নিজস্ব প্রতিবেদক: আজকালকার সময়ে, খালেদা জিয়ার কারাগারে থাকার কারণ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। স্বৈরাচারী নেতৃত্ব তখনই প্রতিষ্ঠিত হয়, যখন সে বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে সরে গিয়ে শুধুমাত্র নিজের স্বার্থের কথা ভাবতে থাকে। আর যদি তার চারপাশে এমন কিছু মানুষ থাকে যারা কেবল তার জয়জয়কার করে, তবে সে একজন ক্ষমতাশালী স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে—এমনই একজন ছিলেন শেখ হাসিনা।

৫ আগস্ট তার পতনের পিছনে ছিল তার চারজন ঘনিষ্ঠ সহযোগীর ভুল সিদ্ধান্ত। ভারতীয় গণমাধ্যম 'দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস'-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কীভাবে এই চারজনের ভুল পদক্ষেপ শেখ হাসিনার পতনে সহায়ক হয়েছিল। যাদের 'গ্যাং অফ ফোর' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তারা হলেন— সজীব ওয়াজেদ জয়, সালমান এফ রহমান, ওবায়দুল কাদের এবং আসাদুজ্জামান খান কামাল। এই চারজনের সিদ্ধান্ত ছিল এমন, যা শেখ হাসিনাকে বাস্তবতার সাথে সংযুক্ত রাখতে ব্যর্থ হয়েছিল।

'দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস' সংবাদে জানানো হয়েছে, একজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, এই চারজনের সিদ্ধান্তে শেখ হাসিনা এমন একটি পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন, যেখানে তিনি জনগণের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর প্রতিটি সিদ্ধান্ত ছিল এক ধরনের অযৌক্তিক আত্মবিশ্বাস।

শেখ হাসিনার অন্যতম বড় ভুল ছিল বিএনপির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না করা। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা তারেক রহমানের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু হাসিনা তা নাকচ করেন। এই সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক দিক থেকে একটি বড় ভুল হিসেবে অভিহিত করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তাদের মতে, যদি বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হত, তবে জনগণের ক্ষোভ কমানো সম্ভব হত, এবং হয়তো আওয়ামী লীগ তখনো ক্ষমতায় থাকতে পারত।

এই সিদ্ধান্তের ফলে, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো নির্বাচনে জয়লাভ করেন, কিন্তু অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েছিলেন। ছাত্রদের কোটা সংস্কারের প্রতিবাদ এবং অন্যান্য জনবিরোধী কর্মসূচি নিয়ে জনগণের ক্ষোভের পরিমাণ বুঝতে ব্যর্থ হন। 'দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস'-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার চারজন পরামর্শদাতা তাদের সিদ্ধান্তে অন্ধবিশ্বাসী হয়ে পড়েছিলেন, যা তার পতনের মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

এদের পরামর্শেই, কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সমঝোতায় না গিয়ে, তাদের দমন করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন হাসিনা। তারপর, ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। 'দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস'-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসিনার সিদ্ধান্তের কারণে দলের নেতারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন এবং ক্ষমতার পালাবদল ঘটে।

এটাই ছিল হাসিনার পতনের মূল কারণ, যেখানে তার অতি আত্মবিশ্বাস এবং চারজন পরামর্শদাতার ভুল সিদ্ধান্ত তাকে বিপদে ফেলেছিল।

রানা/