নিজস্ব প্রতিবেদক: বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এই বিপুল বিলম্বের কারণে অনেক শিক্ষক চিকিৎসা ও হজ্বের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতে পারছেন না। এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমন্বয় পরিষদ দাবি করেছে যে, শিক্ষকদের অবসরের দিনই যেন তাঁদের সকল পাওনা পরিশোধ করা হয়।

জাতীয় প্রেসক্লাবে ৫ দফা সুপারিশ

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সেমিনারে বাংলাদেশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমন্বয় পরিষদের নেতারা এই দাবি জানান। সেমিনারে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক অধ্যক্ষ মো. শফিকুল ইসলাম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

তিনি উল্লেখ করেন, "অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকরা নিগৃহীত। তাঁরা বিভিন্নজনের দ্বারে ঘুরেও অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পাচ্ছেন না। এ টাকা পেতে অবসরে যাওয়ার পরেও শিক্ষকদের চার থেকে পাঁচ বছর সময় লাগছে।"

এই অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পরিষদ ৫ দফা সুপারিশ তুলে ধরেছে:

১. বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবসরের দিনই অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা প্রদান করা।

২. অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের দিয়ে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্নিং বডি গঠন করা।

৩. শুধুমাত্র শিক্ষকদের দিয়ে স্থায়ী শিক্ষা ও উন্নয়ন কমিশন গঠন করা।

৪. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র গঠন করা।

৫. সকল শিক্ষক সংগঠনের নেতাদের সম্মিলিত আন্দোলনের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে শিক্ষা জাতীয়করণ করা।

বিলম্বের কারণ ও হয়রানি

অনুষ্ঠানে জিয়া পরিষদের সিনিয়র সহসভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবসরের দিনই পাওনা টাকা পরিশোধের জোর দাবি জানান। তিনি বলেন, এই পাওনা টাকা পেতে বিলম্ব হওয়ায় অনেক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের চিকিৎসা আটকে যাচ্ছে, আবার অনেকে হজ্বের মতো ধর্মীয় কাজও সম্পন্ন করতে পারছেন না।

তিনি অবিলম্বে এই দীর্ঘসূত্রিতা দূর করে অবসরের পরপরই টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। একইসাথে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করার কথাও বলেন।

শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে মতিঝিলের টি অ্যান্ড টি স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. নূর হোসেন শিক্ষা ব্যবস্থার জাতীয়করণের দাবি জানান। তিনি বলেন, "দেশ বাঁচাতে হলে শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য সব শিক্ষক সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন শুরু করতে হবে।"

তিনি আরও বলেন, যেখানে সরকারি চাকরিজীবীদের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হওয়ার বিধান আছে, সেখানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরাও তো চাকরিজীবী। তিনি শিক্ষকদের অবসরের দিনই তাদের পাওনা পরিশোধের দাবিটিও পুনর্ব্যক্ত করেন।

আরও পড়ুন- নতুন পে-স্কেল: অনুপাতের হিসাবে অসন্তুষ্ট নিম্নগ্রেডের কর্মচারীরা

সেমিনারে জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের কেন্দ্রীয় নেতা হাফেজ মো. আব্দুর রহীম, কবি লিলি হক এবং আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক রুমানা শাহীন শেফা-সহ অনেকে বক্তব্য রাখেন।

সোহাগ/