সোহাগ আহমদে
সিনিয়র রিপোর্টার
যেভাবে নির্বাচনে জিতে আসতে পারে জামায়াত!
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। যেখানে বিএনপি আবেগের রাজনীতি করছে এবং আওয়ামী লীগ কোণঠাসা, সেখানে জামায়াত যেন সুসংগঠিত, 'মেটিকুলাস ডিজাইন'-এর মাধ্যমে নীরব বিপ্লবের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলটির নেতারা ইতোমধ্যেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন এবং তাদের কৌশলগত পদক্ষেপগুলো রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
ভোটার ইঞ্জিনিয়ারিং: জামায়াতের নতুন কৌশল
জামায়াতে ইসলামীর নতুন নির্বাচনী কৌশলের ভিত্তি হলো 'ভোটার ট্রান্সফার' বা ভোটারদের সুষম বণ্টন। জামায়াত নেতা গোলাম পরোয়ারের কথায় সেই কৌশলের স্পষ্ট আভাস মেলে:
"যদি মনে করেন আমার যে সিট ওটা হচ্ছে ছেড়ে দেওয়ার মতো একটা সিট, সে একেবারেই সম্ভাবনা নাই, তাহলে আমি অনুরোধ করব আপনি ভোটার ট্রান্সফার, ভোটার প্ল্যানটার নাম বল করে আপনি [কাজ করুন]।"
এর অর্থ হলো, যেখানে জামায়াতের জেতার সম্ভাবনা কম, সেখানকার ভোটারদের কৌশলে অন্য আসনে স্থানান্তরিত করে (যেমন টাঙ্গাইল-২ আসনের ভোটারদের টাঙ্গাইল-৩ আসনে) এমনভাবে একত্র করা, যাতে তারা একটি আসন সহজে জিতে আসতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, এমন 'নির্বাচনী ইঞ্জিনিয়ারিং' বাংলাদেশে জামায়াতের মতো গুছিয়ে কাজ করা দল থেকেই দেখা সম্ভব।
জরিপে জামায়াতের উত্থান: ৩ কোটি ৭৮ লাখ সমর্থক
সাম্প্রতিক জরিপগুলোতে জামায়াতের উত্থান বিস্ময়কর। ইনোভেশন কনসাল্টিং-এর সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী:
* মোট ভোটারের ৩০.৩ শতাংশ জামায়াতকে ভোট দিতে চায়।
* যা প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ ভোটারের সমান।
* মোট ভোটারের ৪১.৩ শতাংশ বিএনপিকে এবং ১৮.৮০ শতাংশ আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে চায়।
এই বিপুলসংখ্যক ভোটারকে যদি জামায়াত কৌশলগতভাবে সুষম ভাগে ভাগ করে অন্তত ১২০টি আসনে বণ্টন করে, তবে প্রতি আসনে প্রায় ২ লাখ ৪৪ হাজার ভোট নিশ্চিত করে অনায়াসে জয়ী হওয়া সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে।
স্ট্র্যাটেজিক গ্রোথ মডেল: নীরব অর্থনীতি ও ডিজিটাল প্রচার
বিশ্লেষকদের মতে, জামায়াত এখন আর কেবল নৈতিক বা ধর্মীয় লাইনে খেলছে না, তারা কাজ করছে একটি 'স্ট্র্যাটেজিক গ্রোথ মডেলে', যা বহুজাতিক কোম্পানির বাজার দখলের পরিকল্পনার মতো নিখুঁত।
* সার্ভিস পলিটিক্স: জামায়াত 'স্মার্ট ডেমোগ্রাফি' (যুবসমাজ, নারী ভোটার, ধর্মভিত্তিক অঞ্চল) লক্ষ্য করে কাজ করছে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে নারীভিত্তিক নেটওয়ার্ক তৈরি করে তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিবারের সমস্যার খোঁজ নিচ্ছেন, চিকিৎসা, শিক্ষা ও চাকরির পরামর্শ দিচ্ছেন। একে বলা হচ্ছে 'সার্ভিস পলিটিক্স', যেখানে ভোট না চেয়ে আস্থা অর্জন করা হয়।
* সাইলেন্ট ইকোনমি: বিএনপি যখন প্রতিটি কর্মসূচির পর অর্থকষ্টে ভোগে, জামায়াত তখন দেশের ছোট ব্যবসায়ী ও প্রবাসীদের চাঁদায় 'সাইলেন্ট ইকোনমি' বা আর্থিকভাবে স্বনির্ভর তহবিল গড়ে তুলেছে।
* সাইবার আধিপত্য: তাদের সাইবার টিম পেশাদারভাবে টিকটক থেকে টেলিগ্রাম পর্যন্ত ডিজিটাল প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। তারা এখন শুধু ধর্ম নয়, ন্যায়, বিকল্প রাজনীতি ও পরিবর্তনের কথা বলছে—যা একসময় বিএনপির স্লোগান ছিল।
বড় দলগুলোর দুর্বলতা: ঘুম ভাঙবে কি
এই নিখুঁত পরিকল্পনার বিপরীতে বড় দলগুলোর অবস্থা উদ্বেগজনক:
* বিএনপি: দলটি আবেগে ভর করে বক্তৃতা দিলেও 'অ্যালগরিদমে' পিছিয়ে। নেতৃত্ব (তারেক রহমান) বিদেশে, মাঠে নেতারা বিভক্ত, প্রার্থী ও ভোটার টার্গেটের কোনো ডেটা নেই।
* আওয়ামী লীগ: জরিপে দলটির অবস্থান জামায়াতেরও পরে। রাজনৈতিক কার্যক্রম কার্যত বন্ধ, যা দলটিকে প্রকারান্তরে 'পলাতক' হিসেবে দাঁড় করিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জামায়াতের সুসংগঠিত বিকল্প বলয়ের সামনে অন্যান্য দলগুলোর অবস্থা এমন যে, "এই ধাক্কাও যদি তাদের ঘুম ভাঙাতে না পারে, তাহলে পরবর্তী পাঁচ বছর তাদের বেশ ভুগতেও হতে পারে।"
অর্থাৎ, নির্বাচন এখন কেবল ভোটের নয়, এটি বুদ্ধিমত্তার প্রতিযোগিতা। আর এই খেলায় জামায়াতের কৌশল এখন পর্যন্ত সবচেয়ে নিখুঁত ও কার্যকর বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
সোহাগ/
আপনার জন্য নির্বাচিত নিউজ
- অবশেষে নতুন পে-স্কেল নিয়ে 'সুখবর'
- আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ: ব্রাজিল বনাম সেনেগাল, যেভাবে দেখবেন
- আজকের সোনার বাজারদর: ১৬ নভেম্বর ২০২৫
- সরকারি কর্মচারীদের নতুন পে স্কেল হচ্ছে না—কেন দরকার ছিল, কোথায় সমস্যা
- ফের কমেছে সোনার দাম, ভরি কত
- পে-স্কেল: সনাতনী পদ্ধতির বদলে সিটিজি ও পারফরম্যান্সভিত্তিক বেতন কেন জরুরি
- দেশের বাজারে আজ এক ভরি ২১ ক্যারেট সোনার দাম
- আইপিএল ২০২৬: মুস্তাফিজকে নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নিল দিল্লি ক্যাপিটালস
- আগামীকাল গণপরিবহন চলবে কিনা, যা জানা গেল
- একটু পর মাঠে নামবে ব্রাজিল বনাম সেনেগাল, যেভাবে দেখবেন
- দেশের বাজারে লাফিয়ে কমলো সোনার দাম
- সারাদেশে শীতের মাঝেই বৃষ্টির আভাস
- বিশ্ববাজারে সোনার দামে বড় পতন
- আজকের সোনার বাজারদর: ১৭ নভেম্বর ২০২৫
- আইপিএল ২০২৬: ধরে রাখা ক্রিকেটারদের তালিকা প্রকাশ
