
আয়শা সিদ্দিকা
সিনিয়র রিপোর্টার
শিনজিয়াং-এ উইঘুর মুসলিম নির্যাতন: 'মস্তিষ্ক ধোলাই' শিবিরের ভয়াবহতা

নিজস্ব প্রতিবেদক: চীনের শিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের উপর ভয়াবহ নির্যাতন এবং তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস জোরপূর্বক মুছে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই 'পুনঃশিক্ষা শিবির'গুলোকে গণ মানবাধিকার লঙ্ঘনের কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করেছে, যেখানে ইসলাম পালন করাকে 'অপরাধ' হিসেবে গণ্য করা হয়। এই শিবিরগুলোতে বন্দীদের উপর শারীরিক ও মানসিক নিপীড়নের পাশাপাশি নারীদের জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ এবং গণধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।
'পুনঃশিক্ষা শিবির' নামে নির্মম নির্যাতন কেন্দ্র
প্রথম দেখায় এসব শিবিরকে সাংস্কৃতিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মনে হলেও, বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ভিডিওতে তরুণ-তরুণীদের নাচ-গান শিখতে দেখা গেলেও, তাদের জোরপূর্বক এসব কাজে বাধ্য করা হয়। এই শিবিরগুলো মূলত শিনজিয়াং প্রদেশের কারাগার, যেখানে উইঘুর মুসলিমদের আটকে রাখা হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, এদের একমাত্র 'অপরাধ' হলো ইসলাম পালন করা, নামাজ পড়া এবং কোরআন চর্চা করা।
চীন সরকার এই শিবিরগুলোকে 'ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার' বললেও, প্রকৃতপক্ষে এগুলো একটি আদর্শিক নির্যাতন কেন্দ্র। এখানকার মূল উদ্দেশ্য হলো ইসলামকে 'শত্রু' হিসেবে চিহ্নিত করা এবং মুসলিমদেরকে ধর্মত্যাগে বাধ্য করা। বন্দীদের চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আদর্শ, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর বক্তব্য ও স্লোগান মুখস্থ করতে বাধ্য করা হয়। প্রতিদিন বন্দীদেরকে নিজেদের 'ভুল চিন্তাধারার মানুষ' হিসেবে ঘোষণা করতে এবং 'আমি ইসলাম মানতাম, কিন্তু এখন ভুল বুঝেছি'—এমন স্বীকারোক্তি লিখতে বাধ্য করা হয়।
ভয়াবহ নিপীড়নের চিত্র
যারা ধর্ম ছাড়তে রাজি হন না, তাদের উপর চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। এর মধ্যে রয়েছে বৈদ্যুতিক শক, ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে রাখা এবং খাবার না দেওয়া। নারী বন্দীদের অনেকে গণধর্ষণের শিকার হন এবং অনেকে নিখোঁজ হয়ে যান বলে অভিযোগ রয়েছে।
মিহিরিগুল তুরসুন নামের একজন নারী এই ক্যাম্পে তিনবার বন্দী হয়েছিলেন। তিনি জানান, একটি ছোট কক্ষে ৬০ জন নারীকে গাদাগাদি করে রাখা হতো, যেখানে নামাজ পড়া তো দূরের কথা, ঘুমানোরও সুযোগ ছিল না। তাকে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়েছিল এবং দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য করা হয়েছিল। একবার তিনি তার তিন সন্তানকে নিয়ে বন্দী হন, যার মধ্যে একজন ওই ক্যাম্পেই মারা যায়। মিহিরিগুলকে পরবর্তীতে জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ করা হয়।
দূরসুনায় জিয়াউদুন নামের আরেক নারী দুবার আটক হয়েছিলেন এবং দ্বিতীয়বার আট মাসের বেশি সময় তাকে আটকে রাখা হয়। নিয়মিত মারধরের পাশাপাশি পেটে লাথি মারা এবং জোর করে বন্ধ্যাকরণের শিকার হন তিনি। সাইরাগো সাউটবে নামের একজন কাজাখ নারী শিক্ষককে বন্দীদের চীনা ভাষা শেখাতে বাধ্য করা হয়েছিল। তিনি জানান, শত শত বন্দীর সামনে একজন নারী বন্দীকে গণধর্ষণের ভয়ানক দৃশ্য দেখতে তাকে বাধ্য করা হয়েছিল, যা এখনো তাকে আতঙ্কিত করে তোলে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও চীনের অস্বীকার
জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-এর মতো মানবাধিকার সংগঠনগুলো চীনের এই ক্যাম্পগুলোকে গণ মানবাধিকার লঙ্ঘনের কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এই ঘটনাগুলোকে 'গণহত্যা' বা 'জেনোসাইড' হিসেবে ঘোষণা করেছে। তবুও চীন সরকার এগুলোকে 'চরমপন্থার বিরুদ্ধে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র' বলে দাবি করে।
বিশ্ব যখন মানবাধিকার, বিশ্বাস ও সংস্কৃতির অধিকারের কথা বলছে, তখন চীনের শিনজিয়াং-এ মুসলমানরা শুধু ইসলাম মানার অপরাধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এখানে নামাজ পড়াকে 'অপরাধ', রোজা রাখাকে 'শাস্তি' এবং কোরআনের আয়াত মুখস্থ করাকে 'চরমপন্থা' হিসেবে গণ্য করা হয়।
আয়শা/
আপনার জন্য নির্বাচিত নিউজ
- সরানো হচ্ছে কয়েক জন উপদেষ্টা; শেষ সময়ে কারা থাকছেন
- আবারও টানা তিন দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তারা
- কথা রাখলেন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টানা ১২ দিনের ছুটি
- বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা: কোন দল জিতবে জানালো জ্যোতিষী টিয়া
- শনিবার সিলেটের যেসব এলাকায় ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না
- দেশের বাজারে আজ ১৮, ২১, ২২ ক্যারেট সোনার দাম
- আজ ১ ভরি ১৮, ২১, ২২ ক্যারেট সোনার দাম
- একদিন ম্যানেজ করলেই মিলবে টানা ৪ দিনের ছুটি
- দেশের বাজারে আজ এক ভরি স্বর্ণের দাম
- আজানের সময় কুকুর ঘেউ ঘেউ করে কেন
- আজ এক ভরি ১৮, ২১, ২২ ক্যারেট সোনার দাম
- আসছে নতুন পে-স্কেল: বাড়বে সরকারি কর্মীদের বেতন
- এক লাফে বাড়ল সৌদি রিয়ালের বিনিময় হার
- Vivo X300 Pro: কি কি থাকছে দাম কত