ধে রায় দেয়—তখন তা দলের ভবিষ্যৎ গতিপথ নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দেয়। যেহেতু নেত্রী বিদেশে (আলোচনা অনুযায়ী ভারতে) আশ্রয় গ্রহণ করেছেন, তাই তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব কি না এবং এই রায় আওয়ামী লীগের স্বাভাবিক রাজনৈতিক ধারায় ফিরে আসার পথ কতটা রুদ্ধ করে দিল—সেই বিশ্লেষণই এখন রাজনীতির কেন্দ্রে।
১. প্রত্যর্পণের জটিলতা ও ‘হাসিনা কূটনীতি’
অনেকের মতে, শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করা প্রায় অসম্ভব। এর কয়েকটি কারণ রয়েছে:
* রাজনৈতিক আশ্রয়: নেত্রী একটি ভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন, যে দেশের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক বিদ্যমান।
* আস্থার সংকট: বিশ্লেষকদের মতে, ভারত সরকার যদি হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করে, তবে ভবিষ্যতে অন্য কোনো দেশ বা নেতা ভারতের ওপর আস্থা রাখতে চাইবে না। নতুন কাউকে আজ্ঞাবহ বানাতে হলে ভারত হাসিনাকে ফেরাতে চাইবে না।
* আন্তর্জাতিক চাপ: পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশ মৃত্যুদণ্ডকে সমর্থন করে না। ফলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে ফেরানোর জন্য আন্তর্জাতিকভাবে ভারত সরকারকে চাপ দেওয়া কঠিন হবে।
হাসিনা কূটনীতি: এই পরিস্থিতিতে একটি ভিন্ন সম্ভাবনার দিকও উঠে আসছে। যদি বাংলাদেশের পরবর্তী সরকার ভারতের সঙ্গে নতুন কোনো চুক্তি করে ফেলে এবং হাসিনা ইস্যুতে চাপ সৃষ্টি করে তিস্তার পানি, গঙ্গার পানি, বা ট্রানজিটের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আদায় করতে পারে, তবে তা ‘হাসিনা কূটনীতি’ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক হতে পারে।
২. ফিরে আসার পথ: ভয় নাকি সহানুভূতি?
অনেকের ধারণা, আওয়ামী লীগের বর্তমান তৎপরতা দেখে মনে হয় দলটিকে কোনোভাবেই দমিয়ে রাখা যাবে না। কিন্তু রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই তৎপরতার মূলে আছে ভয়, সহানুভূতি নয়।
* টাকার জোরে সক্রিয়তা: বিশ্লেষকদের দাবি, দলের বর্তমান কর্মীরা যে সক্রিয়তা দেখাচ্ছেন, তা মূলত অর্থের বিনিময়ে করা হচ্ছে (যেমন মিছিলে অংশ নিতে টাকা প্রদান)। এই ধরনের টাকার জোরে পরিচালিত মিছিল-মিটিং সাময়িক হতে পারে, কিন্তু এটি গণজোয়ার নয়।
* সহানুভূতি অপরিহার্য: আধুনিক রাজনীতিতে ভয় দেখিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা অসম্ভব। ক্ষমতায় ফিরতে হলে মানুষের সহানুভূতি ও মনের ভেতরের সমর্থন প্রয়োজন। অতীতে বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের পর যে ধরনের মৃদু সহানুভূতি মানুষের মনে এসেছিল, শেখ হাসিনার রায়ের পর তেমন কোনো গণবিক্ষোভ বা জনসমর্থন দেখা যায়নি।
* ভোটের বাস্তবতা: ২০২৪ সালের নির্বাচনেও যেখানে সব প্রার্থী আওয়ামী লীগের থাকার পরও ১০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি, সেখানে কথিত ২০-৩০ শতাংশ সমর্থনের ধারণা প্রশ্নবিদ্ধ। সহানুভূতি পাওয়ার পরিবর্তে দল যদি আগ্রাসী রাজনীতি এবং হুমকি-ধামকির পথ বেছে নেয়, তবে তা দলের ফিরে আসার সব পথ বন্ধ করে দেবে বলে মনে করেন অনেকে।
৩. ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও নেতৃত্বের শূন্যতা
আওয়ামী লীগ ১৯৭৫ সালের পরেও ফিরে এসেছিল। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন।
| তুলনা | ১৯৭৫ সালের পরবর্তী সময় | ২০২৪ সালের পরবর্তী সময় |
| সরকার পতন | সামরিক অভ্যুত্থান (জনগণ সরাসরি যুক্ত ছিল না) | গণ-আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থান (অনেক শক্তিশালী) |
| রাজনৈতিক সংকট | দেশে পরিচিত রাজনৈতিক দলের সংকট ছিল। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য আওয়ামী লীগকে অনুমতি দেওয়া অপরিহার্য ছিল। | বিএনপি, জামায়াত এবং এনসিপি-র মতো গণপরিচিত দল মাঠে সক্রিয়। রাজনৈতিক দল বা ভোটারের বিকল্পের কোনো সংকট নেই। |
| নেতৃত্ব | ১৯৮০-র দশকে শেখ হাসিনার মতো একজন তরুণ নেতা হাল ধরেন, যিনি এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে দলকে একত্রিত করে ক্ষমতায় ফেরান। | বর্তমানে শেখ হাসিনা অনুপস্থিত বা নিষ্ক্রিয়। ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অন্য নেতারা মানতে নারাজ। মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বয়স ৫২ বছর এবং এই বয়সে একটি পতিত দলকে টেনে তোলা সহজ নয়। |
পতন হওয়া দলের ফিরে আসার ইতিহাস পৃথিবীতে বিরল। গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যূত হলে একটি দলের রাজনীতিতে স্বাভাবিক ধারায় ফিরে আসা অত্যন্ত কঠিন। নেতার অনুপস্থিতি এবং পুরনো নেতাদের বার্ধক্য এই প্রক্রিয়াটিকে আওয়ামী লীগের জন্য আরও কঠিন করে তুলবে।
পৃথিবীর ইতিহাসে জনগণের রায়ে অনেক রাজনৈতিক দলের রাজনীতি শেষ হয়ে যাওয়ার নজির আছে। আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও যদি পতনের পর লম্বা সময় লাগে, তবে নেতার অভাবে দলটি দুর্বল হয়ে যাবে। তবে একটি আশার দিক হলো, দেশে যদি গুণগত শিক্ষার প্রসার ঘটে এবং মানুষের সচেতনতা বাড়ে, তবে টাকার বিনিময়ে রাজনীতি করার পুরনো ব্যবস্থাটি ধীরে ধীরে বাংলাদেশে বিলীন হয়ে যাবে। জনগণ যদি সচেতনভাবে পাঁচ বছরের জন্য ভালো প্রার্থী নির্বাচন করার গুরুত্ব বুঝতে শুরু করে, তবে ভবিষ্যতের রাজনীতি পুরাতনকে ভেঙে নতুন রূপ নেবে।
সোহাগ/
আপনার জন্য নির্বাচিত নিউজ
- বিএনপির ২৩ আসনে মনোনয়ন পরিবর্তনের ইঙ্গিত, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ২২ নভেম্বর
- আগামী ৮ তারিখ আর্জেন্টিনার বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ
- বেতন কাঠামো নিয়ে আসছে বড় সুখবর
- লাফিয়ে কমলো পেঁয়াজের দামে
- নবম পে-স্কেলের দাবিতে দেশজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয় অচল করার হুঁশিয়ারি
- ৫.৬ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল ঢাকা; উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশেই
- নতুন পে স্কেল কার্যকর নিয়ে সর্বশেষ যা জানা গেল
- পে স্কেলের পথে কমিশন: সোমবার সচিব সভা, রিপোর্ট ডিসেম্বরে
- বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা চালু করলো ভারত
- নতুন বেতন কাঠামোর রূপরেখা চূড়ান্ত করতে সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে কমিশন
- বিএনপি অভ্যন্তরীণ কোন্দল: ২৩ আসনে মনোনয়ন পরিবর্তন
- আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা বাড়ল
- শেখ হাসিনার রায়ের পর ভাইরাল কাদের মোল্লার সেই চিঠি: কী ছিল তাতে
- সোনার দামে বড় পতন: ভরিতে কমলো ৭ হাজার
- বাড়ছে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদা
