| ঢাকা, শনিবার, ৯ আগস্ট ২০২৫, ২৫ শ্রাবণ ১৪৩২

বিশ্বাস্য এক সেঞ্চুরি করে নিজের স্বপ্নের কথা জানালেন উসমান

খেলাধুলা ডেস্ক . বিনোদন৬৯.কম
২০২৩ জানুয়ারি ১০ ১৪:২৯:৩৩
বিশ্বাস্য এক সেঞ্চুরি করে নিজের স্বপ্নের কথা জানালেন উসমান

আজম সংবাদ সম্মেলনে শেষে ফিরে যাওয়ার সময় সেখানে এক মুহূর্ত দাঁড়ালেন। এরপর আলতো করে চড় মারলেন উসমানের গালে। উসমান চমকে উঠে তাকালেন। পর মুহূর্তেই তার মুখে ফুটে উঠল আকর্ণ বিস্তৃত হাসি। হেসে উঠলেন আজমও।

করাচিতে একই ক্লাবে অনেক দিন ধরে খেলছেন দুজন। তাদের সখ্য অনেক দিনের। মজা করেই অমন চাটি মারলেন আজম খান। তবে ২২ গজে হয়েছে উল্টো। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে ম্যাচের প্রথম ভাগের নায়ক ছিলেন আজম। কিন্তু পরের ভাগে তাকে ছাপিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে ম্যাচের নায়ক হয়ে গেছেন উসমান।

আজমের ৫৮ বলে ১০৯ রানের ইনিংসে মিরপুরে সোমবার খুলনা তোলে ৫ উইকেটে ১৭৮ রান। উসমানের ৫৮ বলে ১০৩ রানের ইনিংস চট্টগ্রাম জিতে যায় ৯ উইকেটে।

দুজন একই দেশের ক্রিকেটার কিংবা ক্লাব সতীর্থ, এই পরিচয় অবশ্য বদলে যাবে কিছু দিন পরই। পাকিস্তানি উসমান আর মাস ছয়েক পরই যোগ্যতা অর্জন করবেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের হয়ে খেলার!

আজম যেমন পাকিস্তান ক্রিকেটের পরিচিত নাম, উসমান তেমন নন। পাকিস্তানের সাবেক কিপার-ব্যাটসম্যান ও অধিনায়ক মঈন খানের ছেলে আজম জাতীয় দলে খেলে ফেলেছেন তিনটি টি-টোয়েন্টি। ২০ ওভারের ক্রিকেটে খেলেছেন ৯৩ ম্যাচ। ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যান্য সংস্করণেও নিয়মিত খেলছেন। কিন্তু উসমান করাচির ক্লাব ক্রিকেটের সীমানা পেরিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটের শীর্ষ পর্যায়ে খেলতেই ধুঁকছিলেন। ২০১৭ সালে দুটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলার পর আর সুযোগই মিলছিল না।

কিন্তু স্বপ্ন তার অনেক বড়। সেই স্বপ্নের পিছু তাড়া করতেই পাড়ি জমান সংযুক্ত আরব আমিরাতে। সেখানে গিয়ে নজর কাড়েন। অন্তত তিন বছর সেখানে থাকলে তাদের হয়ে খেলার জন্য বিবেচিত হবেন। উসমানের আড়াই বছর হয়েই গেছে। বিপিএলে সেঞ্চুরি করে ম্যাচ সেরা হওয়ার পর দেশ বদলের পেছনের গল্প শোনাচ্ছিলেন উসমান।

“পাকিস্তানে ক্রিকেট খেলছিলাম। কিন্তু আমার বিশ্বাস ছিল, আরও বড় জায়গায় খেলতে পারি। আমার ক্লাবের হয়ে খেলছিলাম করাচিতে। তারা আমাকে অনেক সুযোগও দিয়েছে। কিন্তু আমার বড় জায়গায় খেলার ইচ্ছে ছিল। ঠিক করলাম, এক জায়গায় যদি থমকে থাকি, তাহলে কাজ হবে না। অন্য জায়গায় গেলে যদি বড় সুযোগ মেলে, তাহলে সেই চেষ্টা করা উচিত।”

আরব আমিরাতে পাড়ি জমানোর পরই অবশ্য পাকিস্তানে ক্যারিয়ারের বড় সুযোগটি মেরে তার। গত পাকিস্তান সুপার লিগে কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্স দলে ঠাঁই হয় তার। টুর্নামেন্টের মাঝামাঝি গিয়ে মাঠে নামার সুযোগ পান নিজ শহর করাচিতে। জাতীয় স্টেডিয়ামে সেই ম্যাচে মুলতান সুলতানদের বিপক্ষে অভিষেকেই শাহনওয়াজ দাহানি, সোহেল খান, ইমরান তাহির, ইমরান খানদের মতো বোলারদের সামনে তিনি খেলেন ৫০ বলে ৮১ রানের ইনিংস!

কোয়েটার হয়ে পরের ৫ ম্যাচে সেবার আর বেশি ভালো করতে পারেননি। তবে সামর্থ্যের ঝলক দেখাতে পারেন। গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে আবু ধাবি টি-টেন ক্রিকেটেও ঝড়ো কয়েকটি ইনিংস খেলেন। পিএষ অভিষেকে যে দলকে ভুগিয়েছিলেন তিনি, সেই মুলতানের হয়ে আগামী পিএসএলে খেলবেন ২৭ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।

“বছর দুয়েক হয়েছে, বেশির ভাগ সময় আমি আরব আমিরাতেই থাকি। ওদের হয়ে খেলার চেষ্টা করছি। সম্প্রতি আবু ধাবি টি-টেন লিগে জ্যাকব ওরাম ছিলেন, তিনি আমাকে অনেক বুঝিয়েছেন। এছাড়া করাচিতে আমাদের কোচরা ছিলেন। তারা সবসময় বলতেন, ব্যাটসম্যানদের সব জায়গায় খেলতে পারা উচিত, ওপেনিং থেকে নিচে পর্যন্ত। আবু ধাবি টি-টেনে দেখে মুলতান সুলতানস আমাকে নিয়েছে।”

বিভিন্ন পজিশনে খেলার ব্যাপারটি দেখা গেছে এবার বিপিএলেও। প্রথম ম্যাচে তিনি খেলেছিলেন ছয় নম্বরে। পরের ম্যাচেই ওপেনিংয়ে। উসমান বললেন, দলের জন্য যে কোনো জায়গায় খেলতে তার আপত্তি নেই।

“কোচ শুরুতে আমাকে বলেছিলেন ছয়ে খেলতে। আমি বলেছিলাম, ‘দলের যেখানে প্রয়োজন, ওপেনিং থেকে ৯ নম্বর পর্যন্ত আমি খেলতে পারি।’ আমার বিশ্বাস ছিল, যেখানেই নামি না কেন, একটু সময় কাটাতে পারলে, জুটি গড়তে পারলে, ভালো করব।”

“সবশেষ ম্যাচে ভালো করিনি। পরে লম্বা সময় অনুশীলন করি। কোচ দেখে বলেছেন, ‘তুমি ভালো খেলছো। তোমাকে ওপেনিংয়ে সুযোগ দেব।’ আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে সুযোগটি পেয়ে কাজে লাগিয়েছি এবং দল জিতেছে। দলের জন্য ভালো হয়েছে।”

প্রথম ম্যাচে স্টাম্পের বাইরের বল জোর করে টেনে পুল করার চেষ্টায় আউট হয়েছিলেন ৪ বলে ২ রান করে। ওই ম্যাচের পর ক্রিকেটার বড় ভাই নাদিম খানের সঙ্গে ফোনে কথা হয় তার। আরব আমিরাতে খেলার অভিজ্ঞতাও কাজ লাগান। সব মিলিয়েই সেঞ্চুরি করে ফেলেন পরের ম্যাচে।

“ঢাকার উইকেট কিছুটা গ্রিপ করে। আমার বড় ভাই নাদিম ভাই করাচিতে ক্রিকেট খেলেন। উনি আমাকে ফোনে বোঝাচ্ছিলেন যে বল গ্রিপ করলে শুরুতে যেন মিড উইকেটের দিকে না খেলি। বোলারকে নিজের রেঞ্জে নিয়ে তার পর যেন শট খেলি। আমি আরব আমিরাতে যেখানে খেলি, এরকম কন্ডিশনই থাকে। সেখানেও শিশির পড়ার পর বল সুন্দর ব্যাটে আসে।”

“প্রথম তিন ওভার আমি সামনের পায়ে খেলিইনি। সময় নিয়েছি। তার পর দেখেছি, বল ব্যাটে আসছে। আমি ঠিক করেছিলাম, শুরুতে সোজা ব্যাটে খেললে ব্যাটে লাগবে। এরপর উইকেট আস্তে আস্তে ভালো হয়ে ওঠে।”

চট্টগ্রামের প্রথম ম্যাচটি ছিল সেই দিনের প্রথম ম্যাচও। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা আর স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া মিলিয়ে শের-ই-বাংলার উইকেট সেদিন ছিল দুরূহ। সোমবারের ম্যাচটি ছিল রাতের ম্যাচ। উইকেট তখন অনেকটাই সহজ। ম্যাচের প্রথম ভাগে আজম খানের ব্যাটিং দেখেও নিজের করণীয় বুঝে নেন উসমান।

“ফিল্ডিংয়ের সময় আমি আজমের ব্যাটিংই দেখছিলাম। সে আর আমি করাচিতে ক্লাব ক্রিকেটে একসঙ্গে খেলেছি অনেক দিন। ওর ব্যাটিংয়ের সময় দেখলাম যে বল খুব ভালোভাবে ব্যাটে আসছে। আমি ভাবলাম, ‘ও যেভাবে লম্বা করছে ইনিংস, আমিও করতে পারব।’ তখন অবশ্য ভাবিনি যে লক্ষ্য ১৮০ রানের মতো হবে, ভেবেছিলাম ১৫০-১৬০ হবে। আজম দারুণ খেলে রান বাড়িয়ে দেয়।”

“আমি পরে ব্যাটিংয়ে নেমে ম্যাক্সির সঙ্গে (মাক্স ও’ডাউড) এটাই আলোচনা করেছিলাম যে জুটি যতটা লম্বা করা যায়, তত ভালো। সেভাবেই আমরা খেলেছি। পরে বল এত সুন্দর করে ব্যাটে লাগছিল, শিশিরের কারণে বল ব্যাটে আসছিল, আমার বিশ্বাস ছিল, একটি বড় ওভার পেলেই আমাদের কাজ সহজ হয়ে যাবে।”

কাজ হয়েও গেছে। উদ্বোধনী জুটিতে তিনি আর ও’ডাউড মিলে ১৪১ রানের জুটি গড়েই ম্যাচ শেষ করে দেন একরকম।

এই টুর্নামেন্টের আগে বাংলাদেশের ক্রিকেটেও তাকে খুব একটা চিনত না কেউ। চেনার খুব কারণও ছিল না। ২০১৭ সালের সেই দুটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ আর গত পিএসএলের ৬ ম্যাচই ছিল স্বীকৃত ক্রিকেটে তার অভিজ্ঞতা। চট্টগ্রাম তাকে দলে নেওয়ার পর সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনা, হাসাহাসিও হয় প্রচুর। তবে সেসব গায়ে মাখা তো বহুদূর, উসমান তাকিয়েও দেখেননি। তার জীবন দর্শনটাই যে খুব সাধারণ!

“আমার কোনো ইনস্টাগ্রাম আইডি নেই, কোনো ফেইসবুক নেই, টুইটার নেই। আমি সাধারণ একজন। আমার কাজ মাঠে গিয়ে খেলা। আমার নামে যত আইডি আছে, সব ফেইক। আমি জানিও না। আমি স্রেফ দলের গ্রুপে থাকি। কারও সঙ্গে অত কথাও বলি না। কেউ কিছু বললে (সমালোচনা) আমিও মাথা নিচু করে চলে যাই। নিজের কাজ করি।”

আপনার জন্য নির্বাচিত নিউজ

ক্রিকেট

টাইগার কোচদের বেতন: কে কত টাকা পান

টাইগার কোচদের বেতন: কে কত টাকা পান

নিজস্ব প্রতিবেদন: বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের কোচিং স্টাফদের বেতন নিয়ে সম্প্রতি একটি তথ্য সামনে এসেছে। ...

বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস সিরিজ: সময় ও ভেন্যু

বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস সিরিজ: সময় ও ভেন্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি মাসে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হওয়ার কথা থাকলেও, তা পিছিয়ে ...

ফুটবল

বাংলাদেশ বনাম দক্ষিণ কোরিয়া: লাইভ দেখবেন যেভাবে

বাংলাদেশ বনাম দক্ষিণ কোরিয়া: লাইভ দেখবেন যেভাবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামীকাল, রোববার (১০ আগস্ট), অনূর্ধ্ব-২০ নারী এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে গ্রুপ 'এইচ'-এর গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ...

বাংলাদেশ-তিমুর লেস্তে ম্যাচ: মোবাইলে লাইভ দেখবেন যেভাবে

বাংলাদেশ-তিমুর লেস্তে ম্যাচ: মোবাইলে লাইভ দেখবেন যেভাবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ শুক্রবার (৮ আগস্ট ২০২৫), এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ নারী এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ...