চাকরি হারাতে পারেন বহু শিক্ষক: পরীক্ষা বন্ধ রেখে আন্দোলনের জের, ৪২ জনকে বদলি, ২৪৩টি প্রতিষ্ঠানে শোকজ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বেতন বৈষম্যসহ বিভিন্ন দাবিতে বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ রেখে আন্দোলনে নামা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা অবশেষে তাঁদের কর্মসূচি স্থগিত করেছেন। আগামী রবিবার (৭ ডিসেম্বর) থেকে তাঁরা স্থগিত হওয়া বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ করবেন বলে বৃহস্পতিবার রাতে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন।

তবে এই আন্দোলনের কারণে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অমান্য করা, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া এবং বিদ্যালয়ে তালা দেওয়ার মতো গুরুতর ঘটনার জন্য ইতিমধ্যে একাধিক শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গতকাল বৃহস্পতিবার এক আদেশে ৪২ জন সহকারী শিক্ষককে অন্য জেলায় বদলি করেছে।

* বদলি: এই শিক্ষকরা তাঁদের বর্তমান কর্মস্থলের জেলায় থাকতে পারবেন না। বিশেষভাবে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ৫ জন শিক্ষক নেতাকে চিহ্নিত করে এই বদলির আদেশ জারি করা হয়েছে।

* তদন্ত: মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আন্দোলনের নেপথ্যে কারা উসকানি দিয়েছে বা কারা নেতৃত্ব দিয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে আরও তদন্ত করা হবে।

এর আগে বুধবার মন্ত্রণালয় অবিলম্বে শিক্ষকদের কাজে ফিরে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। ফিরে না এলে চাকরি আইন, আচরণ বিধিমালা ও ফৌজদারি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।

নোয়াখালীতে ২৪৩টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের শোকজ

আন্দোলনের কারণে বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ থাকা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রাথমিক শাস্তি হিসেবে শোকজ করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের শোকজ করা হয়েছে নোয়াখালী জেলায়।

নোয়াখালীর ২৪৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া বার্ষিক মূল্যায়ন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। এ কারণে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এসব প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষককে শোকজ নোটিশ দিয়েছে।

নোটিশে অভিযোগ: শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করা, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণে বাধা সৃষ্টি করা এবং বিদ্যালয়ে তালা দেওয়ার মতো 'দায়িত্বহীন আচরণের' অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব কাজ সরকারি কর্মচারী আইন-২০১৮ এবং শৃঙ্খলা বিধিমালা, ২০১৮-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

নোটিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সে বিষয়ে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি 'বরখাস্ত'

সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীদের শৃঙ্খলাভঙ্গ বা শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড প্রমাণ হলে শাস্তির বিধান রয়েছে।

| লঘু দণ্ড | তিরস্কার | পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি স্থগিতকরণ |

| গুরু দণ্ড | নিম্ন পদ বা নিম্নতর বেতন স্কেলে অবনমিতকরণ | চাকরি হইতে বরখাস্ত |

পদত্যাগ ও বহিষ্কারের প্রভাবে দল যখন নড়বড়ে হওয়ার উপক্রম তখন সমমনা অন্য কয়েকটি দল নিয়ে চোট গড়ার চেষ্টা চালায় এনসিপি। তবে সেখানেও নেই কোন আশা ব্যঞ্জক খবর। গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, এবি পার্টি সহ বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে দলটি। গেল সপ্তাহে জোট ঘটনার তারিখ দিয়েও পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয় তারা। ক্ষমতার ভাগাভাগী পথ পদবী নিয়ে টানা হেচড়া সহ নানা মতবিরোধে জোট গঠনেও হোজট খায় এনসিপি।

মন্ত্রণালয়ের কঠোর পদক্ষেপের মুখে প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনগুলো আন্দোলন স্থগিত করলেও, শোকজ ও বদলির ঘটনায় বহু শিক্ষকের চাকরি হারাতে হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সোহাগ/