কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, তিনি ছয় দিনে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন, এবং এই ধারণা বাইবেলেও রয়েছে। এবার আধুনিক বিজ্ঞানী, যেমন স্টিফেন হকিং এবং নীল ডিগ্রাস টাইসনের মতবাদেও এই কথার সাথে মিল পাওয়া যাচ্ছে। তাহলে কি বিজ্ঞানীরা আসলেই ছয় দিনের সৃষ্টির কথা বলছেন?

মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, "অবশ্যই তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেন, অতঃপর নিজ আরশে সমাসীন হন। দিনকে রাত দ্বারা আচ্ছাদিত করেন যেন তারা একে অন্যকে দ্রুত অনুসরণ করে, আর সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্র সবাই তাঁরই আজ্ঞাধীন; এগুলো তিনিই সৃষ্টি করেছেন।" (সূরা আরাফ, ৭:৫۴)

এখানে 'ছয় দিনে' শব্দটি আরবি ভাষায় "আইয়ামিন" থেকে এসেছে, যার মূল অর্থ 'দিন' হলেও এর আরও একটি অর্থ রয়েছে—সময়ের ধাপ বা সময়কাল। অর্থাৎ, কোরআনের এই আয়াতের ব্যাখ্যায়, 'দিন' শব্দের পরিবর্তে 'সময়ের ধাপ' বা 'সময়কাল' অর্থটি ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। এতে মহাবিশ্বের সৃষ্টি ছয়টি নির্দিষ্ট ধাপে, বা সময়কালে হয়ে থাকতে পারে। এ বিষয়ে অধিকাংশ আলেম ও ইসলামিক গবেষক একমত যে, কোরআনে আল্লাহ 'দিন' বললেও আসলে 'সময়কাল' বোঝাতে চেয়েছেন।

বিশ্বখ্যাত পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং তার The Brief History of Time বইতে মহাবিশ্বের সৃষ্টির পর থেকে তার বিবর্তনকে ছয়টি ধাপে ভাগ করেছেন। আরও একটি জনপ্রিয় পদার্থবিদ, নীল ডিগ্রাস টাইসনও মহাবিশ্বের বিবর্তনকে ছয়টি ধাপে ভাগ করেছেন। অবাক করা বিষয় হলো, এই ছয়টি ধাপের সাথে কোরআনের আয়াতের সমন্বয় পাওয়া যাচ্ছে।

গবেষকদের মতে, প্রথম ধাপটি বিগব্যাং ও কসমিক ইনফ্লেশন পর্যায়ে বিভক্ত, যেখানে প্রায় ১৩৮ বিলিয়ন বছর আগে অসীম ঘনত্ব ও ছোট একটি বিন্দু থেকে মহাবিশ্বের বিস্ফোরণ ঘটে। এটি কোরআনে এভাবে বর্ণিত আছে: "অবিশ্বাসীরা কি দেখে না যে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী একসাথে যুক্ত ছিল, অতঃপর আমি তাদের বিচ্ছিন্ন করে দিলাম?" (সূরা আনবিয়া, ২১:৩০)

এই আয়াতে আল্লাহ স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন যে, আকাশ ও পৃথিবী একসাথে একটি অন্ধকার বিন্দুতে যুক্ত ছিল এবং আল্লাহ সেটিকে আলাদা করে দিয়েছেন, যা আধুনিক বিজ্ঞানী 'বিগব্যাং' থিয়োরি হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।

অতঃপর, মহাবিশ্বের প্রসারণের বিষয়ে আল্লাহ কোরআনে বলেন, "আমি মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছি এবং আমি তা প্রসারিত করছি।" (সূরা ধারিয়াত, ৫১:৪৭) যা 'কসমিক ইনফ্লেশন' বা মহাবিশ্বের দ্রুত প্রসারণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

পৃথিবী ও জীবন সৃষ্টির বিষয়েও আল্লাহ কোরআনে বলেন, "আমি প্রতিটি জীবকে পানি থেকে সৃষ্টি করেছি, তবুও কি তারা বিশ্বাস করবে না?" (সূরা আল আম্বিয়া, ২১:৩০) যা বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীতে জীবনের সৃষ্টি এবং বিকাশের সাথে সম্পূর্ণ মিলে যায়।

গবেষকরা আরও জানান, পৃথিবীতে প্রথম পরমাণু গঠন হওয়ার পর, মহাবিশ্বের শীতলতা বেড়ে যায় এবং এটি বিভিন্ন নক্ষত্রের জন্মের পথ প্রশস্ত করে। কোরআনে আল্লাহ বলেন, "এবং আমি প্রথম আকাশকে প্রদীপ দ্বারা সুশোভিত করেছি।" (সূরা মুলক, ৬৭:৫) যেখানে আকাশের নক্ষত্রগুলির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এভাবে, কোরআনের আয়াতগুলো এবং আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাগুলি একে অপরের সাথে মিলে যাচ্ছে। এটি প্রমাণ করে যে, প্রায় ১৪০০ বছর আগে মহান আল্লাহ কোরআনে যে সৃষ্টির কথা বলেছেন, তা এখন বিজ্ঞানেও প্রমাণিত হচ্ছে।

তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, স্টিফেন হকিং এবং নীল ডিগ্রাস টাইসন উভয়েই সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করেন না। হকিং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিজেকে নাস্তিক দাবি করেছিলেন এবং বলেছিলেন, "মহাবিশ্ব চলতে সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন নেই।" অন্যদিকে, নীল ডিগ্রাস টাইসন নিজেকে সংশয়বাদী দাবি করেন, কারণ তিনি সৃষ্টিকর্তাকে কখনও দেখেননি, তাই তার বিষয়ে কোনো বিশ্বাস বা অবিশ্বাস প্রকাশ করেন না।

তবুও, আধুনিক বিজ্ঞান এবং কোরআনের মাঝে যে মিল রয়েছে, তা একেবারে স্পষ্ট।