তামিম,সাকিব,মুশফিক ছাড়া কেমন দেখাবে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ দল?

আলমের খান: দেশের ক্রিকেটে পঞ্চপান্ডবের গুরুত্ব কতটা বেশি তা বোধ হয় তাদের থাকাকালীন উপলব্ধি করা কঠিন। তাদের বিদায়ের পরই তাদের সঠিক মর্ম উপলব্ধি করতে পারবে দর্শকবৃন্দরা। দেশের ক্রিকেট হয়তো একদিন আকাশ সমান উচ্চতায় উপনীত হবে। অজস্র ম্যাচ উইনার ক্রিকেটারও পাবে বাংলাদেশ। অর্জনের খাতায় হয়তো যুক্ত হবে কোন আইসিসি ট্রফিও। তবুও এতসব অর্জনের মাঝেও সর্বোচ্চ আসনে উপনীত থাকবেন এই পঞ্চপান্ডবই। তারাই যে জিততে শিখিয়েছে পরাধীন এই বাঙ্গালীদের।
তারাই যে হারার আগে হার মানতে জানিয়েছে অপারগতা। তারাই যে বিশ্বসেরাদের চোখে চোখ রেখে লড়াই করার মানসিকতা দেখিয়েছে। সব মিলিয়ে দেশের ক্রিকেটে পঞ্চপান্ডবের গুরুত্ব রেকর্ড সমূহ দ্বারা বিচার করা অনুচিত। কারণ রেকর্ড কয়েকটি তথ্য সমূহের ভান্ডার মাত্র। দলের সামগ্রিক মানসিকতা পরিবর্তনে ঠিক কতটা অবদান রেখেছে এই পাঁচ ক্রিকেটার তা এই তথ্য ভান্ডারের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়।
দীর্ঘ ষোলো বছর ধরে দেশের ক্রিকেটকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া এই ক্রিকেটারদের শেষ অতি সন্নিধ্যে। পঞ্চপান্ডবের একজন মাশরাফি বিন মর্তুজা অলিখিতভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে বিদায় জানিয়ে দিয়েছেন। তার দলে ফেরার সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। দেশের সাইলেন্ট কিলার খ্যাত মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও সব সংস্করণের দল থেকেই বিচ্ছিন্ন। জোরদার সম্ভাবনা রয়েছে এই বিশ্বকাপে রিয়াদকে ছাড়াই মাঠে নামবে লাল সবুজ জার্সিধারীরা। অবশিষ্ট তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান এবং মুশফিকুর রহিমের কাঁধেই থাকবে ভক্তদের স্বপ্ন পূরণের গুরুভার।
তবে কখনো কি চিন্তা করেছেন এই পান্ডবদের বিদায়ের পর কেমন দেখাবে বাংলাদেশ দলকে। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে যাদের দেখে এসেছেন প্রায় নিয়মিতভাবেই। যাদের খেলা দেখা আমাদের কাছে ভাত-খাওয়া গোসল করার মতোই নিত্যদিনের ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। তাদের অনুপস্থিতি গ্রহণ করাটা সহজ হবে কি? তা হবে না এই উত্তর আমাদের জানা। তবে সময়তো আর কারো জন্য অপেক্ষা করে না।
তাই মুশফিক-সাকিবদের পিছনে ফেলেও সময় যেতে থাকবে নিজ গতিতে। সময়ের সাথে বাংলাদেশ দল তাল মেলাতে না পারলে দিনশেষে পিছিয়ে পড়বে তারাই। আচমকা এক ঝাঁক সিনিয়র ক্রিকেটারের অবসর একটি দলকে কতটা নিচে নামিয়ে দিতে পারে তার আদর্শ উদাহরণ শ্রীলংকা। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর শ্রীলঙ্কা দলে একই সাথে কুমার সাঙ্গাকারা, তিলকরাত্নে দিলশান এবং মহেলা জয়াবর্ধনের মতো ক্রিকেটার অবসর গ্রহণ করেন। পরবর্তী কিছু সময়ের মধ্যেই আবার হেরাথ মালিঙ্গার মতো বোলাররাও বিদায় জানান আন্তর্জাতিক অঙ্গনকে। ফলশ্রুতিতে এক সময় সারা বিশ্ব শাসন করা শ্রীলঙ্কা দলটি কিনা হয়ে পড়ে একেবারেই সাদামাটা।
২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট শ্রীলঙ্কার এইবার খেলতে হয়েছে ২০২৩ বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব। এছাড়াও তারা ২০১৪ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন। তবুও খেলতে হয়েছে ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে একসাথে এক ঝাঁক সিনিয়র ক্রিকেটারদের অনুপস্থিতি দলকে কোন জায়গায় নিয়ে আসতে পারে। শ্রীলংকার এই ধরনের বিপদে পড়ার মূল কারণ ছিল যথেষ্ট বিকল্পের অভাব।
তাদের এই সিনিয়রদের বিকল্প তারা ঠিকভাবে তৈরি করতে পারেনি। এমনকি এখনো সাঙ্গাকারা,দিলশান কিংবা জয়াবর্ধনের কাছাকাছি মানের কোন ক্রিকেটারও অনুপস্থিত তাদের শিবিরে। ফলে বাংলাদেশ ক্রিকেট যে আচমকা নিম্নমুখী হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে তা নিশ্চয়ই আর বলার প্রয়োজন নেই। বলা যায় শ্রীলংকার চেয়েও বিকল্পের ক্ষেত্রে দুর্বল অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
এছাড়া বাংলাদেশে এখনো এমন কোনো উচ্চতায় উপনীত হয়নি যেখান থেকে নিচে নামা যাবে। দেশের ক্রিকেটের উন্নতির গ্রাফ সবেমাত্র উপরে উঠা শুরু করেছে। ফলে এখন নিম্নগামী হলে আফগানিস্তান-আয়ারল্যান্ডের নিচে চলে যেতে হবে। যা নিশ্চিতভাবেই ভক্তসমর্থকদের জন্য গ্রহণ করা হয়ে পড়বে দুষ্কর। পঞ্চপান্ডবের অনুপস্থিতি প্রথমে আঘাত আনবে দলের ওপেনিং কম্বিনেশনে। তামিমের সাম্প্রতিক ফর্মের হিসাব-নিকাশ পাশে রাখা হলে দেখা যাবে বিগত সময়গুলোতে তামিমের ব্যাট চলেছে তলোয়ার স্বরূপ।
তলোয়ার হাতে জাপানিজ সামুরাই যোদ্ধাদের মতোই তিনি মাঠে নেমেছেন এবং প্রতিপক্ষকে তছনছ করে ছেড়েছেন। ২০১৫ সাল থেকে নতুন এক বাংলাদেশের দেখা মিলে। যার অন্যতম নৈপথ্যকার ছিলেন ওপেনিং এর মাস্টারমাইন্ড তামিম ইকবাল। মূলত পাওয়ারপ্লেতে তামিমের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং বাংলাদেশকে অধিকাংশ ম্যাচেই ফ্রন্ট ফুটে নিয়ে আসতো। ফলস্রুতিতে মিডল অর্ডার কিংবা লোয়ার মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা পেতেন দেখেশুনে খেলার সুযোগ। তামিমের সাথে যেদিন সৌম্য কিংবা লিটন জ্বলে উঠতেন সেদিনের প্রসঙ্গ না হয় বাদই থাকুক।
পরবর্তীতে মুশফিকের অনুপস্থিতি মিডল অর্ডারে রাখবে দৈন্যতার ছাপ। প্রায় সময় বাংলাদেশের টপ অর্ডার আচমকাই ধসে পড়ে। সেই সময় দেশের ত্রাণকর্তা রূপে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রকট হন মুশফিকুর রহিম। দীর্ঘ ১৬ বছরে এমনই ভরসা দিয়েছেন দেশবাসীকে যে ভক্তদের কাছ থেকে নাম পেয়েছেন ডিপেন্ডেবল। সেই ডিপেন্ডেবলের অনুপস্থিতি নিশ্চিতভাবেই ভোগাবে বাংলাদেশ দলকে।
সাকিবের প্রসঙ্গে যদি কিছু বলতে হয় তাহলে বোধহয় উপন্যাস রচনা করতে হবে। এই ক্রিকেটার যে শুধু একজন ক্রিকেটার নয়। তিনি যেন ক্রিকেটের এক দার্শনিক, তিনি যেন ক্রিকেট সাহিত্যের শেক্সপিয়ার। আর বাংলাদেশ দলে তিনি কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা ভাষায় প্রকাশ করা বেশ দুরুহ। ব্যাটিং,বোলিং এবং ফিল্ডিংয়ে দলে এরকম একনিষ্ঠভাবে সার্ভিস বোধ হয় ভবিষ্যতে কেউই আর দিতে পারবেনা। তাই সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতি বাংলাদেশ দলে তৈরি করবে শূন্যতার বিশাল এক বৃত্ত। সেই বৃত্ত বাংলাদেশ কিভাবে কাটিয়ে উঠবে সেটি জানা নেই কারো।
নিশ্চিতভাবেই এখনো তৈরি হয়নি সাকিব,তামিম মুশফিকের যোগ্য উত্তরসূরীরা। তবে কিছু ক্রিকেটার দলে অবশ্যই রয়েছে। যারা ভবিষ্যতে হতে পারেন তাদের সার্থক প্রতিনিধি। ওপেনিং এ হয়তো তামিমের জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হবেন নাজমুল হোসেন শান্ত। মুশফিকুর রহিমের মতোই দায়িত্বশীল ক্রিকেট খেলার বৈশিষ্ট্যের দেখা মিলেছে তৌহিদ হৃদয়ের মধ্যে। সাকিবের বিকল্পতো আর সম্ভব নয় তবে সাকিবের অভাব কিছুটা হলেও হয়তো পূরণ করতে পারবে মেহেদী হাসান মিরাজ। তাই দুশ্চিন্তার আমানিশার সাথে আছে আশার আলোও। তবে এই ক্রিকেটারগুলো ছাড়া চিরচেনা বাংলাদেশ দলটি কিন্তু হয়ে পড়বে বড্ড অচেনা।
আপনার জন্য নির্বাচিত নিউজ
- আলোচিত সেই বাবা-মেয়েকে নিয়ে বেড়িয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য
- নিজ অফিসেই শেষ গুলি, এএসপি আত্মহত্যার পেছনে যে কষ্টের গল্প বললেন ভাই
- এএসপি পলাশের আত্মহত্যা একদিন পর বেড়িয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য
- হঠাৎ হামলা! পাকিস্তানের মিসাইলে কাঁপলো ভারতের ১৫ শহর
- দুই দিনের ছুটি বাতিল, সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে
- হাসনাত আব্দুল্লাহ মারা গেছেন; গুজবের আসল সত্য জানুন এখনই
- এক বিছানায় দুই স্ত্রী নিয়ে থাকলে ইসলাম কী বলে
- কাশ্মীরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ: পাকিস্তানের দাবি, ৫০ ভারতীয় সেনা নিহত
- আবদুল হামিদের দেশত্যাগ ঘিরে তোলপাড়, কী বলছে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ
- আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পথে! কী বলছে সরকার
- নিরাপত্তা শঙ্কায় দেশে ফেরা পিছিয়ে দিলেন খালেদা জিয়া
- সরকারি চাকরিজীবীদের মোবাইল ও ইন্টারনেট ভাতা চালুর উদ্যোগ
- হার্ট অ্যাটাক হওয়ার এক মাস আগে শরীর যে ৫টি সতর্ক সংকেত দেয়!
- আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ যা জানাল সিইসি
- সেনাপ্রধানের নামে ভুয়া দাবি: ব্যারিস্টার সুমনের মুক্তির আসল সত্য