বাংলাদেশ অধিনায়কের প্রতি মানুষের মনোভাব গতকাল অনুভূত হয়েছিল। বিশ্বকাপের ফাঁকে গতকাল স্বদেশে ফিরেছেন সাকিব আল হাসান। মিরপুরে ফিরে নাজাম আবেদিন তার ছোটবেলার কোচ ফাহিমের কাছে তিন ঘণ্টা প্রশিক্ষণ নেন।

ফিট নন সাকিব আল হাসান। ৪ টি বিশ্বকাপ খেলায় তিনি মাত্র ৫৬ রান করেছেন। তিনি তার স্তরে ফিরে আসার চেষ্টা করে গ্রামাঞ্চলে ফিরে আসেন। স্বীকৃতির জায়গাটা গেল কোচ ফাহিম সিদির।

দলের অধিনায়কের এমন নিষ্ঠার জন্য প্রশংসা করা উচিত। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষের প্রথম চিন্তা ছিল: "হয়তো কিছু শোরুম এখনও খোলা হয়নি!"

হাসি থামার সাথে সাথে মনে আরেকটি প্রশ্ন এলো: এত বড় কোচের বহর ভারতে কী করছে?

বাংলাদেশের কোচিং প্যানেল বেশ সমৃদ্ধ। বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড, স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ। মাঠের কোচ শেন ম্যাকডারমট। আছেন ইংল্যান্ডের নিক লি। কয়েকদিন আগে ব্যাটিং পরামর্শক হিসেবে দলের সঙ্গে ছিলেন সাবেক কোচ জেমি সিডন্স। এছাড়া ভিডিও বিশ্লেষক হিসেবে রয়েছেন শ্রীনিবাস চন্দ্রশেখর।

আর দলের ব্যাটিং সামলেছেন সহকারী কোচ নিক পথাস। প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শক্তি ব্যাটিং। তিনি মূলত অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাটিং কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। তাদের পাশাপাশি বিশ্বকাপের আগে পরামর্শক হিসেবে শ্রীধরন শ্রীরামকেও নিয়োগ দিয়েছে দলটি। কিন্তু সাকিব মনে করেননি তাদের কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য উপযুক্ত।

এরও একটা ব্যাখ্যা আছে। মনে হচ্ছে সাকিব আল হাসানকে তার বেসিক নিয়ে কাজ করতে হবে। সেক্ষেত্রে, আপনি যে ব্যক্তির সাথে ছোটবেলায় কাজ করেছেন তার কাছে ফিরে যাওয়া ভাল। তিনি ২০১৯ আইপিএলের মাঝপথে এই কাজটি করেছিলেন। আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি দলে জায়গা না পেয়ে তিনি তার শৈশব কোচ সালাহউদ্দিনের সাথে তার ব্যাটিং নিয়ে কাজ করেছিলেন। তিনি বিশ্বকাপের ফলাফল অর্জন করেন, সেবার দুটি সেঞ্চুরি এবং পাঁচটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৬০৬ রান করেন।

অন্যথায় সাকিবকে দেখতে হবে। যে কারণে বিশ্বকাপের মাঝপথে নজিরবিহীন দুর্ঘটনার শিকার হয়ে দেশে ফিরেছেন দলের অধিনায়ক, টানা দুই দিন কোচ ফাহিমের সঙ্গে ঘরের ভেতরে প্রশিক্ষণ।

প্রশ্ন উঠতে পারে নিক পোথাস, হাথুরুসিংহে বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে শ্রীরামের কাজ কী দলে?

সাকিব কেন মিরপুরে এসে ফাহিম স্যারের কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ করেন তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। কিছু ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শৈশবে যে গড়ে তোলে ভরসার জায়গা; ফলস্বরূপ, বেশিরভাগ ক্রিকেটারই কঠিন সময়ে এমন কারও কাছে ফিরে যান। শচীন টেন্ডুলকার নিজে গিয়েছিলেন, বিরাট কোহলিকেও তাঁর ছোটবেলার গুরুর পরামর্শ নিতে দেখা গেছে। আবার শৈশব প্রশিক্ষক শিক্ষার্থীর মনস্তাত্ত্বিক গঠন জানেন, তার চিন্তাভাবনা বোঝেন, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বোঝেন এবং জানেন কীভাবে শিক্ষার্থী সহজেই তার ভুল সংশোধন করতে পারে।

বেশিক্ষণ খেলায় থাকলে সমস্যা দেখা দেয়। অর্থাৎ সামান্য ভুল হলেও ম্যাচের উত্তেজনা ও পরিস্থিতিতে তা হারিয়ে যায়। এবং ধীরে ধীরে বেসিক থেকে বিন্দুতে যান যেখানে এটি আর একটি ছোট ভুল নয়।

কিন্তু এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে, সাকিবের ব্যাটিংয়ে যদি এত বড় ত্রুটি থাকে যার কারণে তাকে ফিরতে হয় প্রচারণায়, তাহলে দলের কোচিং স্টাফরা কীভাবে সেই ত্রুটিকে এত বড় হতে দিলেন? শাকিব যে সমস্যাটা আগে লক্ষ্য করেছিলেন, সেটা কি তাদের লক্ষ্য করা উচিত ছিল না? গত মার্চ থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত বাংলাদেশ। সেই সিরিজের আগে-পরে এতগুলো সিরিজ আর অনুশীলন, সাকিব যেভাবে ব্যাট করছেন তাতে 'কিন্তু' কিছু আছে বলে মনে হয়নি!

একজন ক্রিকেটার ফিট থাকা অবস্থায় হয়তো কিছু পরিবর্তন করতে চান না, কিন্তু পায়ের অবস্থান, ব্যাটের কোণ, মাথার অবস্থান, পায়ের ভারসাম্য - এই বিবরণগুলি দেখা এবং সেগুলি সংশোধন করা কোচের কাজ। . বাংলাদেশ দলের প্যানেলে কাউকে সেই চাকরি দেওয়া হচ্ছে না?

নাকি বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাধারণ মিথ সাকিবের ক্ষেত্রে এই সমস্যার কারণ: "সাকিবের অনুশীলনের দরকার নেই!" বেশি অনুশীলন না করেও বিপিএলে পারফর্ম করতে পারেন সাকিব। এমনকি গত এশিয়া কাপে টুর্নামেন্টের মাঝামাঝি দেশে এসে শোরুম খুলেছিলেন, ভারতের বিপক্ষে খেলেছিলেন প্রশিক্ষণ ছাড়াই জয়ের ইনিংস। সবার মনেই ঢুকে গেছে, বেসিক নিয়ে কাজ না করলেও, অনুশীলন না করলেও সাকিব এসে পারফর্ম করবেন!

হ্যাঁ, এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য প্রমাণিত হতে পারে। কিন্তু তিনি বিশ্বমঞ্চে আসতে ব্যর্থ হন, তাই বিশ্বকাপ চলতে থাকে, এ অবস্থায় অধিনায়ক দুই দিনের ছুটিতে দল ছেড়ে আলাদাভাবে প্রশিক্ষণ নিতে দেশে ফিরে আসেন।

সাকিব বরাবরই ব্যতিক্রম, কিন্তু ব্যতিক্রমী কিছু না দেখলেও বাংলাদেশ ক্রিকেট এগিয়ে যাচ্ছিল।